মুক্তিযােদ্ধদের হাতে এ পর্যন্ত দশ হাজারের বেশি পাকসৈন্য নিহত
মুক্তিফৌজের আক্রমণে একটি গানবােট নিমজ্জিত তুমুল লড়াইঃ পাকবাহিনী কর্তৃক ফসল নষ্ট
কলকাতা, ২৯ এপ্রিল (ইউএনআই) বাঙলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই যুদ্ধে তাদের হাতে দশ হাজারের বেশি পাকিস্তানী সৈন্য মারা গিয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যরা এখন শহরাঞ্চল ও তার আশেপাশে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। সেতু উড়িয়ে বা রাস্তায় প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে মুক্তিযােদ্ধারা সরবরাহ পথগুলি কেটে দিয়েছেন।
আগরতলার সংবাদে প্রকাশ, বরিশাল শহরের দখল নিয়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের তুমুল লড়াই চলছে। মুক্তিফৌজের নেতৃত্ব করছেন মেজর জলিল। গত কয়েকদিন ধরেই মেঘনা নদীর বুকে গানবােট থেকে ক্রমাগত বরিশাল শহর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামের উপর গােলাবর্ষণ করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীতেও লড়াই ক্রমেই জোরদার হয়ে উঠছে। মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে এখানে একটি গান-বােট নিমজ্জিত হয়েছে।
মাঠে রাসায়নিক দ্রব্য ছড়িয়ে ফসল নষ্ট করে পাকবাহিনী রাসায়নিক যুদ্ধের অবতারণা করল।
গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ করে মুক্তিফৌজ পাকসৈন্য চলাচল সীমিত করতে পেরেছেন। বাঙলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতােমধ্যেই বৃষ্টি নেমেছে। নদীগুলাে ফেপে উঠছে। নিম্নাঞ্চলগুলি প্লাবিত হয়ে গিয়েছে।
জেলা শহরগুলিতে সৈন্যদের খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে। এখন কিছুদিন বিমান থেকে খাবার ফেলা সম্ভব কারণ, বৃষ্টি নেমেছে।
বাঙলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র দাবি করেন, বাঙলার ৬৫ হাজার গ্রাম অস্থায়ী দরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিভিন্ন গ্রামে প্রশাসনিক ইউনিটগুলি স্থাপিত হয়েছে এবং ইউনিটগুলির মধ্যে যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তােলা হচ্ছে।
এই কেন্দ্রগুলি থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে। বহু তরুণ-তরুণী গেরিলা যুদ্ধে নাম লিখিয়েছেন বলে তিনি জানান।
সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া সংবাদে… অঞ্চলের রামগড়ের দিকে অগ্রসারমান পাক-বাহিনীকে মুক্তি যােদ্ধাদের আক্রমণের চাপে পিছু হটে যেতে হয়েছে। পুনরায় পাকবাহিনী তিন দিক থেকে রামগড়ের দিকে এগােতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধ এখনাে চলছে। এই এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু মেরামত করতেও পাকবাহিনী ব্যর্থ হয়েছে।
কুমিল্লা অঞ্চলে চান্দুরা ও শাবাজপুরে মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীর উপর কয়েকবারই আক্রমণ চালিয়েছে। কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত আরও খবরে জানা গেল যে গত ২৪ এপ্রিল।
কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত আরও খবরে জানা গেল যে, গত ২৪ এপ্রিল যে সমস্ত বাঙালী কর্মী কাজে যােগ দিতে গেছেন তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আথালড়াতেও মুক্তিযযাদ্ধারা কয়েকবার অতর্কিতে আক্রমণ করেছে। শ্রীহট্টেও মুক্তিফৌজ কয়েক বারই পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়।
উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড লড়াই
আজ সকাল থেকে তেতুলিয়া ও ঠাকুরগাঁও রােডের এক জায়গায় মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাক বাহিনীর প্রচণ্ড লড়াই চলছে।
ঠাকুরগাঁও এর দিকে অগ্রসরমান পাক-বাহিনী তীব্র বাধার সম্মুখীন হয়েছে। মেজর কাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিফৌজ পচাগড় মুক্ত করার চেষ্টা করছে।
ধরলা নদীতে স্নান করতে নেমে একদল পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যমুক্তি যােদ্ধাদের দ্বারা আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়। কুড়িগ্রামের কাছে গত সােমবার এই আক্রমণের ফলে ৮ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে এবং ২ জন সৈন্যকে জীবন্ত অবস্থায় বন্দী করা হয়েছে।
গেরিলা কায়দায় এই ধরণের আক্রমণের ফলে পাকবাহিনী কুড়িগ্রাম থেকে আর ভুরুঙ্গামারীর দিকে এগােতে পারেনি।
সূত্র: কালান্তর, ৩০.৪.১৯৭১