মুক্তিসেনাদের হাতে নাজেহাল হয়ে পাকসেনারা ভারতীয় এলাকায় গােলাবর্ষণ করছে
কৃষ্ণনগর, ১৮ জুন— বাঙলাদেশে মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানী সেনারা যতই ঘায়েল হচ্ছে ততই তারা ভারতীয় এলাকার মধ্যে গ্রামগুলির উপর গােলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। আজ সীমান্ত অঞ্চলে একটি পাক সামরিক বিমানকে চক্কার দিতেও দেখা যায়।
ইউএনআই প্রেরিত সংবাদে বলা হয়, গত রাতে পাকসেনারা ভারতীয় এলাকায় গােলাবর্ষণ করলে ফুলবাড়িতে একজন মহিলা সহ পাঁচজন অসামরিক ব্যক্তি জখম হন। পাকসেনারা বাঙলাদেশের পরাগপুর, কাঁদিপুর এবং ভবানীপুর থেকে করিমপুর থানার দহখােলা, ফুলবাড়ি এবং শিকারপুর গ্রামে গুলি- গােলা চালায়। এই আক্রমণে পাকসেনারা ৩ ইঞ্চি ও ৬ ইঞ্চি কামান এবং ভারী মেশিনগান ব্যবহার করে। আহতদের এখানকার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে নদীয়ার জেলা শাসক জানিয়েছেন।
গত ৩ দিনে ২০০ পাক সেনা খতম
মুজিবনগর থেকে সংবাদ প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, গত তিনদিনে এক বিরাট এলাকা জুড়ে মুক্তিযােদ্ধারা পাক সৈন্য ঘাঁটিগুলির উপর আক্রমণে চালিয়ে প্রায় ২০০ সেনা খতম করেছে।
স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র দাবি করে যে, মুক্তিযােদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে বিবিরবাজরে ১০ জন ং কসবায় ২৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ইয়াকুবপুর ও লাঙ্গলকোট এলাকায় ১৪ জন পাকিস্তানী নিহত ও ১৩ জন আহত হয়।
মুক্তিযােদ্ধারা শ্রীহট্টের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনাদের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে দিতে সক্ষম হয়। মাইন দিয়ে তারা একটি ট্রেন উড়িয়ে দেন। এখানে এক বিপজ্জনক লড়াইতে তারা শ্রীহট্টের লাটু ও মাধবপুরে ৪০ জন পাকসেনার মৃত্যু ঘটায়। অন্যান্য রণাঙ্গনেও প্রায় ১৫ জন ইয়াহিয়া সৈন্য নিহত হয়।
কোচ্ছন্দরের কাছে সাবদলপুর রেল স্টেশন গতকাল এক বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে পাকসেনা পরিবহনকারী ২টি রেল বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেই মুক্তিফৌজ কিছু বােমা রেখেছিল বলে জানা গেল। কুষ্টিয়াতে একটি সামরিক যানের উপর গতকাল মুক্তিসেনারা আক্রমণ চালালে ১৭ জন পাক সৈন্য নিহত হয়।
সূত্র: কালান্তর, ১৯.৬.১৯৭১