You dont have javascript enabled! Please enable it!

চুয়াডাঙ্গা মুক্ত : আখাউড়ার মুক্তিফৌজের পাল্টা আক্রমণ

রবিবার মুক্তিফৌজের পাল্টা আঘাত হানার দিন সাফল্যের দিন। আখাউড়া রেল জংশন শনিবার পাকফৌজ দখলে নিয়েছিল। রবিবার আগরতলা থেকে ইউ.এন.আই জানাচ্ছে, মুক্তিফৌজ এই গুরুত্বপূর্ণ রেল ও সড়ক জংশনে ভারী মর্টার থেকে অবিরাম গােলাবর্ষণ করছে। আখাউড়া থেকে তিন কিলােমিটার দূরে আখাউড়ার শ্রীহট্ট রাস্তার উপর আগমনগরে পাকফৌজের একটি গােটা কোম্পানি হয় হত বা আহত হয়ে অকেজো হয়ে গেছে।
রবিবার রাতে মুক্তিফৌজ কুষ্টিয়া জেলার মহকুমা শহর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত করে বলে ইউএনআই জানাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা ছিল বাঙলাদেশের সরকারের ঘােষিত রাজধানী।
আখাউড়ার গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশনটি দখলের পাকফৌজ রেলপথ মেরামতির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। আখাউড়া থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলপথ মেরামত করার জন্য স্থানীয় লােকদের বন্দুকের নল ঠেকিয়ে কাজ করতে বাধ্য করছিল। তিনদিনের লড়াইয়ে রেলপথেও গুরুতর ক্ষতি হয়।
রবিবার বিকালে এখানেই মুক্তিফৌজ-এর অবিরাম গােলাবর্ষণ শুরু হয়। ঐদিন সকালে মুক্তিফৌজ পরিকল্পিত পশ্চাদপসরণ করে। ঐ অঞ্চল থেকেই পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়। প্রাথমিক হিসেবে জানা গেছে, পাকফৌজের শতাধিক সদস্য হয় নিহত কিংবা গুরুতর আহত হয়েছে।
আগমনগরে মুক্তিফৌজের প্রত্যাঘাতের বদলা নেওয়ার জন্য পাকবিমান ঐ অঞ্চলে বােমা ফেলে বলে জানা গেছে।
বাঙলাদেশের প্রথম রাজধানী চুয়াডাঙ্গার নাম ঘােষণার পরই পাকফৌজি বিমানগুলি শহরের উপর হামলা চালায় এবং কার্যত শরহটি দখল করে। রবিবার এই শহরটি আবার মুক্তিফৌজের দখলে যায়।
পলায়নরত পাকফৌজকে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর রাস্তায় মুক্তিফৌজ এখনও বাধা দিচ্ছে। মেহেরপুরের উপর প্রচণ্ড গােলাবর্ষণ হয় এর ফলে রতনপুর, দেপুর, গােপীনাথপুর এবং মুজিবনগর থেকে লােক পালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ করা যায়, শনিবার এই মেহেরপুরেই স্বাধীন বাংলাদেশ এর জন্ম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘােষণা করা হয়।
পাকিস্তান রেডিও ঘােষণা করেছে যে, পাকফৌজ বিনা বাধায় বাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবেশ করেছে।
রেডিও আরও বলে যে, পাকসৈন্যরা চুয়াডাঙ্গা দখলে রেখে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে পশ্চিম বাঙলার মেহেরপুর সীমান্তেরর কাছে পৌঁছেছে। ঐ সংবাদে বলা হয়, ঢাকা শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে এসেছে। জনসাধারণ ব্যাপকভাবে কাজে যােগ দিচ্ছে, ক্রেতা ও বিক্রেতা সমাগমে শহরের দোকানপাট খুলেছে, পরিবহন ব্যবস্থা ও সচল। রেডিও আরও বলে যে, ঢাকা সহ চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ টেলিফোন ব্যবস্থা ঠিকভাবে চলছে।

সূত্র: কালান্তর, ১৯.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!