You dont have javascript enabled! Please enable it!

শেরপুর ফেরীঘাট দখলের লড়াই চলছে
বাঙলাদেশের পূর্বাঞ্চলে নামাস্থানে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত

আগরতলা, ২৪এপ্রিল (ইউএনআই) দক্ষিণে চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে উত্তরে শ্রীহট্ট পর্যন্ত চতুর্দিকে ছড়ান পাক ঘাঁটিগুলির মধ্যে বর্ষার পূর্বেই যােগাযােগ পুরােপুরি করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানীবাহিনী মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে তা ক্রমাগত বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেল।
শ্রীহট্ট ও আখাউড়ার মধ্যে একমাত্র যােগাযােগ পথ শেরপুরের ফেরীঘাট দখলের জন্য মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাকবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।
গতরাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছে মুক্তিফৌজের গেরিলাদের হাতে একটি পাক কনভয় বিধ্বস্ত হয়েছে। তাতে ২৩০ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে।
এই কনভয়টি ঘেনার তীরবর্তী আশুগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিল সেখানকার ঘটিকে শক্তিশালী করার জন্য।
এইভাবে পূর্ব অঞ্চলের নানা স্থানে মুক্তিফৌজ গেরিলাবাহিনী ও ‘সুইসাইড স্কোয়াড’ খুবই সক্রিয় এবং পাক-বাহিনীকে তারা প্যুদস্ত করে ফেলছে।
মুক্তিফৌজ গেরিলারা কিন্তু কামান ব্যবহার করে পাকবাহিনীর টহলদারী দলকে ঘায়েল করেছে। এই টহলদারী দলটি শ্রীহট্টের শালুটিকার খাদিমগড় ঘাটির দিকে যাচ্ছিল। শ্রীহট্টের ২০ কিলােমিটার দূরবর্তী হরিপুরের তেলের ঘাটিও পাকবাহিনীর লক্ষ্য। পাকবাহিনীর আকেরটি দল ছত্রাকের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। মুক্তিফৌজের গােলাবর্ষণের মুখে তাদের শালুটকার খাদিমগড় অঞ্চলের দিকে সরে যেতে হয়েছে।
গতরাত্রিতে আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে অকস্মাৎ আক্রমণের সময় মুক্তিফৌজ মেশিনগান ও মর্টার ব্যবহার করেছে।
পাকবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত
পাকিস্তানী বাহিনীর যে প্রচন্ড ক্ষতি হচ্ছে তার পরিচয় পাওয়া গেল আজ প্রাতে আহত সৈন্যদের সরিয়ে নেবার বহর দেখে।
চট্টগ্রাম থেকে উত্তরাভিমুখী একপাক সৈন্যদের কুমিল্লা থেকে দক্ষিণে আগত সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হতে পারে নি কারণ রামগড় লােকনাম অঞ্চলে মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড বাধা সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া অঞ্চল অভিমুখে পাকবাহিনীর দ্বিমুখী অভিযান মুক্তিফৌজ ব্যর্থ করে দিয়েছে।
শ্রীহট্ট থেকে পাকবাহিনী ত্রিশুখী অভিযান চালাচ্ছে। একটি বাহিনী গেছে ছাতক-সুনামগঞ্জের পথে ময়মনসিংহের থেকে অগ্রসরমান একটি বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবার জন্যে। আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চল থেকে একটি বাহিনী ঢাকা থেকে অগ্রসরমান একটি বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবার জন্য চেষ্টা করছে।
গঙ্গাসাগরের কাছে ২ জন পথ প্রদর্শক মুসলিম লীগ কর্মী সহ পাকসৈন্যদের একটি ছােট দলকে মুক্তিফৌজ গেরিলা বাহিনী সাফল্যের সঙ্গে ঘিরে ফেলে।
আখাউড়ার পাকবাহিনীর একটি দলনেতাদের সুরক্ষিত ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে শ্রীহট্ট ও গঙ্গাসাগর অভিমুখে যাত্রা কালে মুক্তিফৌজ তাদের উপর প্রচণ্ড গােলাবর্ষণ করে।
সাবাজপুরে কিছু পাকসৈন্য… পড়েছে। গেরিলা বাহনিী তাদের সাহায্যকারী দলকে এগােতে দিচ্ছে। ।
মুক্তিফৌজের একটি দল নৌকায় কর্নফুলি পার হবার সময় পাকবাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। মুক্তিফৌজ গেরিলা বাহিনী এই অঞ্চলে জল সরবরাহ ব্যবস্থা ও পথের যােগাযােগ নষ্ট করে দিয়েছে।
আজ প্রাতে কুশিয়ারা নদীর উপর শেরপুর শহরের উপর পাকবিমানবাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে।
এই বিমান আক্রমণের ফাঁকে পাকবাহিনী ফেরীঘাট দিয়ে নদী পার হতে চেষ্টা করে। ঠিক সেই সময় নদীর অপর পার হতে মুক্তিফৌজ মর্টারের সাহায্যে তাদের উপর আক্রমণ করে। আখাউড়া ও শ্রীহট্টের মধ্যে ঐ ফেরী ঘাটই একমাত্র যােগসূত্র। গতকালও এই অঞ্চলে পাকবাহিনী মুক্তিফৌজের কাছে বাধা পায়।
কসবা ও আখাউড়ার মধ্যেও আজ বিকেলে প্রচণ্ড লড়াই চলে। এই যুদ্ধের ফলে আগরতলা শহরের ঘরবাড়ি কাঁপাতে থাকে।
চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে। আসাম সীমান্তবর্তী রাঙামাটি শহর দখলের জন্য পাক বাহিনী মরিয়া হয়ে পড়েছে। শ্রীহট্ট জেলায় ঢােকার পথে পাকবাহিনী মধুপুরের কাছে তিতাস নদী পার হতে পারে নি।

সূত্র: কালান্তর, ২৫.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!