You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভাষা আন্দোলনে চট্টগ্রাম
রাজনীতি-সংস্কৃতির যৌথ প্রেরণায় ভাষা আন্দোলন

বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের প্রধান বিভাগীয় জেলা চট্টগ্রাম রাজনৈতিক সংগ্রামের এক গৌরবময় ঐতিহ্য ধারণ করেছে। অবিভক্ত ভারতে স্বাধীনতাসংগ্রামে রয়েছে এর বীরত্বপূর্ণ আত্মদানের ভূমিকা। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগাত দখল এবং জালালাবাদ পাহাড়ে ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে অসম শক্তির সশস্ত্র লড়াই, ইউরােপিয়ান ক্লাবে প্রীতিলতার আক্রমণ এবং আত্মহত্যা। মাস্টারদা সূর্য সেন থেকে কল্পনা দত্ত এবং মাস্টারদার বীর সহযােদ্ধাদের রক্ত ও স্মৃতিধন্য কর্ণফুলীবিধৌত বীর চট্টগ্রাম শহর। প্রকৃত পরিচয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে বঙ্গের প্রবেশদ্বার।
চট্টগ্রাম ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে মিশ্র চরিত্র বহন করলেও এর সংগ্রামী চরিত্র প্রতিবাদনির্ভর। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার (১৯৪৭-এর আগস্ট) পর চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সম্প্রদায়বাদী প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রাধান্য সত্ত্বেও এর সংস্কৃতিচর্চায় দেখা গেছে প্রতিবাদী প্রগতিশীলতার প্রকাশ। চল্লিশের দশকের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রগতিবাদী প্রকাশ নিঃসন্দেহে প্রভাব রেখেছে চট্টগ্রামের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে, এবং তা পাকিস্তানবাদী বাধা-বিরােধের মধ্যেই।
১৯৪৭-৪৮ সময় পর্বের এবং অব্যবহিত পরে প্রগতিবাদী চেতনার নেপথ্যে ছিল কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক তৎপরতা, স্থানীয় প্রগতিবাদী কবি, শিল্পী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদের তাৎপর্যপূর্ণ কর্মনিষ্ঠ প্রয়াস। যেমন প্রগতি লেখক সংঘ, সীমান্ত সাহিত্য পত্রিকা বা অনুরূপ সংগঠন। এদের প্রচেষ্টা ছিল সমাজে। অসাম্প্রদায়িক, গণতন্ত্রী ও প্রগতিবাদী সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতির প্রকাশ ঘটানাে।
স্বভাবতই পূর্ববঙ্গে সংঘটিত ১৯৪৮-এর মার্চের ভাষা আন্দোলনের প্রকাশ ঘটেছে চট্টগ্রামে, বিশেষভাবে স্বনামখ্যাত চট্টগ্রাম শহরে। ১৯৪৮-এর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান গণপরিষদের বাংলাবিরােধী ভূমিকার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম শহরেও ১১ মার্চ পালিত হয় ধর্মঘট বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা।
চট্টগ্রামে সে সময় সম্প্রদায়বাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগদলীয় রাজনীতি ও তাদের প্রভাবিত প্রশাসনের প্রবল প্রভাবের কারণে ১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলন চট্টগ্রামে আশানুরূপ সাফল্য লাভ করেনি। প্রগতিবাদী কর্মীরা এবং সাহিত্যকর্মীরা মুসলিম লীগ ও তাদের মদদপুষ্ট মাস্তানদের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। যেমন মাহবুব-উল আলম চৌধুরী, শহীদ সাবের, গোপাল বিশ্বাস প্রমুখ। চট্টগ্রামের সন্তান স্বনামখ্যাত সাহিত্য গবেষক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাও পণ্ড হয়।
১১ মার্চের আন্দোলনে চট্টগ্রাম ও আশপাশের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা
