You dont have javascript enabled! Please enable it!

যশাের রণাঙ্গন
ঝিকরগাছার কাছে প্রচন্ড লড়াই
(স্টাফ রিপাের্টার)

বেনাপােল, ১০ এপ্রিল যশাের জেলায় আজ আবার ইয়াহিয়া বাহিনীর সঙ্গে ‘বাঙলাদশে’ এর মুক্তি যােদ্ধাদের তীব্র সংগ্রাম চলেছে যশাের মহকুমার বিশিষ্ট শহর ঝিকরগাছা এই সংগ্রামের কেন্দ্রস্থল। ঝিকরগাছা সেতুর এপার-ওপার এখন উভয় পক্ষের মধ্যে এখনও প্রচন্ড লড়াই হচ্ছে।
গতকাল সকাল এগারােটা নাগাদ পাক হানাদারেরা ঝিকরগাছা আক্রমণ করে। তারপর থেকেই যুদ্ধ চলতে থাকে পুরােদমে। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিও বারাকপুর, লাউজুনি, মােবারকপুর, কৃষ্ণগঞ্জ- এই রণক্ষেত্রের আওতায় এসে পড়ে। ঝিকরগাছা শহরতলীর উত্তর পশ্চিম কোণে অবস্থিত কৃষগঞ্জ গ্রামটিকে ইয়াহিয়ার সৈন্যরা পােড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে প্রায় সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়েছে।
প্রবল প্রতিকুলতার মধ্যেও মুক্তিযােদ্ধারা ইয়াহিয়া বাহিনীকে অসমসাহসে প্রতিরােধ করেছেন। আজ ভাের রাত থেকে ঝিকরগাছায় প্রলয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ব্যবহৃত গােলা বিস্ফোরণের শব্দে হরিদাসপুর সীমান্ত অঞ্চলে মাটিও কেঁপে উঠেছিল। তাতে জনসাধারণের মধ্যে এই ভ্রান্ত ধারণা জন্মায় যে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ইয়াহিয়া বাহিনী বিমান থেকে বােমাবর্ষণ শুরু করেছে। এবং এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বহুবিদ গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তার দরুন বাঙলাদেশের সীমানার অন্তর্ভুক্ত একাধিক গ্রাম, বিশেষতঃ নাভারণ ও সারসা, থেকে অধিবাসীদের বাক্সপ্যাটরাসহ দলে দলে এপারে চলে আসতে দেখা যায়।
সীমান্ত ডিঙিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে ‘বাঙলাদেশে’এর প্রথম গ্রাম শাদীপুর পদাপর্ণ করলাম। প্রায় হাজার খানের ঘর, বেশ বড় গ্রাম। কয়েকজন যুবককে দেখলাম। জানতে চাইলাম ব্যাপার কি? জানালেন “কি সব শুনত্যাছি। মেয়েদের ওপারে পাঠাইয়া দিয়া বেটাছেলেরা ঘরেই থাকব ভিটে ছাড়ব না।” বেশ কয়েকজন প্রৌঢ় ব্যক্তিকে বলতে শুনলাম “যত সব বাজে কথা। বেনাপােলে নাকি বােম্বিং হইছে!”
আছে, কিন্তু অস্ত্র নেই।” গতকাল এবং আজকের লড়াইয়ে দুজন মুক্তিযােদ্ধা নিহত হয়েছেন। আর আমরা গতকাল নারায়ণ খালিতে ওদের জনাপাঁচেককে খতম করেছি।”
আজ দুপুর থেকে গােলাগুলি বিনিময় খানিকটা ক্ষান্ত। তবে রাত্রি নামলে আবর তীব্র সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের জন্য নায়কটি প্রস্তুত হচ্ছিলেন। বললেন, “২৫ থেকে ৩০ মার্চ (৩০ মার্চ যশােরে ই,পি,আর বিদ্রোহ ঘােষণা করে) যশাের যে গণহত্যা দেখেছি এমন তার ব্যাপকতা কিছুটা কমেছে। কারণ দিকেদিকে প্রতিরােধ গড়ে উঠেছে।

সূত্র: কালান্তর, ১১.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!