গত ১৫ দিনে সাতক্ষীরার সাড়ে ৬৩ বর্গ মাইল মুক্ত
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ১৬ সেপ্টেম্বর (ইউএনআই)-১৫ দিনে খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার সাড়ে ৬৩ বর্গমাইল অঞ্চল থেকে মুক্তিবাহিনী খান সেনাদের হটিয়ে দিয়ে মুক্ত এলাকা স্থাপন করেছে। গতকাল টাকীতে এই তথ্য বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া গেল ঐ একই সময়কালের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ১৯৭টি এপি মাইন (যেগুলি পাক বাহিনী পুঁতে রেখে ছিল) তুলে নিয়ে এসেছে, ৩ টন ওজনের চারটি পাক সামরিক গাড়ি ধ্বংস করেছে এবং তিনটি সীমান্ত চৌকি দখল করেছে।
তাছাড়া আরও জানা গেল, মুক্তিবাহিনীর হাতে ১৭টি রাইফেল এবং ২,০০০টি ৩০৩ বুলেটসহ ৩০জন রাজাকার বন্দী হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে ঐ অঞ্চলের রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মােটামুটি সহযােগিতা করছে।
বসিরহাট মহকুমার হাসপাতালে পাকবাহিনীর গুলিতে আহত খুলনা জেলার ভবানীপুর গ্রামের রুহুল আমিন জানালেন, ওপারে খান সেনারা মেয়েদের উপর ব্যাপক অত্যাচার করছে। তিনি আরও বললেন, কোন খাওয়া-দাওয়া পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের গ্রামে চাল আসত মাধবকাঠি থেকে। এখন ‘আইডেনটিটি কার্ড’ না দেখালে কেউ রেশনে চাল পাচ্ছে না।” ১৪ তারিখ ভােররাত্রে পাকবাহিনী রুহুল আমিনের বাড়ি লক্ষ্য করে গােলাবর্ষণ করে। বারান্দায় শায়িত রুহুল আমিন ও তার আব্বা আহত হন। মুক্তিফৌজের জমাদার, হাবিলদাররা রুহুল আমিনকে সকালে হাকিমপুর পৌঁছে দেয়। ওঁর আব্বা এখনও বাড়িতেই।
খুলনা জেলার কালীগঞ্জ থানার ধলবেড়ে মদনপুরে গ্রামের ১০ বছর বয়সের কিশাের নীলমনি নাথ ঠাকুরমার সঙ্গে গ্রামে ফিরে গিয়েছিল ঠাকুরমার গরুটা খুঁজতে। “ঠাকুরমার মায়া তাে তাই। তা বেশিদূর যেতে হল না। খানেদের একটা ক্যাম্পের (পরিত্যক্ত) সামনে মাইন পোঁতা ছিল। তাতে পা লেগি ঠাকুর মা সেখােনেই মরি গেল। আমিও পাড়ি গেলাম।” উপুর হয়ে শুয়ে আছে নীলমনি। তার পায়ে ও পিঠে অজস্র ক্ষত চিহ্ন।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে যশাের জেলার কামারগাঁ গ্রামের বৃদ্ধা মানিক মণ্ডল ডুকরে কেঁদে উঠলেন“সন্ধ্যাবেলা ঘরের বারান্দায় বসেছিলাম। ওরা বাড়ির মধ্যে ঢুকে মারল। কোমরে গুলি লেগিছে।”
খান সেনারা যশাের জেলার শিকারী গ্রামের দুবছরের শিশু বাহান আলীকেও রেহাই দেয় নি। বনগাঁ হাসপাতালে মামার হাত ধরে বসে আছে সে। বা হাতে ব্যান্ডেজ। হানাদারদের নৃশংসতার সাক্ষ্য।
সূত্র: কালান্তর, ১৭.৯.১৯৭১