অংশগ্রহণ করে। যথারীতি ছাত্রধর্মঘট, ক্লাস বর্জন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্লোগান লক্ষ করা যায়। বিক্ষোভ আন্দোলন ১৪ মার্চ পর্যন্ত একটানা চলে। আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ করে বিচলিত প্রশাসন ১৪ মার্চ এক সপ্তাহের জন্য ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ১৯৪৮-এর মার্চে তার বহু উল্লেখিত ঢাকা সফর ও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘােষণার পর চট্টগ্রামে যান। সেখানে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে পূর্বোক্ত ছাত্র ও অন্যদের চেষ্টায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘােষণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয় (শরীফ শমশির চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলন)।
একই সূত্রমতে, ১৯৫০-এ কেন্দ্রীয় সরকারের মূলনীতি কমিটির উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশের বিরুদ্ধে ঢাকায় অনুষ্ঠিত রাজনীতিক ও ছাত্রদের প্রতিবাদী আন্দোলনের মতাে চট্টগ্রামেও প্রতিবাদী আন্দোলন দেখা দেয়। রফিউদ্দিন সিদ্দিকীকে সভাপতি এবং রেলওয়ে শ্রমিকনেতা মাহবুবুল হক ও কবি সম্পাদক মাহবুব-উল আলম চৌধুরীকে সম্পাদক (ভিন্ন সূত্রে আহ্বায়ক) মনােনীত করে একটি ভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির উদ্যোগে লালদীঘি ময়দানে একটি জনসভা হয়। সেই উপলক্ষে হয় মিছিল।
এ সময় চট্টগ্রামে বাংলা ভাষাবিরােধীরাও যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। ফজলুল কাদের চৌধুরীর (ফকা চৌধুরী) মতাে কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিকসহ জুলফিকার আলীদের মতাে জনাকয় মাওলানা রাষ্ট্রভাষা উর্দু ও আরবি হরফে বাংলা লেখার পক্ষে জোরদার প্রচার চালিয়েছেন। অন্যদিকে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শ্রমিক ফ্রন্টে ছিল প্রগতিশীলদের প্রাধান্য। এঁরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে এবং আরবি হরফে বাংলা লেখার বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন।
এঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য শ্রমিকনেতা মাহবুবুল হক, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, সাহিত্যকর্মী মাহবুব-উল আলম চৌধুরী, সুচরিত চৌধুরী, গােপাল বিশ্বাস, শহীদ সাবের প্রমুখ স্থানীয়দের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যাপক কথাশিল্পী শওকত ওসমান। এমনকি অধ্যাপক ফেরদৌস খানও ছিলেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার সমর্থক। তিনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সে সময় একটি প্রবন্ধও লেখেন। ‘বাংলা বনাম আরবি হরফ’। তাই এদের সমর্থনে ছাত্ররা ১৯৪৯ সালে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এমন এক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই চট্টগ্রামের উল্লিখিত সাহিত্য সংস্কৃতিসেবীরা এবং প্রান্তিক নবনাট্য সংঘ’র উদ্যোগে ১৯৫১-এর মার্চে সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা ছিল পুরােপরি প্রগতিশীল চেতনার। সীমান্ত পত্রিকাগােষ্ঠীও এতে অংশ নেয়। সম্মেলনের মূল সভাপতি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদ্বয় চৌধুরী হারুনুর রশিদ ও মাহবুব-উল আলম চৌধুরী। সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শওকত ওসমান ও সাইদুল হাসান।
এ সম্মেলন ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে একটি বিরাট সহায়ক শক্তি। এ সফল সম্মেলন উদ্বোধন করেন বেগম সুফিয়া কামাল। প্রধান অতিথি কলকাতা থেকে আসা একটি বড়সড় সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গী সত্যযুগসম্পাদক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার। ওই দলে ছিলেন সলিল চৌধুরী, দেব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র প্রমুখ সংগীতশিল্পী। আর সিলেট থেকে আসেন নওবেলাল সম্পাদক মাহমুদ আলী এবং ঢাকা থেকে আলাউদ্দিন আল-আজাদ প্রমুখ তরুণ সাহিত্যকর্মী।
