ভাষা আন্দোলনে ঠাকুরগাঁও
অখ্যাত মহকুমাও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়
বাম রাজনীতি-তৎপর দিনাজপুর জেলার মহকুমা শহর ঠাকুরগাঁও ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। তবে যে কারণেই হােক, এখানে ভাষা আন্দোলনের মূল প্রবাহ ছিল ১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে। তবে ভাষা আন্দোলনবিষয়ক সচেতনতার কারণে ১৯৫১ সালে মুসলিম লীগ মন্ত্রী হাসান আলীর ঠাকুরগাঁওয়ে আগমন উপলক্ষে মিছিল করে তাকে কালাে পতাকা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের সূচনা ঘটান স্থানীয় বিশিষ্ট আইনজীবী ফজলুল করিম। আন্দোলনের কারিগর স্থানীয় ছাত্রসমাজ।
ছােট ছােট খণ্ড মিছিল হঠাৎ হঠাৎ পথে নেমে এসে আবার উধাও হয়ে যেত, মূলত অবাঙালি মহকুমা প্রশাসক আলতাফ গওহরের দমননীতির কারণে। মন্ত্রীকে মিছিল করে কালাে পতাকা দেখিয়ে অপমান করার দায়ে মহকুমা প্রশাসকের নির্দেশে আইনজীবী ফজলুল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের কারণে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। রাতের আঁধারে শুরু হয়ে যায় শহরের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী স্লোগানসংবলিত পােস্টার সাটার কাজ। প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে বৈঠক সম্ভব ছিল না, তাই সেগুলাে হতাে রাতে, গােপনে। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে একুশের ভাষা আন্দোলন।
ইতিপূর্বে আটক অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন ফজলুল করিম। কিন্তু সরকারবিরােধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র হওয়ার কারণে তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। একুশের (১৯৫২) আন্দোলনে স্থানীয় ছাত্রদের ব্যাপক অংশগ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় প্রশাসন আরও কঠোর অবস্থান নেয়। গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা রাজনীতিবিদ দবিরুল ইসলামকে।
প্রশাসনের কৌশলী পরিকল্পনায় তাঁদের মহকুমা কারাগারে না রেখে জেলা সদর দিনাজপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সেখানে ফজলুল করিমের দেখা হয় কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে, যেমন কৃষকনেতা হাজী মােহাম্মদ দানেশ।
দিনাজপুর জেলে থাকাকালে সেখানকার জেলর ‘বন্ড’ সই করে মুক্তি কেনার প্রস্তাব দিলে দবিরুল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এমনই ছিল ভাষা আন্দোলন, বিশেষভাবে একুশের সংগ্রামী, আদর্শিক চেতনা এবং তা শুধু ঠাকুরগাঁওয়েই নয়, ছিল সমগ্র প্রদেশব্যাপী ভাষাসংগ্রামীদের মধ্যে, ব্যতিক্রম হয়তাে দু-একজন।
সূত্র: ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া – আহমদ রফিক