You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.02 | ইসলামাবাদের নতুন রণকৌশল মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে আরও সৈন্য : ভারত সম্পর্কে কুৎসা | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

ইসলামাবাদের নতুন রণকৌশল মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে আরও সৈন্য : ভারত সম্পর্কে কুৎসা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, খুলনা, রংপুরে বােমাবর্ষণ

পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক চক্র বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও নিরস্ত্র জনগণের ওপর একদিকে স্থল ও বিমানবাহিনী দ্বারা মরিয়া আক্রমণ চালাচ্ছে। এই নতুন আক্রমণের জন্য নতুন সৈন্য আমদানী করা হয়েছে। সম্ভবত চীনের মাধ্যমে এদের আনা হয়েছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদ সরকার সীমান্ত দিয়ে সশস্ত্র লােকজন পাঠানাের জন্য ভারত সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসার অভিযান নতুন করে শুরু করেছে।
ইউএনআই খবর দিয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানী জেট বিমানগুলি বৃহস্পতিবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রভৃতি অঞ্চলে বােমাবর্ষণ করেছে। ওদিকে ই,পি,আর এবং মুক্তিবাহিনী আর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বিজয় অর্জন করে ইসলামাবাদ সরকার বৃহস্পতিবার নতুন করে ভারত বিরােধী প্রচারে অভিযােগ করেছে ভারত সরকার সীমান্ত দিয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিদের বাঙলাদেশে পাঠচ্ছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযােগ দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছে।
আগরতলা থেকে ইউ,এন,আই জানাচ্ছে বাঙলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর উপর ইসলামাবাদের স্থল ও বিমান বাহিনী আক্রমণ করে তবে সর্বত্রই মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিরােধ, করা হয়।
যশাের ছাউনীর অবরুদ্ধ পাকিস্তানী সৈন্যদের জন্য বিমান থেকে অস্ত্র ও খাদ্য ফেলে দেওয়া হয়।
কুমিল্লার মুক্তিবাহিনীকে তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে সৈন্যরা সুরক্ষিত ছাউনীর আশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে।
মেঘালয় সংলগ্ন শ্রীহট্টে পাকিস্তানী সৈন্যরা প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ করার ফলে ঐ অঞ্চলেও পার্বত্য উপজাতিরা মেঘালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
এই আক্রমণের জন্য পুরাে এক কাণ্ডো ব্যাটেলিয়ান সৈন্য আমদানি করা হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধে লাগানাে হয়েছে।
বিভিন্ন অংশ থেকে প্রাপ্ত সংবাদ থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে বড় বড় শহরগুলির ওপর কবজা বজায় রাখাই এখন সৈন্যদলের অন্যতম উদ্দেশ্য। মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রের স্বল্পতা থাকলেও তারা এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য লড়ছেন এবং রংপুর ছাউনীর পথে অবরােধ সৃষ্টি করেছেন।
পাক-সৈন্যদের বর্তমান আক্রমণের লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম হলাে ইপিআর এবং ইবিপি। এরা মুক্তিবাহিনীতে যােগদান করেছেন।
আসাম সীমান্তে পৌঁছানাে এক সংবাদ থেকে জানা গেছে ৬০০ ইপিআরকে খাদিমনগরে বন্দী শিবিরে রাখা হয়েছে। রাজশাহী এবং নবাবগঞ্জের পুলিশ লাইন ভারী কামান দেগে ধ্বংস করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ইপিআরের সদর দপ্তরটি সৈন্যরা দখল করেছে।
ওদিকে ইপিআর ও মুক্তিবাহিনী যে কয়টি উল্লেখযােগ্য জয়লাভ করেছে তার মধ্যে ঢাকার কাছে জয়দেবপুরের অস্ত্র কারখানা দখল, ময়মনসিংহে সমস্ত অবাঙালী সৈন্যদের গ্রেপ্তার। সুনামগঞ্জ, সামসের নগর এবং তেহাপারা এদের দখলে, অবশ্য এদিকে সৈন্যরা এগােচ্ছে বলে শােনা গেছে।
অন্যদিনের মত পাকিস্তান রেডিও বৃহস্পতিবারও জানিয়েছে সব ঠিক আছে। এদিনও স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র সম্ভবত আবহাওয়া বিভ্রাটে ধরা যায় নি।
বিমান আক্রমণ
এদিন সন্ধ্যায় ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে ৫ কিলােমিটার দূরবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকিস্তানী স্যাবার জেট বােমা বর্ষণ করে ও শিল্পাঞ্চলটি ধ্বংস করে। আগরতলা বিমান বন্দর থেকে এই বােমা বর্ষণ দেখা গেছে। এ ছাড়া বগুড়া, খুলনা রংপুর এবং দিনাজপুরেও বােমা ফেলা হয়।
ইউ-এন-আই এর সংবাদ হলাে ঢাকা আবার সৈন্য দলের হাতে যাওয়ায় সেখানে তীব্র সংগ্রাম চলছে।
যশাের জ্বলছে
হরিদাসপুরে সীমান্ত থেকে ইউ,এন,আই জানাচ্ছে যশােরকে সৈন্যরা জ্বালিয়ে দিয়েছে। শহরে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে শত শত লােক ভারতে চলে এসেছেন।
তারা জানিয়েছেন সৈন্যরা অমানুষিক নৃশংসতা করছে। তাঁদের অনেকের আশঙ্কা, সাহায্য না পেলে মুক্তিবাহিনী বেশিদিন শহরটি দখলে রাখতে পারবেন না।
বুধবার সারা দিন-রাত কুমিল্লার উপর প্রচণ্ড কামান দাগা হয়েছে।
সিলেটে অস্ত্রগার দখল
গতরাত্রিতে মুক্তিফৌজ পাকসেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক প্রচণ্ড লড়াই-এর পর সিলেট জেলার জোকিগঞ্জে পাক সামরিক বাহিনীর অস্ত্রাগার দখল করেছে। এই সংঘর্ষের ফলে ২৪ জন পাকিস্তানী হানাদার নিহত হয়।
পাক সেনাবাহিনী বােঝাই নৌ-জাহাজ বিধ্বংস
বাঙলাদেশের সগ্রাম দমন করার জন্য পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর যে ৬টি সৈন্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে, তার মধ্যে ‘আলমগীর’ নামে একটি জাহাজ মুক্তিফৌজের হাতে ধ্বংস হয়েছে।
শিলং থেকে ইউএনআই-এর সংবাদদাতা এ খবর জানিয়েছে। চারশ মহিলা স্বেচ্চাসেবিকা নিহত। যশাের ক্যান্টনমেন্টে পাক সৈন্যরা আওয়ামী লীগের চারশ মহিলা স্বেচ্ছাসেবিকাকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন এলাকা থেকে উপরােক্ত মেয়েদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ সংবাদ ইউএনআইএর।
সিলেটে বিশিষ্ট নাগরিকদের হত্যা
আজ পাক সেনাবাহিনী সিলেটের বহু বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যা করেছে। প্রত্যক্ষ স্থানীয় নেত শীমান্ত সেন সহ তার পরিবারের সবাইকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সংবাদে আরও জানা যায় যে, আসামের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রী বি এন মুখার্জির পৈত্রিক ভবন ‘খাজারি বাড়িটি পাক সৈন্যরা ধ্বংস করেছে। বর্তমানে খাজারি বাড়ি’ আওয়ামী লীগের সিলেট শহর সদর দপ্তর।

সূত্র: কালান্তর, ২.৪.১৯৭১