You dont have javascript enabled! Please enable it!

শ্রীহট্টের সৈন্য শিবির দখল জামালপুর-শেরপুর মুক্তঃ বাঙলাদেশের সর্বত্র মুক্তিফৌজের জয়যাত্রা

মঙ্গলবার শ্রীহট্ট শহর হাতছাড়া হয়েছিল। বুধবার পাকফৌজের হাত থেকে শ্রীহট্টের ক্যান্টনমেন্টটিও মুক্তিফৌজ ছিনিয়ে নিয়েছে। পরাজিত ফৌজ এখন শহরের কাছে বিমান বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিফৌজ ঐ জায়গাটিও অবরােধ করেছে।
কুমিল্লা শহরে বিবির বাজারে তুমুল লড়াই চলেছে। রাজশাহীতে মুক্তিফৌজ চারদিক থেকে আক্রমণ করেছে অবশিষ্ট পাকসৈন্যদের।
লড়াই হচ্ছে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের কাছে, কুড়িগ্রাম, ঢাকায় সৈয়দপুর। তবে সব জায়গাতেই মুক্তিফৌজ-এর আক্রমণের ধার প্রবল। পলায়নপর পাক ফৌজ পথের দু’পাশে যা পাচ্ছে ধ্বংস করে চলেছে।
বাঙলাদেশের মুক্তিফৌজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীহট্ট দখল করেছিলেন আজ তারা শহরের ১২ কিলােমিটার উত্তর-পশ্চিমে খাদিমনগর ক্যান্টনমেন্টের ওপর অভিযান চালিয়ে ক্যান্টনমেন্টটি দখল করে নেন। এ সংবাদ ইউ,এন,আই এর।
শহরের বিতাড়িত পাক ফৌজ ঐ সুরক্ষিত ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই ক্যান্টনমেন্টটি ইয়াহিয়ার বর্বর অভিযান শুরু হওয়ার পূর্বে পাক ফৌজৈর রেজিমেন্টাল ট্রেনিং সেন্টার ছিল।
সীমান্তের এপারে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায় ইপিআর এর ৬’শ সৈন্য মঙ্গলবার থেকে এই অবরােধের নেতৃত্ব করেন।
এছাড়া শ্ৰী হট্টের কাছে সাপুটিকার বিমান বন্দরে পাকফৌজের একটি ছােট দল তিন দিন আগে থেকে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। মুক্তিফৌজ ঐ সময় এই বিমান বন্দরটি দখল করে নেয়।
ক্যান্টনমেন্টের চারদিকে মুক্তিফৌজ যে অবরােধ গড়ে তুলেছিলেন তার ফলে অবরুদ্ধ সৈন্যবাহিনীর রসদ সরবরাহ সম্পূর্ণ বানচাল হয়ে যায়। মঙ্গলবার দিনই এ খবর পাওয়া গেছে। শ্রীহট্ট শহর ছেড়ে ক্যান্টনমেন্টে পিছু হটে যাওয়ার সময় পাক ফৌজ শ্রীহট্ট বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দিয়ে যায়।
মঙ্গলা ও চালনায় পাকফৌজের নৃশংসতা
পরপর দুদিন নৌকাবাহী কামান থেকে পাকফৌজ মঙ্গলা এবং চালনার খালের দুই পাড়ে অবিরাম গােলা বর্ষণ করছে। ফলে গ্রামগুলিতে হতাহতের সংখ্যা অনেক বলে সংবাদ আসছে।
কুমিল্লায় তীব্র লড়াই
আর একটি সংবাদে বলা হয়েছে কুমিল্লায় নতুন করে লড়াই বেধেছে। এখানে পাক ফৌজ বিমান মারফত রসদ পাওয়ার পর এই নতুন আক্রমণ হচ্ছে।
ঢাকার স্থানে স্থানে লড়াই হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বস্ত সূত্রের সংবাদ হলাে জামুবিয়ার কাছে মুক্তিযােদ্ধারা পাকফৌজের একটি কনভয় আটকে শতাধিক সৈন্য হত্যা করেছে। ঐ কনভয়ে সাতটি গাড়ী ছিল।
জামুরিয়া টাঙ্গাইলের দক্ষিণে কয়েক কিলােমিটার দূরে। তিন দিন আগে টাঙ্গাইল মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে আসে। ঐ কনভয়টি অনুমান করা হচ্ছে যে টাঙ্গাইলের ওপর নতুন করে আক্রমণের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।
মুক্তিযােদ্ধারা ক্রমেই বেশী করে গেরিলা কায়দায় সংগ্রামের ওপর জোর দিচ্ছে। এর প্রমাণ স্বরূপ ইপিআর বাষ্পচালিত জলযান নিয়ে বাঙলাদেশের উপকূলপবর্তী অঞ্চল জুড়ে পাকফৌজকে ব্ৰিত করছে। নতুন পাকফৌজের আগমনের পথের ওপর তারা সজাগ প্রহরা রেখেছে ।
রংপুর জেলার কুড়িগ্রামেও একটি পাক কনভয়ের ওপর মুক্তিফৌজ আক্রমণ করে। তবে এর বিস্তৃত সংবাদ জানা যায় নি।
ঐ জেলার চিলমারি-কুড়িগ্রাম রেলপথটি আবার চালু হয়েছে।
জলপাইগুড়ির সংবাদে জানা গেছে গুরুত্বপূর্ণ পার্বতীপুর রেল জংশনটি মুক্তিফৌজ দখল করেছে। এর ফলে পতিরাম থেকে লালমনিরহাট এবং বিলাহাটি থেকে নিলফামাড়ির বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন মুক্তিফৌজের দখলে।
‘রংপুর ক্যান্টনমেন্টের কাছে তীব্র সংগ্রাম চলছে। মুক্তিফৌজের ওপর চাপ হ্রাসের উদ্দেশ্যে ইপিআর এর একটি বাহিনী এগিয়ে চলেছে।
লড়াই চলছে সৈয়দপুরে।
জামালপুর এবং শেরপুর মুক্ত
দর্শনা থেকে এক সংবাদে জানা যায় দুদিনের তীব্র সংগ্রামের পর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর এবং শেরপুর শহর মুক্তিফৌজের দখলে এসেছে।
এই দুই শহরের সৈন্যরা নিহত হয়েছে কিংবা গারাে পাহাড়ের কাছে রায়গঞ্জে এবং নলিতাবাড়ীতে পিছু হঠে গেছে।

সূত্র: কালান্তর, ৮.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!