এ সম্মেলনের বড় অর্জন অসাম্প্রদায়িক, গণতন্ত্রী, প্রগতিবাদী আবহ তৈরি এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ ও আরবি হরফে বাংলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রস্তাব গ্রহণ। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশীলতা ও সন্ত্রাসী দমননীতির বিরুদ্ধে এ সম্মেলন ছিল একটি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যম।
ঢাকায় একুশের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের ঘটনাবলির প্রভাব কমবেশি পড়েছিল পূর্ববঙ্গের জেলা ও মহকুমা শহরগুলােতে। সে আগুন ছড়িয়ে গিয়েছিল প্রদেশের সবখানে, এমনকি গ্রামাঞ্চলে, যে তথ্য প্রসঙ্গক্রমে বহু উদ্ধৃত। ব্যতিক্রম ছিল না চট্টগ্রাম। তাই ঢাকার অনুসরণে এখানেও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এবার পরিষদের আহ্বায়ক তরুণ কবি মাহবুব-উল আলম চৌধুরী এবং যুগ্ম সম্পাদক পূর্বোক্ত শ্রমিকনেতা চৌধুরী হারুনুর রশিদ এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা এম এ আজীজ। এ কমিটি ছিল ব্যাপক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রতিনিধিভিত্তিক। দু-একটি উদাহরণ উল্লেখযােগ্য- যেমন জহুর আহমদ চৌধুরী, ডা. আনােয়ার হােসেন, রুহুল আমীন নিজামী, গােপাল বিশ্বাস, সুনীল মহাজন প্রমুখ আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
এ আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষক, লেখক, শিল্পী বা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও যুবলীগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দিক থেকে অংশ নেয় আওয়ামী মুসলিম লীগ, গণতন্ত্রী দল এবং নেপথ্যে কমিউনিষ্ট পার্টি। ঢাকার মতােই রিকশা শ্রমিক ছিল সহযােগী, তবে বিশেষভাবে রেল শ্রমিক ইউনিয়ন। ছিল তমদ্দুনন মজলিস এবং যুব ব্রিগেড নেতা কৃষ্ণগােপাল সেন।
প্রসঙ্গত, আরও একটি তথ্য দিয়েছেন শরীফ শমশির। তার তথ্যমতে চট্টগ্রামে একুশের আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সংস্কৃতিকর্মীদেরও ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিশেষ করে আন্দোলন গ্রামে গ্রামে পৌছে দিতে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযােগ্য কবিয়াল রমেশ শীল ও গণসংগীতশিল্পী মলয় ঘােষ দস্তিদার, সর্বহরি পাল, অচিন্ত্য চক্রবর্তী, মাহবুব হাসান প্রমুখ। এদিক থেকে ঢাকার তুলনায় ব্যতিক্রমী ভূমিকা চট্টগ্রামের।
চট্টগ্রামে একুশের সলতে পাকানাে হয় ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে। এরপর ব্যাপক প্রচার ও দেয়ালে দেয়ালে পােস্টার। নতুন এক চট্টগ্রাম শহর। একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) হরতাল, মিছিল, স্লোগান, সভা-সমাবেশে শহর চট্টগ্রাম চঞ্চল হয়ে ওঠে। মূল স্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না’ ইত্যাদি। সাংস্কৃতিক কর্মীদের নেতৃত্ব দেন জনাব আবুল ফজল। মেডিকেল কুলসহ কারিগরি প্রতিষ্ঠানও পিছিয়ে থাকেনি।
পুরাে ঘটনা ছিল চট্টগ্রামের জন্য নজিরবিহীন। একই রকম ছিল মিছিলের পথে পথে এর ক্রমবর্ধমান আয়তন। সব মিছিলের লক্ষ্য লালদীঘি ময়দান। বিশাল এ জনসভার দৃশ্য দেখে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সাময়িক পিছু হটে। লালদীঘি ময়দান সেদিন লালে লাল হয়ে উঠেছিল।
