বাঙলাদেশে পাঞ্জাবী ও বালুচ সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ
মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে বিভিন্ন রণাঙ্গনে বহু পাক সেনা হতাহত
মুজিবনগর, ১৪ জুন (ইউএনআই) স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র থেকে আজ জানান হয়েছে যে, বাঙলাদেশের রংপুর, রণাঙ্গনে পাকসৈন্যদের মধ্যে পাঞ্জাবী ও বালুচীরা পুনরায় পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন।
সংবাদে বলা হয়েছে একটি গ্রাম আক্রমণ করার জন্য পাঞ্জাবী বাহিনীর সঙ্গে যেতে বালুচীরা অস্বীকার করলে তাদের মধ্যে ঐ সংঘর্ষ বাধে।
এর আগে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাতেও পাঞ্জাবী ও বালুচীদের মধ্যে ঐ ধরণের সংঘর্ষ হয়।।
আজ মুক্তিযােদ্ধারা নবাবগঞ্জের একটি টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকে পাক সেনাদের বিচ্ছিন্ন করে ১৫ জন যুবক-যুবতীর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। আগরতলার এক সংবাদে জানান হয়েছে, কয়েকদিন আগে শাহীবাজারের কাছে গেরিলারা বিদ্যুৎ সরবরাহ; লাইন কেটে দেওয়ার ফলে ঢাকা ও তার আশেপাশের অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
গত ৩ দিনে নােয়াখালি জেলার ফেনী রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিফৌজ ২ শত পাকসেনাকে নিহত করেছেন। কসবা অঞ্চলে তথাকথিত শান্তি কমিটির পাঁচজন সদস্য গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে। ঐ পাঁচ জনের মধ্যে কমিটির চেয়ারম্যান অন্যতম।
কুমিল্লা জেলার বিবিরবাজার অঞ্চলেও গেরিলাদের হাতে ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। এখানে গত এক পক্ষকাল ধরে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
গেরিলারা লাকসাম ও ফেনীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে লাঙ্গলকোটে ৬ জন পাকিস্তানীকে নিহত করেছেন।
কুমিল্লার চারনাতে গেরিলা ও পাকসেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ১২ জন পাকসৈন্য গতকাল খতম হয়েছে। ইয়াকুরিমুরে গতকাল আরাে ৮ জন পাক সৈন্য নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছে। বেগমগঞ্জের আর একটি টেকনিক্যাল ইন্সস্টিটিউট থেকে গেরিলারা একজন তরুণী ও ১৬ জন বাঙালী তরুণের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। এখানে খানেরা একটি ক্যাম্প তৈরি করেছিল। গেরিলাদের এখানে এক আকস্মিক আক্রমণে পাকসেনারা সব জিনিস পত্র ফেলে চম্পট দেয়।
কিছুদিন আগে আরেকটি গ্রামের গ্রামবাসীরা ৭৫ জন পাকসেনাকে ঘিরে ধরে তাদের হত্যা করেছেন বলে আগড়তলার সীমান্ত থেকে পাওয়া খবরে জানা গেল। গতকাল নােয়াখালির রামগঞ্জ রােডে গেরিলারা পাকসেনাদের একটি জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন। জীপের ৪ জন আরােহীই গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে।
ইছাখালি চৌকি দখল
মুক্তিফৌজ কমান্ডাে গত শনিবার মেহেরপুরের ৩ কিলােমিটার দূরে এক প্লাটুন পাকসেনাকে খতম করে ইছাখাল চৌকি দখল করে নিয়েছেন। ঐ দিন ব্রাহ্মণবাড়িতে গেরিলাদের আক্রমণে দুটি পাক মোেটর বােট ধ্বংস করে যায়।
যশোের রণাঙ্গনে সাতক্ষিরা, ফলকারা, হিজলদি, শনকারা ও বেনকিারি চৌকিগুলতে মুক্তিফৌজের প্রবল আক্রমণে বহু পাকসেনা নিহত হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ১৫.৬.১৯৭১