You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.27 | মধুমতীর দু'পাশের গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে পাকফৌজ | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

মধুমতীর দু’পাশের গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে পাকফৌজ বরিশালের
পথে শ্রীহট্টের শেরপুর ফেরীঘাট ও অন্যত্র মুক্তিফৌজের সাফল্য

পাকফৌজ সােমবার রাতে বরিশাল শহরাভিমুখে এগােচ্ছে। যাওয়ার পথে মধুবতী নদীর দু’পাশের গ্রামগুলি গান-বােট থেকে গােলাবর্ষণ করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে এগােচ্ছে। এ খবর ইউএনআই-এর।
আগরতলা থেকে ঐ এজেন্সীর সংবাদদাতা আরও জানাচ্ছেন, শ্রীহট্টের কাছ শেরপুর ফেরীঘাটটি মুক্তিফৌজ গত চারদিন ধরে পাকফৌজের পদাতিক বিমান বাহিনীর আক্রমণ সত্ত্বেও এখনও দখলে রেখেছেন। রাজগঞ্জ এবং নালতাবাড়ি অঞ্চলে উপজাতীয়রা এই শেরপুর ফেরীঘাট দখল করেন।
২৫ মার্চ ঢাকা শহরে ইয়াহিয়া অঘঘাষিত যুদ্ধ ঘােষণার পর থেকে সােমবারই প্রথম পাকফৌজ বরিশালের দিকে তাদের রক্তাক্ত হাত প্রসারিত করতে চলেছে বলে জানা গেল। বরিশাল বাঙলাদেশের একটি বিশিষ্ট জেলা। এর আনুমানিক জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ। এই অভিযানে প্রধানত গান বােট ব্যবহার করা হচ্ছে। গানবােট গুলি বঙ্গোপসাগর হয়ে মধুমতী নদীতে প্রবেশ করেছে। এই নদীর অনেকগুলি শাখা-প্রশাখা বরিশাল জেলা ঘিরে রেখেছে।
কত পাকফৌজ এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া রিপাের্টে তা জানা যায় নি। এক অসমর্থিত সংবাদে প্রকাশ, বরিশালের দক্ষিণ দিক দিয়ে পাকফৌজ বরিশালে ঢুকছে।
আগরতলা থেকে শ্রীহট্ট রণাঙ্গন সম্পর্কে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, এ সপ্তাহের গােড়ার দিকে পাকফৌজের যে পদাতিক বাহিনীটি শ্রীহট্ট এসেছে তারা শেরপুর ফেরীঘাটের প্রতিরােধ ভাঙ্গতে ব্যর্থ হয়েছে। বুনিয়াড়া নদীর উপর শেরপুর ফেরীঘাট অবস্থিত। কুমিল্লা রণাঙ্গনে শ্রীহট্ট এবং আখাউড়ার মধ্যে সংযােগ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ঘাট। এই অঞ্চলে পাকফৌজ বিমান থেকে বােমা ফেলেছে এবং অবিরাম মেশিনগানের গুলি বর্ষণ করেছে।
শ্রীহট্ট শহর থেকে ১৩ কিলােমিটার দূরে গােলাপগঞ্জের উপর পাকফৌজের হামলায় ৪ জন মুক্তিসেনা আহত হয়েছে। এই জায়গাতেই কয়েকদিন পূর্বে মুক্তিফৌজের হাতে ২২ নিশ্চিহ্ন হয়েছিল।
খুলনা বেতার কেন্দ্রের ওপর মুক্তিফৌজের আক্রমণ
এক সংবাদে জানা গেছে, খুলনা বেতার কেন্দ্রের ওপর মুক্তিফৌজ গেরিলা কায়দায় আক্রমন চলায়। এই কেন্দ্রটি বর্তমানে পাকফৗজের দখলে।
চট্টগ্রাম অংশে পাকফৌজ চট্টগ্রাম-কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের মধ্যে যােগাযােগ ব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তনের মরিয়া প্রয়াস করছে। মুক্তিফৌজ এই অঞ্চলের রেল ও সড়কগুলি নষ্ট করে দিয়েছে। | মুক্তিফৌজের সূত্রে এক সংবাদে জানা গেছে তিতাস নদীর কাছে সাবাইপুরে ৫০ জন পাকফৌজের একটি স্কোয়াড মুক্তিফৌজের হাতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
পাকফৌজেররা যখন তাদের দিনের কাজকর্মের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল তখন মুক্তিফৌজ এক আকস্মিক হামলায় এদের ধ্বংস করে কুমিল্লা অঞ্চলে লাকসাম রেল স্টেশনের কাছে চট্টগ্রামে একদল পাক ফৌজকে মুক্তিফৌজের আকস্মিক হামলার সম্মুখীন হতে হয়।
ঢাকা অঞ্চলেও মুক্তিফৌজ গেরিলা পদ্ধতিতে পাকফৌজকে ব্ৰিত করছে।
পচাগড় থেকে পাকফৌজ সরে যাচ্ছে বলে শােনা গেছে। তবে কিছু অনিয়মিত সৈন্যদের সীমান্ত প্রহরার জন্য রেখে যাচ্ছে। নিলফামারী থেকেও পাকফৌজ সরে যাচ্ছে।
সােমবারের এক সংবাদে প্রকাশ যে মেহেরপুরের পূর্ব দিকে ৬ কিলােমিটার দূরে আমঝুপি বিমান ক্ষেত্র থেকে সরে গিয়ে পাকফৌজ ভারতীয় সীমান্তের গুলির রেঞ্জের মধ্যে এগিয়ে এসেছে।
নিজেদের অবস্থাকে আরও সুরক্ষিত করার জন্য পাকফৌজ মেহেরপুর শহরে ৭২ ঘণ্টার জন্য কার্ফ জারি করেছে।
৫০ জন পাকফৌজের জলডুবি ১০০ গ্রেপ্তার
কৃষ্ণগর থেকে ইউএনআই জানাচ্ছে বাঙলাদেশের জালালপুরের কাছে ব্রহ্মপুত্রের ওপর পাকফৌজ পন্থী নৌকাগুলির ওপর মুক্তিফৌজ আক্রমণ করে। ঐ আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০ জন পাকফৌজ জলে ডুবে যায় এবং আরও একশ জন মুক্তিফৌজের হাতে বন্দী হয়। এ ঘটনা শনিবারের।
টাঙ্গাইল শহর এখনও মুক্তিফৌজের দখলে। মুক্তিফৌজ কালিহাটি থেকে পাকফৌজকে বিতাড়িত করে মধুপুর সেনানিবাসে ফেরত পাঠিয়ে কালিচকটি দখল করেছে।

সূত্র: কালান্তর, ২৭.৪.১৯৭১