You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকসেনাদের বেপরােয়া বােমা বর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযােগ
ঝিকরগাছা থেকে পাকফৌজের ক্যান্টমেন্টে প্রত্যাবর্তন

ক্যান্টনমেন্ট থকে যে ইয়াহিয়া ফৌজ বেরিয়ে ঝিকরগাছা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছিল, তারা সােমবার সকালে আবার ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গিয়েছে। ইউ-এন-আই এই সংবাদ জানিয়ে বলেছে, ঝিকরগাছায় লুঠ করা খাদ্য সম্ভার ফুরিয়ে যাবার ফলেই ইয়াহিয়া ফৌজ ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমাদের স্টাফ রিপাের্টার জানাচ্ছেন, ইয়াহিয়া ফৌজের ঝিকরগাছা পর্যন্ত বেপরােয়া লুঠ তরাজ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসার পিছনে একটি “সীমাবদ্ধ উদ্দেশ্য ছিল বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। তাদের সম্ভবত, উদ্দেশ্য ছিল ঐ এলাকার লােকদের সন্ত্রস্ত করে তাড়িয়ে দেওয়া যাতে কাছাকাছি এলাকা থেকে মুক্তি যােদ্ধারা হঠাৎ গেরিলা কায়দায় আক্রমণ চালাতে না পারে।
ইয়াহিয়া ফৌজের মূল অভিযান হবে সম্ভবত খুলনার দিকে। সুতরাং দু-এক দিনের মধ্যে ইয়াহিয়া ফৌজ সাতক্ষীরা এলাকায় আক্রমণাত্মক হানা দিতে পারে।
আরাে মনে করা হচ্ছে যে, ইয়াহিয়া ফৌজ যশাের রণক্ষেত্রে চেষ্টা করে যে এগিয়ে এসে সীমান্ত পুরােপুরি রুদ্ধ করে দিতে পারে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য সন্ধানী হান চালিয়ে এখন আবার ফিরে গিয়েছে। ঝিকরগাছায় ইয়াহিয়া ফৌজ এক কোম্পানির মত সৈন্য রেখে বাকীরা ক্যান্টনমেনেট ফিরে গিয়েছে।
ইতিমধ্যে, বর্ষা আসার আগেই যাতে হৃত কতকগুলি মুক্ত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করা যায়, সেজন্য পাকিস্তানী জেট কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন শহরে হানা দিয়ে মেশিনগান থেকে গুলি চালিয়েছে। পাবনা থেকে ইয়াহিয়া একটি বাহিনী পদ্মাপার হয়ে কুষ্টিয়া শহরের দিকে এগিয়ে চলেছে। আর, গত সপ্তাহাদিককাল ধরে যে মুক্তি সংগ্রামীরা এই শহরটি মুক্ত করে রেখেছেন তারাও সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরােধের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে ইউএনআই জানাচ্ছে।
শ্রীহট্ট শহরটিতে সােমবারও পাকবিমান কয়েকবার হানা দিয়ে বােমাবর্ষণ করেছে, কিন্তু সেখান থেকে মুক্তিযযাদ্ধাদের হঠাতে পারে নি। ইয়াহিয়া ফৌজ শালুটিকার বিমান অবতরণ ক্ষেত্রের মধ্যেই এখনাে পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে।
এছাড়া, পাকবিমান ফেনী শহরেও বােমাবর্ষণ করে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস ও অসামরিক লােকদের হত্যা করেছে। দিনাজপুর শহরের আশেপাশেও তারা প্রবল গােলাবর্ষণ করেছে, কিন্তু মুক্তি সংগ্রামীরা সেখানে উপর আতঙ্কিত আক্রমণ চালিয়ে দু ট্রাক ভর্তি অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
বাঙলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলে দখল কায়েম করার জন্য ইয়াহিয়া ফৌজ যশােরের রাস্তা দিয়ে বেনাপােলের দিকে অগ্রসর হয়ে ভারত সীমান্ত থেকে ৬ কিলােমিটার দূরবর্তী বাগাচারার কাছে দক্ষিণ দিকে খুলনার সাতক্ষীরা অভিমুখী পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা থেকে খুলনার চালনা বন্দর ৪৫ কিলােমিটার দূরে। মুক্তিফৌজকে আশু সেই কম্যান্ড সৃষ্টি করে সুপরিকল্পিতভাবে ইয়াহিয়া ফৌজের মােকাবিলা করতে হবে।
এই ধরনের লড়াইয়ে গেরিলা কায়দার উপরেই মুক্তিবাহিনীকে জোর দিতে হবে সম্ভবত এটা ইয়াহিয়ার
ফৌজিও উপলব্ধি করছে। সেইজন্যই তারা বেপরােয়া হত্যা ও অগ্নি সংযােগ করে বাঙলাদেশের মানুষের মনােবল ভাঙবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন গত ৯ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জে ইয়াহিয়া বাহিনীর সৈন্যরা জামায়েত ইসলামের দুইজন বাঙালী সদস্যের সহায়তায় আক্রমণ চালিয়ে অসামরিক নর-নারীদের হত্যা করেছে বলে এখানে সংবাদ পাওয়া গেছে।
বেনাপােল রােডের দুধারের সমস্ত গ্রামগুলি পাকফৌজ ধ্বংস, হত্যা আর লুট করতে করতে যাচ্ছে বলে জানা গেল। এই পথে মুক্তিসংগ্রামীরা এই সংবাদ লেখবার সময় পর্যন্ত কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের স্টাফ রিপাের্টার আরাে জানাচ্ছেন যে, সমরকুশলী মহর মনে করছেন, বিপুল মারণাস্ত্র সজ্জিত ইয়াহিয়া ফৌজের সঙ্গে সামনাসামনি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার রণনীতি সম্ভবত ঠিক হচ্ছে না। এর ফলে মুক্তিফৌজকে অত্যাধিক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। সুতরাং পাকবাহিনীকে অতর্কিত আক্রমণের মধ্য দিয়ে ব্ৰিত ও বিপর্যস্ত করা উচিত হবে। পাকবাহিনীর যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন যােগাযােগ ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে কিন্তু মুক্তিফৌজের পারস্পরিক সংযােগ রক্ষায় অসুবিধা হচ্ছে এবং কোনও একটি ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীয় কমান্ড সৃষ্টি করা যায় নি। ইউএনআই আরাে জানাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম শহরের আশেপাশে মুক্তিফৌজ তৎপর হয়ে উঠেছে এবং ঢাকা অভিযান এর অঙ্গ হিসাবে নরসিংদিতে ইয়াহিয়া ফৌজের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলছে। সেখানে ৫০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরাে ৫০ জন মুক্তিফৌজের হাতে ধরা পড়েছে বলে জানা গেল। সংবাদে প্রকাশ যুদ্ধ চলাকালে কিছু ইয়াহিয়া সেনা আত্মসমর্পণ করে।
পাকফৌজ পাবনা থেকে মুক্তিফৌজকে হঠাবার জন্য তীব্র আক্রমণ চালিয়েছে এবং সেখানে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। রবিবার মুক্তিফৌজ এই শহরের কাছে পাকফৌজের এক সাজোয়া বাহিনীর…

সূত্র: কালান্তর, ১৩.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!