প্রায় জনশূন্য শ্রীহট্ট শহরে পাক-ফৌজ
শাপুরা মুক্তিফৌজের দখলে : কুমিল্লা, রংপুর, সৈয়দপুর ও যশােরে প্রচণ্ড লড়াই
নতুন সৈন্য এবং রসদ সম্ভারে বলীয়ান পাক-ফৌজ শনিবার শ্রীহট্টের সংগ্রামে বেশ কিছুটা মারমুখী রূপ ধারণ করে, ইউ-এন-আই’র সংবাদদাতা শিলং থেকে জানিয়েছেন পাক-ফৌজ জনশূন্য শ্রীহট্ট শহরে প্রবেশ করেছে।
ওদিকে রাজশাহী রণাঙ্গনে পাক-ফৌজ ঐ শহরের উত্তরে ৫ কিলােমিটার দূরে শাপুরা শহরটি মুক্ত করে একে উল্লেখযােগ্য জয়লাভ করে।
যশাের রণাঙ্গনে শনিবারের উল্লেখযােগ্য সংবাদ হলাে স্থানীয় জনসাধারণ একটি পাক বিমানের অবতরণের প্রয়াস ব্যর্থ করে দেয়। ঝিনাইদহ থেকে মুক্তিফৌজ এখন এগিয়ে চলেছে।
ময়মনসিংহ এখন মুক্তিফৌজের দখলে। কুমিল্লার লড়াই এ মুক্তিফৌজ এখনও পাক-ফৌজকে দমন করে রেখেছে।
শ্রীহট্টের সীমান্ত থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায় শুক্রবার শালুটিকার বিমানঘাঁটিতে অবরুদ্ধ পাক-ফৌজ বিমান মারফত নতুন অস্ত্র এবং রসদ পায়। শনিবার এই ফৌজ তাদের অবরুদ্ধ ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসে এবং বেপরােয়া গুলি ছুড়তে থাকে। এই সৈন্যদল কোন প্রতিরােধের সম্মুখীন হয়নি বলে শােনা যাচ্ছে।
প্রাপ্ত রিপাের্টে জানা গেছে পাক-ফৌজ মুক্তি যােদ্ধাদের অবরােধ মুক্ত হওয়ার জন্য ভারী কামান ব্যবহার করে। পরে তারা শহরে ঢােকে। এর আগে শহরের অবস্থা দেখার জন্য একটি অগ্রবর্তী বাহিনী পাঠায়। পরে শহরে ঢুকে নিরস্ত্র জনতার ওপর মেশিন গান ব্যবহার করে। পাক-ফৌজ সাঁজোয়া গাড়ীতে করে শহরের কেন্দ্রস্থলে ডেপুটি কমিশনারে দপ্তরে গিয়ে হাজির হয়।
শ্রীহট্ট থেকে সীমান্ত পার হয়ে যারা ডাউকী সীমান্তে আসছেন তারা জানান শহরটি জনশূন্য হয়ে পড়েছে এবং সমস্ত দোকান ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলি বন্ধ।
আর এক সংবাদে প্রকাশ ৭ মার্চ শ্রীহট্ট জেল থেকে প্রায় সাত’শ বন্দী বেরিয়ে যায়। তাদের আটক রাখার জন্য কোন পাহারাদার ছিল না।
শাপুরা মুক্ত
নবাবগঞ্জ থেকে ইউএনআই-এর সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, তিনদিন আগে রাজশাহী থেকে ৫০০ পাকফৌজ মার খেয়ে শাপুরায় আশ্রয় গ্রহণ করে। শুক্রবার রাতে মুক্তিফৌজ তিনদিক থেকে সাঁড়াশী অভিযান চালিয়ে এই উপশহরটিকে মর্টার ফায়ারে বিধস্ত করে ।
রাজশাহীতে এখন পাক-ফৌজ নেই। তবে পাক-জেট বিমানগুলি প্রতিদিন শহরের ওপর হামলা করছে।
রংপুর
রংপুরের বিচ্ছিন্ন পাক-ফৌজের ওপর মুক্তি যােদ্ধারা সফলভাবেই মর্টার বর্ষণ করে চলেছে। রংপুরে এবং সৈয়দপুর শহরে প্রচন্ড গােলাবর্ষণ হচ্ছে এবং লড়াই হচ্ছে।
রংপুর সেক্টরে বড়াহিয়া, লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম পাক-ফৌজের তিনটি বাহিনীকে মুক্তিফৌজ বাধা দেয় এবং তিনটি সেতু ধ্বংস করে। একটি সৈন্যদল লালমনিরহাট থেকে রেল পথে যাচ্ছিল। আর একটি বাহিনী লালমনিরহাট থেকে কুড়িগ্রাম যাচ্ছিল। এরা পেছনে বহু হতাহত ফেলে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
অন্য একসংবাদে জানা যায় পাক-ফৌজ রংপুর এবং লালমনিরহাটের মধ্যে রাস্তা এবং রেলপথ মেরামত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ওদের উদ্দেশ্য হলাে লালমনিরহাটকে রসদ সরবরাহের অগ্রবর্তী ঘাঁটি রূপে গড়ে তােলা। এই অঞ্চলে পাক-বিমান গুলি রসদ সরবরাহ করছে। রংপুর থেকে সৈয়দপুরে দু’কোম্পানি পাক-ফৌজ পাঠানাে হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ১১.৪.১৯৭১