You dont have javascript enabled! Please enable it!

লালমনির হাট মুক্তিফৌজের দখলে
পাবনা হাতছাড়া কুষ্টিয়া, ফেনী, রাজশাহীতে অবিরাম বিমান হানা

মুক্তিফৌজ রবিবার লালমনিরহাট শহরটি পাকফৌজের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। ইউ-এন-আই’র সংবাদে বলা হয়েছে, প্রচণ্ড সংগ্রামের পর এই অঞ্চলটি মুক্তিফৌজের দখলে যায়।
ঢাকার দিকে “অপারেশন ঢাকা” নামে মুক্তিফৌজ এক নতুন অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন নরসিংদীতে এক নতুন রণাঙ্গন খুলেছে এবং তারাপুরে পাকফৌজকে বাধা দিয়েছে। ময়মনসিংহের মহকুমা শহর টাঙ্গাইলে পাকফৌজের একটি দল মুক্তিফৌজের হাতে ধ্বংস হয়েছে। চাঁদপুর এবং কুমিল্লার মধ্যবর্তী অঞ্চল হাজিবনিতে মুক্তিফৌজ ১৩০টি গাড়ির এক পাক-কনভয় দখল করে।
রাজশাহীর সেনানিবাস থেকে পাকফৌজের উৎখাত করার জন্য মুক্তিফৌজ প্রচন্ড আক্রমন করেছে।
সবশেষে সংবাদে ইউ-এন-আই জানিয়েছে, পাবনা শহরটি পাকফৌজ পুনর্দখল করেছে। জানা গেছে, ঢাকা থেকে এক হাজার পাকফৌজ এই হামলা করে। এরা রাজশাহীর দিকে এগােচ্ছে।
কুষ্টিয়া, যশাের, রাজশাহী, শ্রীহট্ট এবং ফেনী শহরে পাকবিমানগুলি অবিরাম গােলাবর্ষণ করে। চট্টগ্রামের আশেপাশের অঞ্চলে ৫২-৫৩টি বােমারু বিমান বােমা ফেলেছে বলে জানা গেছে। এই হামলায় ব্যাটারী মর্টার এবং ট্যাঙ্কও ব্যবহার করা হয়।
পাক-বিমানের অবিরাম হামলা সত্ত্বেও জেলার কয়েকটি বিক্ষিপ্ত অঞ্চল ছাড়া শ্রীহট শহর, কুমিল্লা জেলার উত্তরাংশ তাদের দখলে আছে।
রণাঙ্গন রাজশাহী
রাজশাহী সেনানিবাস থেকে পাকফৌজকে উৎখাত করার জন্য শনিবার মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড আক্রমণ করে। রাজশাহী থেকে ইউ,এন,আই জানিয়েছে যে গত ৮ এপ্রিল পাকফৌজকে সেনানিবাসে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয় এবং দুদিন চুপচাপ থাকার পর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আবার গুলির আওয়াজ শুরু হয়।
ঢাকা থেকে যমুনা পার হয়ে প্রায় ১ হাজার পাকফৌজ রাজশাহী যাওয়ার পথে পাবনার কাছে পৌঁছছে এই সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিফৌজ এই আক্রমণ করে।
প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে নিরবিচ্ছিন্ন গােলাবর্ষণ হয়। কয়েকটি মর্টার শেল শহরে এসে পড়ে। সারা রাতই মাঝে মাঝে গােলাগুলির আওয়াজ শােনা যায়। পরে রবিবারও সকাল ৯ টায় আবার তীব্রতা বাড়ে।
বাঙ্কার এবং ট্রেঞ্চে প্রায় চারশ পাকফৌজ আছে এবং তাদের ঘিরে আছে প্রায় সাত আটশ মুক্তিফৌজ।
রাজশাহীর ফৌজী সেনানিবাসে আয়তন ২ বর্গ কিলােমিটার। কিন্তু শহর থেকে পিছু হটার পর পাকফৌজ এর আয়তন বাড়িয়ে ৯ বর্গ কিলােমিটার করেছে। এজন্য তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিকে জ্বালিয়ে দেয় এবং মাইন ফাটিয়ে জায়গা তৈরি করে।
কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গার এক সংবাদে জানা যায় রবিবার দুপুর দুটোর সময় গােয়ালডাঙ্গায় বিমান হামলা করে।
অন্য এক সংবাদে প্রকাশ যে, দুদিন আগে গােয়াল ডাঙ্গায় ২শ পাকছত্রীফৌজ নেমেছিল এবং তারা ৩৫ কিলােমিটার দূরে কুষ্টিয়া শহরের দিকে এগােচ্ছে।
বােমা বর্ষণের ফলে গােয়ালডাঙ্গায় অনেক জীবন হানি হয়েছে। অনেক ঘর ধ্বংস হয়েছে। ঐ জেলার কুমারখালিতে পাক-বিমান গােলা বর্ষণ করেছে। এর মধ্যে পাবনা জেলার নগরবাড়ী এবং ঈশ্বরদীর মুক্তিফৌজের ঘাঁটিও আছে।
