রাজশাহী ও শ্রীহট্টে অবিরাম বিমান হামলা পাক-ফৌজের
বিচ্ছিন্ন ইউনিটগুলির অবরােধ মুক্তির জন্য মরিয়া প্রয়াস
বাঙলাদেশে ছড়িয়ে থাকা পাকফৌজ এর ওপর মুক্তিফৌজের ক্রমাগত প্রবল চাপ লাঘবের উদ্দেশ্য সামরিক কর্তৃপক্ষ বেশি করে বিমানবাহিনীর ওপর নির্ভর করেছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহীতে ১৫ বার এবং শ্রীগট্টে বার কয়েক পাকবিমানগুলি জনবহুল এলাকায় হামলা করেছে।
পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ বর্ষণ নামার আগেই মুক্তিফৌজের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। সীমান্তে এপারে যেসব সংবাদ আসছে পর্যবেক্ষকরা তার ভিত্তিতে ঐ অনুমান করছেন।
মুক্তিফৌজ কিন্তু অকুতােভয়ে বিচ্ছিন্ন অবরুদ্ধ পাক ফৌজের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন। কেবল তাই নয় লালমনিরহাট, শামসেরনগর, শালুটিকার বিশ্রাম ঘাটিতে যেখানে পরাজিত পাক সৈন্যরা আশ্রয় নিয়েছে তার ওপর নতুন বিক্রমে আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণে তাদের নতুন সঙ্গী লাভ হয়েছে পাক ফৌজ মুক্ত অঞ্চল থেকে মুক্তি ফৌজরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পাওয়া এক অসমর্থিত সংবাদ হলাে, ঐ তিনটি বিমান ঘাটিই মুক্তিফৌজ দখল করেছে কিন্তু এ পর্যন্ত ঐ সংবাদের কোন সমর্থন পাওয়া যায় নি।
ইউএনআই জানিয়েছে, ঢাকা থেকে ময়মনসিংগামী পাক উত্তর বাঙলাদেশের লালমনির হাট বিমানবন্দর এখন মুক্তিফৌজ ঘিরে রেখেছে।
বিমান বন্দরের দায়িত্ব যে মুক্তি ফৌজের হাতে আছে তারা যে কোন মুহূর্তে আত্মসমর্পণ করতে পারে বলে ইউ,এন,আই জানিয়েছে। কারণ মুক্তিফৌজ এদের সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে আর ক্রমাগত প্রবল চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।
জানা গেছে, পাক ফৌজ ময়নামতি সেনানিবাসে তাদের অবস্থান সুরক্ষিত করার চেষ্টায় আছে। তবে মুক্তিফৌজ সমগ্র অঞ্চলের ওপর তাদের অবরােধ এতটুকু ঢিল দেয় নি।
কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড আক্রমণ করছে শালুটিকার এবং শামসের নগর বিমানঘাঁটিতে অবরুদ্ধ পাকাফৌজের উপর। এই দুটি বিমানঘাঁটিই শ্রীহট্ট জেলায়।
এদিকে মুখ না থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত নদীপথটি পাকফৌজ তাদের নৌকাবাহিনী কামানগুলি নিয়ে পাহারা দিচ্ছে।
রেলশহর সৈয়দপুরকে ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে পাকফৌজ পাল্টা আঘাত হানছে। এই শহরটি মুক্তিফৌজ একদিন পূর্বে মুক্ত করেছিল।
শ্রীহট্ট শহরে জিন্দাবাজার ন্যাশনাল ব্যাংকটি পাকফৌজ ব্যাংকের প্রহরীকে নিহত করে লুট করেছে।
পাকফৌজের ইউনিটগুলি তাদের অবরুদ্ধ বিবর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সর্বত্র মরীয়া প্রয়াস করছে। আগরতলা সীমান্তে খবর এসেছে যে, ঢাকার পশ্চিম থেকে ৫৬ কিলােমিটার দূরে মানিকগঞ্জের দিকে পাকফৌজের বাহিনীর পর বাহিনী এগিয়ে চলেছে। যমুনা যেখানে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে মানিকগঞ্জ সেখান থেকে ২৪ কিলােমিটার দূরে পূর্ব রণাঙ্গনে বিরাট সৈন্য চলাচলের সংবাদ পাওয়া গেছে।
মুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ অফিসারদের মতে কুমিল্লা থেকে পাকফৌজ জাঙ্গালিয়া রাস্তা ধরে পদ্মার মুখে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত চাঁদপুরের পথে এগিয়ে চলছে।
ঐ পুলিশ অফিসারদের মতে এই সৈন্য চলাচলের উদ্দেশ্যে হলাে, কুমিল্লা যাওয়ার নদীপথটি উন্মুক্ত করার জন্য ওরা একটা মরীয়া প্রয়াস করবে তারই সূচনা। এ সত্ত্বেও ময়নামতি ও কুমিল্লা সেনানিবাস এবং কুমিল্লার কাছে ধুলুপাড়া বিমান ঘাঁটির উপর মুক্তি ফৌজের প্রবল চাপ আছে।
মেঘালয়ের সীমান্ত অঞ্চল ডাউকী থেকে ইউএনআই জানাচ্ছেন, খাদিমনগর থেকে বিতাড়িত পাকফৌজ যারা পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে তারা পার্শ্ববতী গ্রামগুলিতে মাঝে মাঝে হামলা করছে এবং ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছ থেকে খাদ্য ও মূল্যবান সামগ্রী ও ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এই সৈন্যরা জনৈক গ্রামবাসীর মতে খাদিমনগর জনৈক গ্রামবাসীর মতে খাদিমনগর রাক্কোরেটোলা মিলিসাররা পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে এবং এরা এখনও শালুকটিকার বিমান ঘাঁটি দখলে রেখেছে।
সূত্র: কালান্তর, ১০.৪.১৯৭১