পাক-সামরিক বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মাস অতিক্রান্ত
“জয় বাঙলা” আন্দোলনের কাছে সর্বাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত বাহিনী হেয় প্রতিপন্ন
মুজিব নগর, বাঙলাদেশ, ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানের সামরিক জুন্টা নিরন্ত্র বাঙলাদেশের মানুষের কাছে বাজিতে হেরে গেছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খা মনে করেছিলেন তার সর্বাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত বাহিনী দ্বারা সহজেই ‘জয় বাঙলা’ আন্দোলনকে কাবু করে তার একচ্ছত্রতা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন খুব সহজেই। কিন্তু আজ একমাস অতিক্রান্ত হল, তবু ক্যান্টনমেন্টগুলি আর জেলা শহরগুলি ছাড়া আসন্ন বর্ষার আগে তারা বিশেষ কিছু দখলে রাখতে পারছেন না।
বাঙলাদেশের বর্ষণ শুরু হয় জুন মাসে এবং অক্টোবর পর্যন্ত বাঙলাদেশের নিম্নঞ্চলগুলি জল সিক্ত থাকে। প্রাকৃতিকতার বৃষ্টিতেই পাক-বাহিনীর বিমান ক্ষেত্রগুলিতে জল জমছে। এই দিকে থেকে বৃষ্টি মুক্তিফৌজের পক্ষে খুবই সাহায্য করবে।
একমাস আগে গত ২৫ মার্চ রাত্রির অন্ধকারে পাক-বাহিনী তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর আঘাত হানে। এখন তারা বাঙলাদেশের এই যুদ্ধে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে তার থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। বর্ষা শুরু হয়ে গেলে এক বিরাট নৌ শক্তি ছাড়া বাঙলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা পাক-বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগ মনে করে।
ময়মনসিংহ জেলা সদর শহরের উপর পাক বাহিনী অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেও কিশােরগঞ্জ ও নেত্রকোনা মহকুমায় এবং ত্রিপুরা ও শ্রীহট্টের নীচু অঞ্চলগুলি এখনাে তাদের আওতার বাইরে। বর্ষা শুরু হলে এই অঞ্চলগুলি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ময়মনসিংহের বিমানযােগে সরবরাহ দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। ময়মনসিংহের সঙ্গে যেদিক দিয়ে রেল যােগাযোেগ রয়েছে সে দিকে পাকবাহিনীর কোন কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই। শ্রীহট্টেও এই অসুবিধা রয়েছে। কুমিল্লা আখাউড়া দিয়েই তার সঙ্গে রেল ও পথের যােগাযােগ।
কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট একটি যুদ্ধ ঘঁটি কিন্তু তার চতুর্দিকের গ্রামাঞ্চল থেকে কোন সরবরাহ পাবার সম্ভাবনা নেই। বর্ষায় ময়নামতিতেও বিমানযােগে রসদ সরবরাহ করতে হবে। একামত্র নারায়ণগঞ্জে দাউদকান্দি জলযানে গিয়ে তারপর স্থলপথে কুমিল্লায় যাওয়া যাবে।
আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলটিও খুব নীচু ফলে বহু জায়গা জলবদ্ধ হয়ে যায়।
মুজিবর সমাচার
আওয়ামী লীগ সূত্রে সর্বশেষ সংসাদে জানা গেল যে, শেখ মুজিবর রহমান “বন্ধুদের হাতে আছেন এবং বাঙলাদেশের মধ্যেই আছেন। তিনি কোথায় আছে তা যথা সময়ে জানা যাবে। পাকিস্তানী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে যে দাবি করছে তা অসম্ভব মনে হয় কারণ যদি তাই হয় তবে শেখ মুজিবরের ট্রেনিং ক্যাম্প তারা দখল করেছে।
দর্শনায় যে পাক বাহিনী রয়েছে তারা সেখানে ট্রেঞ্চ কাটছে ও বাঙ্কার তৈরি করছে বলে জানা গেল।
চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি চলমান সামরিক গাড়ির উপর বােমা ছুড়ে তারা ১০ জন পাক সৈন্যকে ঘায়েল করেছে।
নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করার জন্য পাক বাহিনী নানান কায়দা নিয়েছে। কার্টু তুলে নিয়েছে বলে ঘােষণা করলে সাধারণ মানুষ বাইরে বেরিয়ে এলে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
সূত্র: কালান্তর, ২৬.৪.১৯৭১