শােনা গেছে হাডিঞ্জ সেতুর কাছে তীব্র লড়াই চলছে। এই সেতুটি মুক্তিফৌজ পাহারা দিচ্ছে।
পাকফৌজ কুমিল্লা অঞ্চলে অবিরাম বিমান হামলা করছে
সম্ভবত কুমিল্লা ফেনী চট্টগ্রাম এর সংযােগ রাস্তাটি মেরামতের কাজে ইঞ্জিনিয়ারদের সময় দেওয়ার জন্য পাকবিমান বাহিনী বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে হামলা করে।
আগরতলা থেকে ইউএনআই-এর সংবাদদাতা জানাচ্ছেন যে কুমিল্লার দূর্গে যে পাকফৌজ আছে তারা ধলুপাড়া বিমানবন্দর থেকে খাদ্য এবং অস্ত্র সরবরাহও পাচ্ছে। এই সংবাদের সূত্র হল মুক্তিফৌজের ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর। ঐ রিপাের্টে অনুযায়ী গত দুদিনে রসদবাহী বিমানগুলি কমপক্ষে ১৬ বার বিমান বন্দরে নেমেছে।
ইতােমধ্যে ধুপাড়া বিমানবন্দরটি দখল করতে বা অকেজো করে দেওয়ার জন্য পাকফৌজের ওপর মুক্তিফৌজ বার বার হামলা করছে। গত তিনদিন ধরে ঐ অঞ্চলে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।
রবিবার এই বিমান হামলার জবাবে মুক্তিফৌজ মােটখালের কাছে আবিখােলা সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছে।
পাকফৌজ পরবর্তী গ্রামগুলির ওপর সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। ঘরগুলিতে আগুন লাগিয়ে, দোকানপাট লুঠ করে এবং সমস্ত সক্ষম ব্যক্তিকে বন্দীশিবিরে নিয়ে গিয়ে তারা অত্যাচারের বান ডাকিয়েছে। এইভাবে পাকফৌজ কুমিল্লা একাংশে, চন্ডীনগর, দেবীদুয়ার এবং বুড়িং থানা দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা অভিযান
আগরতলা থেকে ইউ,এন,আই জানাচ্ছে নরসিংদিতে এক নতুন রণাঙ্গন খুলে মুক্তিফৌজ তাদের ঢাকা অভিযান পর্বের সূচনা করেছেন।
সীমান্তের এপারে পাওয়া সংবাদে জানা গেছে যে, নরসিংদির কাছে তারাপুরে মুক্তিফৌজ, পাকফৌজকে সফলভাবে বাধা দিয়েছে।
ইতােমধ্যে ঢাকা থেকে পাকফৌজের কয়েকটি দল নরসিংদী দখলের জন্য যুদ্ধ যাত্রা করে। তারা ডেমরা নদী অতিক্রম করে পজিশন নিয়েছে বলে শােনা গেছে। এই স্থানটি নরসিংদী থেকে ৮ কিলােমিটার দূরে।
মুক্তিফৌজ ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইলের কাছে পাকফৌজের একটি দলকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে পরাজিত পাকসৈন্যরা মরিয়া হয়ে ছুটে পালায়।
পাকফৌজী কমান্ড এই সৈন্যদের টাঙ্গাইল থেকে মুক্তিফৌজদের হটিয়ে ময়মনসিংহ দখলের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিল। ময়মনসিংহ জেলা এখন মুক্তিফৌজের দখলে।
লালমনির হাট উদ্ধারের সংগ্রাম
দিনহাটী থেকে আমাদের স্টাফ রিপাের্টার জানাচ্ছেন লালমনিরহাট উদ্ধারের জন্য মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড সংগ্রাম চালাচেছ। ইয়াহিয়া বাহিনী কিছুটা সরতে বাধ্য হয়েছে। রংপুরের অদূরে পাকসৈন্যর গুলিতে ৭ জন গ্রামবাসী মারা গেছেন। প্রতিক্রিয়াশীল জামায়েত ইসলামের মুখপত্রের দু’জন সাংবাদিক যখন গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত ছিল তখন মুক্তিফৌজ বাহিনী তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে বলে দিনহাটায় সংবাদ পৌঁছেছে।

সূত্র: কালান্তর, ১২.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!