প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রংপুরে পাকসেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা
(নিজস্ব সংবাদদাতা)
কলকাতা, ৩১ মে- সম্প্রতি দিনাজপুর হয়ে গঙ্গারামপুরে আগত রংপুর সদর হাসপাতালের জনৈক কর্মচারী এই প্রতিনিধিকে রংপুর শহরে বর্তমানে কি ধরণের বীভৎস হত্যালীলা চলছে তার এক মর্মস্তদ বিবরণ দেন। অশ্রু সজল নয়নে তিনি জানান যে আকস্মিকভাবে পাক সৈন্যবাহিনী রংপুর শহরকে ঘিরে ফেলায় শহর থেকে খুব সংখ্যক লােক বের হতে সক্ষম হয়। আর সেই থেকে শুরু হয় বর্বর সেনাবাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবলীলা। সেনাবাহিনী রংপুর হাসপাতালের ক’জন রুগী ও কর্তব্যরত কয়েকজন বাঙালী কর্মচারীকে লাইন করে দাঁড়িয়ে মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করে। ভাল উর্দু কথা বলতে পারায় এই কর্মচারীটিকে অবাঙালী ভেবে সেনাবাহিনী ছেড়ে দেয়।
সৈন্যরা বর্তমানে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইচ্ছামত হানা দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সরকারী চাকুরে ছাত্র ও যুবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের শরীর থেকে সম্পূর্ণ রক্ত বের করে নিচ্ছে এবং পরে তাদেরকে শহরতলী এলাকার একটি স্থানে নিয়ে হত্যা করে খালে পুতে ফেলছে। সেনা বাহিনী নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের পাশবিক লালসা চরিতার্থ করছে বলে তিনি জানান। থেকে থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেশিনগানের গুলির শব্দ ও আহতদের আর্তনাদ ও চিৎকার ভেসে আসতে শােনা যায়।
কবরের নিঃস্তব্ধতা
এই কর্মচারীটি রংপুরের মতাে দিনাজপুরকেও একটি মৃতের শহর বলে বর্ণনা করে বলেন যে শহর গুলিতে আজ বিরাজ করছে কবরের নিঃস্তব্ধতা। সেখানে মাঝে মাঝে সামরিক বাহিনীর দুই একটি গাড়ি টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে আর শােনা যাচ্ছে কুকুরের ডাক দিনাজপুর শহরে অবস্থানকালে সকাল সাতটা থেকে রাত্রি আটটা পর্যন্ত ঘুরে তার সঙ্গে মাত্র তিনজন লােকের সাথে সাক্ষাৎ হয়।
সূত্র: কালান্তর, ১.৬.১৯৭১