বাঙলাদেশের প্রায় সব জেলা জুড়ে মুক্তিফৌজের পাল্টা আঘাত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কসবা-আখাউড়ায় তীব্র সংঘাত
সােমবার বাঙলাদেশের প্রায় অধিকাংশ জেলাতেই মুক্তিফৌজ-এর পাল্টা অভিযানে যুদ্ধের মেজাজের লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ঘটে।
আগরতলা সীমান্ত থেকে ওপারের প্রাপ্ত সংবাদ উদ্ধৃত করে ইউ-এন-আই জানিয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা এবং আখাউড়ায় তীব্র লড়াই হচ্ছে। শ্রীহট্ট থেকেও অনুরূপ সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। ওখানে মুক্তিফৌজের চপে রুদ্ধশ্বাস জঙ্গী ফৌজ বিমান ছত্রের সাহায্যের জন্য বারবার আকুল আবেদন করছে।
ইতস্তত সংগ্রাম হচ্ছে ঢাকায় গেরিলারা ব্ৰিত করছে টাঙ্গাইল ও হাডিঞ্জ সেতুর কাছে পাকফৌজকে। রংপুর-লালমনির হাটের সড়ক ও রেলপথ আবার অব্যবহার্য হয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৮ কিলােমিটার দূরে পাকফৌজ কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা রাস্তায় এগােনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বাঙলাদেশের আকাশ আক্ষরিত অর্থেই মেঘাবৃত। ফলে জঙ্গীফৌজ বিমানগুলি বিপন্ন ফৌজদের প্রয়ােজনীয় সাহায্য দিতে সক্ষম হয় নি।
আখাউড়ার রেলজংশন মুক্তিফৌজ দখল করলেও এবং পাকফৌজের ওপর অবিরাম মর্টার দখলেও পাকফৌজ কুমিল্লা দাউদকান্দি ঢাকা সড়কের ওপর দাউদকান্দি এবং এলিয়ট গঞ্জ এখনও দখলে রেখেছে। একটি সংবাদে প্রকাশ যে আখাউড়ার দক্ষিণ পশ্চিমে গঙ্গাসাগর সেতুর অপর দিকে একদল পাকফৌজকে এখনও আটকে রেখেছে।
সােমবার সকালে একদল পাকফৌজকে আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া রাস্তা ধরে শ্রীহট্টের দিকে যেতে দেখা গেছে। এখানে পাকবিমানগুলিকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লার দিক থেকে কালাে ধোয়া দেখা গেছে।
শালুটিকার বিমান বন্দরের তিন কিলােমিটার অঞ্চল বাদে পাকফৌজ সমগ্র শ্রীহট্টের ওপর থেকে নিরস্ত্রণ হারিয়েছে। শালুটিকারের উপর দিকে জঙ্গল অঞ্চলে মুক্তিফৌজ গােবিন্দ টিলা দখল করেছে। এই শহরের ওপর পাকফৌজ ৬ পাউণ্ডের গােলা বর্ষণে সক্ষম কামান ব্যবহার করছে, এখানে প্রায় ১৪শ পাক ফৌজ আছে।
বিভিন্ন রণাঙ্গনে নিয়ন্ত্রণ অক্ষুন্ন রাখার জন্য পাকফৌজ দুচোখে যা দেখছে তাই ধ্বংস করছে। বিশেষ করে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে।
আর সব থেকে বড় সংবাদ হলাে পাকজঙ্গী শাহী শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছ বে-সামরিক অধিবাসীরা দলে দলে গ্রাম ছাড়ছে।
রবিবার দিনই পাকফৌজ মেহেরপুর (কুষ্টিয়া জেলায়) দখল করেছে। মেহেরপুর ট্রেজারীর জনৈক কর্মচারী সােমবার জানান, শহরটি দখলের পর পাকফৌজ মুসলিম লীগের সমর্থকদের সাহায্যে দোকানপাট লুঠ করে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
যে পাকফৌজ গতকাল চুয়াডাঙ্গা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল তারা আবার শহরটিকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করছে।
শ্রীহট্টের কাছে চায়ের বাগান এবং শেখ ঘাটের বহু ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
কুমিল্লা জেলার অন্যতম ব্যবসায় কেন্দ্র এবং চাঁদপুরের ১৫ কিলােমিটার দূরবর্তী হাজিরগঞ্জে ১৭ এপ্রিল পাকফৌজ বেপরােয়া লুঠতরাজ করে। বাজার এবং এর সংলগ্ন বড়পাল গ্রামটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে।
তবে চাঁদপুরের স্টীমার জেটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে আছে। চাঁদপুরের সঙ্গে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, বরিশাল এবং খুলনার জলপথে যােগাযােগ ছিল। গত সপ্তাহে এখান থেকে পাকফৌজদের নিয়ে শেষ স্টীমার ছেড়ে গেছে। চাঁদপুরে গত ৭ এপ্রিল বিমান থেকে হামলা হয় এবং তার পরের দিন ৬২টি ট্রাক বােঝাই পাকফৌজ এই শহরে প্রবেশ করে।
সূত্র: কালান্তর, ২০.৪.১৯৭১