বাঙলাদেশের পূর্বাঞ্চল জুড়ে মুক্তিফোজের গেরিলা আক্রমণ সৈন্যবাহী নৌকা নিমজ্জিত :
বিভিন্ন থানা আক্রমণ : বহু বিশ্বসঘাতক ও পুলিশ নিহত
আগরতলা, ১ জুলাই- বাঙলাদেশের পূর্বাঞ্চল জুড়ে এবং ফরিদপুরের নদী বহুল অঞ্চলে মুক্তিফৌজের গেরিলাবাহিনীর তৎপরতা বেড়ে গেছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে খবর পাওয়া গেছে। ইউএনআই জানিয়েছে যে, গত সপ্তাহে বিভিন্ন সংঘর্ষে ৩০ জন পাকসৈন্য, ২ জন বিশ্বাসঘাতক ও ৭ জন পুলিশ গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে।
ফরিদপুর জেলায় গােপালগঞ্জের কাছে কিয়ালিপাড়ায় ৩টি নৌকা বােঝাই পাকসৈন্য মুক্তিফৌজের আক্রমণে জলমগ্ন হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় মাথাভাঙা গ্রামের কাছে লতালিয়া নামক স্থানে একটি মােটর বােট ডুবিয়ে দেবার ফলে প্রায় ৯০ জন পাকসৈন্য জলে ডুবে মারা গেছে।
ফরিদপুরে ৩টি থানা গেরিলাবাহিনীর দ্বারা আক্রন্ত হয়েছে ও ৩টি বেতার প্রেরক যন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলায় ফেকারহাট অঞ্চলে মুক্তিফৌজের গেরিলারা এই সপ্তাহের গােড়ার দিকে একজন অফিসারসহ ৩০ জন পাকসৈন্যকে গুলি করে হত্যা করে।
পতং থানা আক্রমণ করার সময় ৩ জন পুলিশ গেরিলাদের হাতে মারা পড়ে। ঐ থানার বেতার প্রেরক যন্ত্র নষ্ট করে ফেলা হয় এবং ৯টি গুলি ভরা রাইফেল গেরিলাদের হাতে পড়ে। সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঐ থানায় যে সমস্ত দেশী বন্দুক জমা পড়েছিল তার ৬০০টি বন্দুক নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
মাদারীপুরের লিবচরে গেরিলারা আরেকটি বেতার প্রেরক যন্ত্র নষ্ট করে ফেলে এবং একজন বিশ্বাসঘাতক তাদের হাতে নিহত হয়।
ফরিদপুরের নড়িয়া থানায় গেরিলাবাহিনী তৃতীয় বেতার প্রেরক যন্ত্রটি নষ্ট করে, এখানেও ৪ জন পুলিশ ও বিশ্বাসঘাতক নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে আলি মহম্মদ মুন্সী অন্যতম।
কুমিল্লা অঞ্চলে যে মোেটর বােটটি মাঝ দরিয়া সৈন্য দিয়ে ডুবেছে তাদের খোঁজ করতে একটি হেলিকপ্টার পাঠান হয়। হেলিকপটার থেকে কোন জীবনের চিহ্ন লক্ষ করেনি।
গত ২৯ জন কুমিল্লা জেলায় ইয়াকুবপুরের পাকসৈন্য শিবিরে গেরিলা আক্রমণ হয়। সেখানে ৮ জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে। আখাউড়ার কাছে মুকুন্দপুর পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।
আখাউড়ার কাছে মুকুন্দুপুর অঞ্চলে গেরিলাদের আক্রমণে ৯ জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।
চৌধিয়াগ্রামে আকস্মিক গেরিলা আক্রমণে ৫ জন পাকসৈন্য নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে এবং ২ জন বিশ্বাসঘাতক মারা গেছে।
কসবা অঞ্চলে গঙ্গাসাগরের কাছে একদল পাকসৈন্য গেরিলা আক্রমণের শিকার হয় এবং একটি জীপ ধ্বংস হয়।
ঢাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ ও কালিগাঁও এর মাঝামাঝি এক জায়গায় ২টি বৈদ্যুতিক যােগাযােগ ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বামুসুচি ও লাকসামের মধ্যে বৈদ্যুতিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ২.৭.১৯৭১