You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভাষা আন্দোলনে পটুয়াখালী
আন্দোলনে পিছিয়ে থাকেনি যে জনপদ

পটুয়াখালী ছিল পূর্ব দক্ষিণবঙ্গে অবস্থিত পাকিস্তান আমলের আরেকটি বৃহৎ জেলার একটি মহকুমা। ভাষা আন্দোলনের ঢেউ পূর্ববর্তী প্রদেশের অন্যান্য মহকুমা শহরের মতাে পটুয়াখালীকেও ভালােভাবেই স্পর্শ করে। যে কারণেই হােক ১৯৪৮- এর মার্চের ভাষা আন্দোলনের প্রভাব পটুয়াখালীতে পৌছায়নি।
১৯৫১ সালে পূর্ববঙ্গীয় যুবকদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও তৎসংক্রান্ত আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ ও সক্রিয় করতে কমিউনিস্ট পার্টির নেপথ্য চেষ্টায় পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ নামে যে সংগঠনটি গঠিত হয়, বিস্ময়করভাবে তার ব্যাপক সাংগঠনিক বিস্তার ঘটে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ প্রদেশের শহরগুলােতে। ব্যতিক্রম ছিল না বরিশাল জেলা এবং তার মহকুমা, বিশেষভাবে পটুয়াখালী। প্রসঙ্গত, আরও একটি উল্লেখযােগ্য তথ্য হলাে ১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে ঢাকাসহ প্রদেশের অধিকাংশ শহরে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ছিল উল্লেখযােগ্য ভূমিকা।
পটুয়াখালীতেও তাই। এখানে মহকুমা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবদুল খালেক আন্দোলন সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন এবং তা শুরু থেকেই। ১৯৯৩ সালে ভােরের কাগজ-এর ভাষা আন্দোলনবিষয়ক প্রতিবেদক কাজল বরণ দাস লেখেন যে ১৯৫১ সাল থেকেই খন্দকার খালেক পটুয়াখালীতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন গড়ে তুলতে তৎপর হয়ে ওঠেন।
এ প্রক্রিয়ায় খন্দকার খালেককে আহ্বায়ক মনােনীত করে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি। এতে সদস্য হিসেবে ছিলেন আবদুল করিম, এমদাদ আলী, আজহার উদ্দিন, আবুল হােসেন, দলিল উদ্দিন, রাখালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মােসলেম আলী প্রমুখ।
ঢাকায় ঘােষিত এবং কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সমর্থিত একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি নির্ধারিত হয়েছিল গােটা প্রদেশে পালনের জন্য। পটুয়াখালীতে একুশের কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয় স্থানীয় সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে। প্রধান সক্রিয় ব্যক্তি খন্দকার খালেক। এ উপলক্ষে খন্দকার খালেক ‘একুশের রক্ত শপথ’ নামে একটি প্রচারপত্র রচনা করে সাঈদ উদ্দিন মিয়ার আর্ট প্রেস থেকে ছেপে বিতরণ করেন।
এর জন্য আর্ট প্রেসকে অনেক খেসারত দিতে হয়। কিন্তু তাতে দমেনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। বরং প্রতিবাদ আরও জোরালাে হয়ে ওঠে। ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার এক বিশাল শােভাযাত্রা বের হয়। তাতে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় তীব্র উচ্চারণে ও স্লোগানে। শােভাযাত্রা শেষে বিপুল জনসমাগমে সভার অনুষ্ঠান। তাতে সভাপতি খন্দকার খালেক। বক্তা সৈয়দ আশরাফ, এ টি এম ওবায়দুল্লাহসহ ছাত্রনেতারা। এ আন্দোলনে আবদুল লতিফ ঢাকাপটুয়াখালী যাতায়াতের মাধ্যমে স্থানীয় আন্দোলনে জ্বালানি যােগ করেছেন নানাভাবে।
২৫ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। অনুষ্ঠিত হয় জনসভা ও শােভাযাত্রা। একই ঘটনা ঘটে ৫ মার্চের হরতালের বেলাতেও। দোকানপাট, যানবাহন চলাচল বন্ধ। বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এককথায় অচল পটুয়াখালী শহর।
আগেই বলা হয়েছে, যে কারণেই হােক পটুয়াখালীর ভাষা আন্দোলনে সর্বোত্তম ভূমিকা রেখেছেন যুবলীগের নেতারা। এদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেছেন। কারও ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে, যেমন আবদুল লতিফ। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন আবুল হাশেম। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য একটি তথ্য- ঢাকায় ৫ মার্চের পূর্বঘােষিত হরতাল পুরােপুরি সফল না হলেও ঢাকার বাইরে শহরগুলােতে ৫ মার্চের হরতাল ও প্রতিবাদী কর্মসূচি সাফল্যের সঙ্গে পালিত হয়েছে, যেমন পটুয়াখালী।
এখানে শহীদ মিনার প্রথম তৈরি হয়েছে ১৯৫৭ সালে সরকারি মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে। এরপর নানা ঘটনার টানে ১৯৬৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কলেজ প্রাঙ্গণে নির্মিত হয় নতুন শহীদ মিনার। সর্বশেষে পৌরসভা চত্বরে হয় প্রধান শহীদ মিনারটির নির্মাণ।

সূত্র: ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া – আহমদ রফিক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!