পাকফৌজ দু’কোটি পদধ্বনি : তবু মানুষ মাথা নত করেনি
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ১৭ জুলাই (ইউএনআই) ইয়াহিয়া ফৌজের বর্বরতার ফলে আজ বাঙলাদেশের মধ্যে ২ কোটি মানুষ গৃহহারা হয়ে বনে-জঙ্গলে এবং অন্যের বাড়িতে রয়েছেন। আর এরই পাশাপাশি সারা দেশ জুড়ে নেমে আসছে আকাল দুর্ভিক্ষ।
কিন্তু ব্যাপক সন্ত্রাস সত্ত্বেও বাঙলাদেশের মানুষ ইয়াহিয়া ফৌজের বর্বরতার কাছে মাথা নত করেন নি।
বাঙলাদেশ থেকে সদ্য আগত আজীবন স্বাধীনতা সংগ্রামী জনৈক প্রবীণ নেতা আজ এক সাক্ষাৎকারে এই কথা জানান।
তিনি বলেন, জঙ্গী সেনাদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, গৃহদাহ ও উৎপীড়নের মুখেও বাঙলাদেশের মানুষ একে অপরকে সাহায্য করার জন্য সর্বতােভাবে এগিয়ে আসছেন ধর্ম বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে। এত অত্যাচার সত্ত্বেও ইয়াহিয়া চক্র আজো বাঙলাদেশে কোনও প্রশাসন চালু করতে পারে নি। সমস্ত কলকলকারখানা, স্কুল-কলেজ, যানবাহন, কোর্ট-কাছারি আজো বন্ধ। সেনাবাহিনী শুধু সন্ত্রাস আর বর্বরতার রাজত্বই সৃষ্টি করতে পেরেছে।
উক্ত প্রবীণ বিপ্লবী জানান, পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবী সৈন্য আর তাদের তাঁবেদার ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর হাতে সমস্ত মানুষের জীবন ও সম্পত্তি এবং নারীর ইজ্জত বিপন্ন।
কিন্তু এরই পাশাপাশি রয়েছে মুক্তিফৌজের দুর্বার প্রতিরােধ। তাদের সন্ত্রাসের ফলে, যেমন গণআন্দোলনের (আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি) কর্মীদের এবং সংখ্যালঘুদের আত্মগােপন করতে হচ্ছে, তেমনি মুক্তিফৌজের প্রতিরােধের মুখে ইয়াহিয়া ফৌজের দালালদেরও জনতার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
মুক্তিফৌজের প্রতিরােধ ও তার পিছনে ব্যাপক গণ-সমর্থন সত্ত্বেও যে এখনাে লক্ষ লক্ষ মানুষ ওপার বাঙলা থেকে এই বাঙলায় এসে আশ্রয় নিচ্ছেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এই সব মানুষ গৃহহারা, নিরন্ন ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, সর্বোপরি রয়েছে প্রতি মুহূর্তে জীবন ও সম্ভম হারাবার আশঙ্কা। তাই তারা আপাতত নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় চলে আসছেন। এখনাে কয়েক লক্ষ মানুষ আশ্রয় লাভের আশায় ভারতে আসবাব পথে।
যারা বাঙলাদেশে এখনাে রয়েছেন, তাদেরও আজ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন বিপর্যস্ত, গােটা দেশের সামনে এখন দুভিক্ষের কালােছায়া।
সূত্র: কালান্তর, ১৮.৭.১৯৭১