You dont have javascript enabled! Please enable it!

ময়মনসিংহ-বেগুনবাড়ী রেলসেতু বিধ্বস্ত মুক্তিফৌজের দখলে ৭০টি রাইফেল
(কালান্তর প্রতিনিধি)

ময়মনসিংহ সীমান্ত (বাঙলাদেশ) ২৩ জুলাই- গত এক সপ্তাহের মধ্যে বাঙলাদেশের দুধর্ষ গেরিলা ফৌজ ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এক ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। মুক্ত অঞ্চল তাকে স্থায়ী ঘাঁটিতে পরিণত করার কঠিন শপথ নিয়েই আজ মুক্তিফৌজ পাক বাহিনীকে সস্ত্রম্ভ করে তুলেছে।
ময়মনসিংহ—বেগুনবাড়ির বিখ্যাত রেল সেতুটি মুক্তিফৌজের একটি গেরিলা স্কোয়াড সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। ফলে রেলপথে ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর বাহাদুরাবাদ জগন্নাথগঞ্জ হয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সহজ যােগাযোেগ পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
গত ১৯ জুলাই দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত একটি গ্রামে সন্ধ্যার ও বদর বাহিনী গঠন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
পাক দখলিকৃত এলাকার অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। স্বাভাবিক ব্যবসাবাণিজ্য লেনদেন অচল। এদিকে কৃষক সাধারণ যাতে মুক্তিফৌজের উপর বিরূপ হয়ে উঠে এবং সরকারী খয়রাতির উপর নির্ভরশীল হয় সেই উদ্দেশ্যে পাকবাহিনী রাস্তার দু’ধারের বিস্তর ফসলশুদ্ধ জমি সম্পূর্ণভাব জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মুক্তিফৌজের প্রচণ্ডতম আক্রমণের সামনে সদাসন্ত্রস্ত ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনী ক্ষ্যাপা কুকুরের মতাে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আজ এক নতুন পর্যায়ে অগ্রসর হয়ে চলেছে। বিগত ২২ এপ্রিল পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামরত মুক্তিফৌজ সাময়িক ও কৌশলগত পশ্চাদসরণের পর মে মাসের শেষ সপ্তাহে থেকে যে বিরামহীন পাল্টা প্রতিরােধ ও আক্রমণ পরিচালনা করেছে তা জাতীয় মুক্তিআন্দোলনের ইতিহাসে যেমন অভূতপূর্ব তেমনি বিপুল সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে এনেছে।
ময়মনসিংহ টাঙ্গাইলে মুক্তিফৌজ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর তত্ত্বাবধায়কের পক্ষ থেকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে এক ছাপানাে নির্দেশনামা প্রচারিত হয়েছে। এই নির্দেশনামায় বলা হয়েছে :
(১) কোনাে বাঙালী পশ্চিমী সৈন্যের সঙ্গে এবং তথাকথিত পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে কোনাে প্রকার সহায়তা করতে পারবে না। সহায়তাকারীদের নাম মুক্তিবাহিনীতে পৌঁছে দিন।
(2) মরণাস্ত্র এবং যুদ্ধের কোনাে হাতিয়ার থাকলে মুক্তিবাহিনীকে পৌঁছে দেবেন, অন্যথায় চরম শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অস্ত্র জমা দিলে শাস্তি হবে না।
(৩) ৫০০/১০০ তে শত টাকার নােট চলবে এবং কেউ নােট নিতে অস্বীকার করলে আইনতঃ দণ্ডনীয় হবে।
এমনিভাবে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পশ্চিমে যমুনা নদীর তীর থেকে পূর্বে সুরমা নদী পর্যন্ত পাক অধিকৃত অংশে মুক্তিফৌজের এক বিরামহীন অভিজ্ঞতা চলছে। এই সংগ্রামের মধ্যেই মুক্তিফৌজ নিয়মিত এলাকার দ্রুত বিস্তৃতি লাভের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এবং পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে শেষ আঘাত হানার দিনও ঘনিয়ে আসছে।

সূত্র: কালান্তর, ২৯.৭.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!