You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.02 | লুঠ-অত্যাচার অব্যাহত রাখার জন্য পাক সমরচক্রের নয়া চাল | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশে দু’ধরণের আধা সামরিক বাহিনী
লুঠ-অত্যাচার অব্যাহত রাখার জন্য পাক সমরচক্রের নয়া চাল

মুজিবনগর, ১ জুলাই (ইউএনআই) বাঙলাদেশের জঙ্গী প্রশাসক তাদের লুঠেরা নীতি বজায় রাখার জন্য নতুন নতুন জঙ্গীবাহিনী গঠন করার চেষ্টা করেও আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না। গেরিলা আক্রমণের আকস্মিকতায় পাকসেনাদের নাভিশ্বাস উপস্থিত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়ে শান্তি বাহিনীও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বেশ কয়েক ব্যাটেলিয়ন পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী এখানে মােতায়েন রাখা হয়েছে।
বাঙলাদেশের জঙ্গী প্রশাসক এখন এই নতুন তৈরি বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীকে পাকফৌজের সঙ্গে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিয়ােগ করছে। অন্যদিকে শান্তিবাহিনী গ্রামাঞ্চলগুলিতে লুঠতরাজ চালিয়ে ভারতের বুকে শরণার্থীদের চাপ অব্যাহত রাখার কূট কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে।
তাছাড়া এখানে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত আধা-সামরিক বাহিনীগুলি আমদানি করা হয়েছে এগুলি হল কুখ্যাত টচি, স্কাউট, খাইবার রাইফেলস, শজ্ঞ রেনজার প্রভৃতি ইউনিট। এই ইউনিটগুলিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমন্তবর্তী অঞ্চল পাহারার কাজে লাগানাে হত। এখন এদের জায়গায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাকফৌজের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
পাকফৌজের রক্তাক্ত হাতকে আরাে জোরদার করার জন্য এই সব আধা সামরিক বাহিনীগুলিকে বেপরােয়া লুঠ তরাজের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
গেরিলা ভীতি
যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলিতে এই সব বাহিনীদের সংযােগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের চেষ্টা গেরিলা আক্রমণ ও তৎপরতায় যত ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তত ক্ষিপ্ত হয়ে এরা লুঠতরাজে মাতছে।
গেরিলা তৎপরতা ছাড়া পাকফৌজদের চরম বিপাকে ফেলেছে বর্ষা। বর্ষায় বিস্তীর্ণ প্রান্তর জনমগ্ন হয়ে পড়ায় পাকিস্তানী ফৌজরা ভীষণ অসুবিধার মধ্যে পড়েছে। বেশির ভাগ পাকিস্তানি ফৌজের কাছে জল বাঘের চেয়ে ভয়ঙ্কর। কারণ অনেকে সাঁতার জানে না। জলে পাহারা দিতে পাকফৌজদের হিম্মতে কুলাচ্ছে
— বিশেষ করে গেরিলা বাহিনীর হাতে কয়েকটি নৌকাডুবি ঘটার পর থেকে জলাতঙ্ক পাকফৌজের বিভিষীকা দেখিয়ে দিচ্ছে।
কতগুলি অঞ্চলে আবার পাকফৌজরা বেসামরিক বেশবাসে চলাফেরা করছে। গেরিলাদের তীক্ষ্ণ নজর এড়াবার জন্য।
কয়েকটি স্থানে জানা গেছে গেরিলাদের আকস্মিক আঘাতের ভয়ে পাকফৌজরা সীমান্তের চৌকি ঘাঁটি ছেড়ে রাতে শিেির এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচছে।
পাকফৌজদের দুমাসের মাইনে বাকি
ইতিমধ্যে খবরে প্রকাশ, বাঙলাদেশে ৫০ ব্যাটেলিয়ন পাকিস্তানী ফৌজ রয়েছে। তারা ২ মাস থেকে মাইনে পাচ্ছে না। বিভিন্ন মহল থেকে ফৌজি বেতন চুকিয়ে দেবার মত প্রাণপণ চিৎকার শুরু হয়েছে। মাইনে না পাওয়ায় কয়েকটি গ্রাম অঞ্চলে ফৌজি দৌরাত্ম চরম আকারে দেখা দিয়েছে বলে প্রকাশ।

সূত্র: কালান্তর, ২.৭.১৯৭১