জনসভার পর পূর্বোক্ত লেখকের ভাষ্যে শহরের প্রধান সড়কগুলােতে মিছিল, ‘প্রায় চল্লিশ হাজারের মতাে জনতা তাতে।’ অভূতপূর্ব দৃশ্য। সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় গুলিবর্ষণের খবর শুনে মাহবুব-উল আলম চৌধুরী লেখেন দীর্ঘ কবিতা, ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’ ইতিমধ্যে আন্দোলন একই চরিত্রে অব্যাহত থাকে পরবর্তী দিনগুলােতে। পিছিয়ে ছিল না ছাত্রীরা। তারাও আলাদাভাবে মিছিল করে শহরের প্রধান রাস্তায়। এই আন্দোলন অব্যাহত থাকে ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চের প্রথম দিক পর্যন্ত, যেমনটা প্রদেশের বেশ কিছুসংখ্যক শহরে দেখা গেছে।
একশের আন্দোলন চট্টগ্রামেও শুধু শহরে সীমাবদ্ধ ছিল না। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে মহকুমা শহরগুলােতে, খােন থেকে থানা ও ইউনিয়ন হয়ে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলােতে। ছাত্ররাই এ আন্দোলনের মশালবাহক। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রীরা একই আবেগে মিছিলে যােগ দেয়। একুশে ছড়িয়ে গিয়েছিল হাটহাজারী থেকে দূর এলাকা বােয়ালখালী, ফটিকছড়ি প্রভৃতি এলাকায়। এমনকি বাদ যায়নি সাগরদ্বীপ নামে পরিচিত সন্দ্বীপ।
দৈনিক আজাদ-এর প্রতিবেদনমতেও আন্দোলনের বিস্তার ছিল রাউজান, নাসিরহাট, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড থেকে দূর প্রান্তিক এলাকায়। উল্লেখ্য যে এই চট্টগ্রামেরই গণপরিষদ সদস্য নূর আহমদ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করার প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু তার দল মুসলিম লীগের চাপে তাকে পিছিয়ে আসতে হয়। প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় ভােটাভুটিতে।
চট্টগ্রামে শহীদ মিনার নির্মাণের দিন-তারিখ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মাহবুব-উল আলম চৌধুরীর মতে, ২২ ফেব্রুয়ারি একটি অস্থায়ী ছােটখাটো শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়, কিন্তু রাতে পুলিশ তা ভেঙে ফেলে। অবশ্য এ তথ্যের কোনাে সমর্থন পাওয়া যায়নি অন্যান্য লেখক বা সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে।
ভাষা আন্দোলন, বিশেষত একুশের আন্দোলন ও শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে কত যে বিভ্রান্তিকর তথ্য, মূলত বিস্মৃতির কারণে, তার সীমা-পরিসীমা নেই। শুধু এই বিষয়টি নিয়েই একটি বিশাল গবেষণাকর্মের প্রয়ােজন, ইতিহাসের স্বার্থে। চট্টগ্রামে শহীদ মিনার তৈরি নিয়েও অনুরূপ ঘটনা উল্লেখযােগ্য।
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কলিম শরাফীর উদ্ধতিসূত্রে পূর্বোক্ত গ্রন্থকার শরীক শমশির লিখেছেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি লালদীঘির সমাবেশের মধ্যেই কাঠের তৈরি ১২ ফুট উঁচু শহীদ মিনার তৈরি হয়। ১৯৯৩-এর ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় ২৩ ফেব্রুয়ারিতে তৈরি পূর্বোক্ত কাঠের শহীদ মিনারের প্রসঙ্গে কলিম শরাফী লিখেছেন, ওই মিনারের পাশে দাড়িয়ে স্বনামখ্যাত পশ্চিম পাকিস্তানি নেতা মিয়া ইফতেখার উদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তােলার কথা। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনার খবর অর্থাৎ ছবির কথা কোথাও প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায় না। তার চেয়েও বড় কথা হলাে আমাদের জানামতে এবং সংবাদপত্রের তথ্যমতে একুশের আন্দোলনের সময় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একজন খ্যাতনামা ব্যক্তিই ঢাকায় এসেছিলেন, যা সংবাদপত্র প্রকাশিত। তিনি সাংবাদিক-সম্পাদক জেড এ সুলেরি। দেরিতে হলেও ছবির বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান আবশ্যক।

সূত্র: ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া – আহমদ রফিক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!