You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিফৌজের বাঙলাদেশ দখলকে অজুহাত ধরে ভারত আক্রান্ত হলে পাল্টা আঘাত দেব
ইয়াহিয়ার হুমকীর জবাবে শ্রী শরণ সিং

নয়াদিল্লী, ২০ জুলাই (ইউএনআই) মুক্তিফৌজ যদি বাঙলাদেশে কিছু অংশ মুক্ত করে আর সেই অজুহাতে পাকিস্তান যদি ভারত আক্রমণ করে তবে প্রতিরােধ করতে আমরা প্রস্তুত আছি আজ লােকসভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী শরণ সিং সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছেন।
“ভারত যদি পূর্ববাঙলার কোন অঞ্চল দখল করে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘােষণা করবে বলে পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুমকীর সংবাদ সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মন্তব্য করছিলেন।
শ্রী সিং বলেন, কিছুকাল ধরেই পাকিস্তান সরকার একথা বলেই পৃথিবীকে ধোকা দিতে চাইছেন যেন মূল সমস্যা ভারতকে নিয়েই বাঙলাদেশের জনগণ যেন কোন ব্যাপারই নয়। আসলে পাকিস্তান সরকার মূল সমস্যা থেকে পৃথিবীর চোখ অন্যদিকে ফেরাতে চাইছেন।
শ্রীসিং মনে করেন, পাকিস্তান সরকার যতদিন না বাঙলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোন চুক্তিতে আসছেন না ততদিন মুক্তিফৌজের তৎপরতা চলতে এবং বাড়তে বাধা। আর মুক্তিফৌজের পক্ষে কিছু কিছু অঞ্চল মুক্ত করাও কিছু অসম্ভব হয়।
তিনি পাকিস্তান সরকারকে এই মর্মে সর্তক করিয়ে দেন যে, শেখ মুজিববের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ উন্মাদ কাজ হবে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াইয়া খান নাকি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরার সঙ্গে আলােচনা বৈঠকে মিলিত হতে ইচ্ছুক- এ সংবাদ সম্পর্কেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সুস্পষ্ট জবাব : আসলে বৈঠক হওয়া দরকার শেখ মুজিবর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মধ্যে কারণ এতে। ভারত ও পাকিস্তানের সমস্যা নয়। তবে এ বৈঠকের ব্যাপারে দরকার হলে ভারত মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত শ্ৰী সিং জানান।
শ্রী সিংয়ের চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আপত্তি নেই। তবে এ এক পক্ষের আগ্রহের ব্যাপার নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চীন-মার্কিন মিতালী সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মন্তব্য করেন, উক্ত দু’দেশের মধ্যে সমঝােতা হােক তা আমরা চাই। তবে এই সমঝােতা যদি এই ভূভাগে দখল বিস্তারের প্রচেষ্টা হয় তা ভারত কখনও মেনে নিতে পারে না। চীন-মার্কিন মিতালীর ফলে ভারত সহ এ অঞ্চলের আরাে কটি দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দেন নি।
শ্রীশরণ সিং দাবি করে দুটি বাদে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দিনের পর দিন আরাে গাঢ় হচ্ছে। তিনি জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বােঝাপড়া গভীরতর হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা উচিত দেখা উচিত কোন ভিত্তিতে দুদেশ ভাগ হয়েছিল। অন্যদিকে পাকিস্তানকে অনেকগুলাে বিদেশী রাষ্ট্র মদত দিচ্ছে।
আজ লােকসভায় ডি এমকে নেতা শ্রী কে মােনহরম, নির্দল সদস্য শ্রী ভি কে কৃষ্ণমেনন গতিশীল পররাষ্ট্র নীতি দাবি করেন। পিএসপি নেতা শ্রী সমর গুহ অবিলম্বে বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দানের দাবি পুনরায় সােচ্চার করেন। কোন কোন সদস্য ভারতে পররাষ্ট্র নীতি ব্যর্থতার জন্য শ্রীশরণ সিংকে দায়ী করতে নারাজ হন। প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রীদীনেশ সিং দুদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চীনের সঙ্গে আলােচনা শুরু করতে বলেন। আজ পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যয় মঞ্জুরী দাবি নিয়ে আলােচনাকালে এসব মন্তব্য করা হয়।

সূত্র: কালান্তর, ২১.৭.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!