You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভাষা আন্দোলনে সিলেট
প্রচণ্ড দমননীতির মুখেও দমেনি আন্দোলন

অবিভক্ত ভারতে সিলেট ছিল আসামের একটি জেলা। মুসলমানপ্রধান হওয়ার কারণে দেশবিভাগ নীতির পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটবাসী মুসলমানরা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবি তােলেন। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় গণভােট। সিলেটকে পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বঙ্গীয় মুসলিম লীগ নেতা-কর্মীদের ছিল ব্যাপক তৎপরতা। গণভােটে জয়ের পরিণতিতে সিলেট পূর্ববঙ্গের একটি প্রান্তিক জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সিলেটি বাঙালি নিয়ে একটি অন্তর্গঢ়, স্বল্প প্রচারিত দ্বন্দ্বও ছিল সত্য- মূলত ভাষা ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে। সিলেটের প্রচলিত ব্যবহারিক ভাষাবৈশিষ্ট্য ও বৈপরীত্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটি বােদ্ধা সমাজের একাংশে এমন ধারণা প্রচলিত যে তারা বাঙালিদের থেকে কিছুটা হলেও ভিন্ন।
অন্যদিকে, দুর্বোধ্য কারণে সিলেটি সমাজের উচ্চশ্রেণির একাংশের উর্দুর প্রতি ছিল ব্যবহারিক আকর্ষণ। রবীন্দ্রনাথের সিলেট ভ্রমণের সময় অন্যতম প্রধান একজন আমন্ত্রক বক্তৃতা দিয়েছেন উর্দুতে। তা ছাড়া ছিল ধর্মীয় রক্ষণশীলতারও প্রভাব। একদিকে উদার প্রগতিচেতনা, অন্যদিকে আত্মস্বাতন্ত্রবাদী ধর্মীয় রক্ষণশীলতা- এ দুইয়ের মিশ্র সংস্কৃতি নিয়ে সিলেটি বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ।
স্বভাবতই এমন এক সামাজিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি নিয়ে সংঘটিত আন্দোলনে বৈপরীত্যের প্রকাশ স্বাভাবিক ঘটনা। আবার একই সঙ্গে এটাও সত্য যে উচ্চশিক্ষিত সিলেটি বােদ্ধা ভাবুক সমাজের একাংশে – যেমন : সৈয়দ মুজতবা আলী, সৈয়দ মাের্তুজা আলীদের বৃহত্তর পরিবারের মতাে অনেক পরিবারে দেখা গেছে প্রগতিচেতনার প্রকাশ। এই আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার প্রকাশের কারণে সংগতভাবেই তাদের সমর্থন ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে।
এসব কারণে ১৯৪৭ থেকেই রাষ্ট্রভাষা বিতর্কটি শিক্ষিত সিলেটি সমাজে সচল একটি বিষয় ছিল। নিজ নিজ ভাবনামাফিক প্রতিক্রিয়ার প্রকাশও ঘটেছে। তাই সভা-সমাবেশ, সেমিনার বা সাহিত্যালােচনায় রাষ্ট্রভাষা বিতর্কটি বারবার উঠে এসেছে। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক সংবাদপত্রেও প্রকাশ পেয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা জানি।
এমন এক দ্বৈত চেতনা ও বৈপরীত্য সত্ত্বেও বিস্ময়কর যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সিলেট শহরের শিক্ষিত মহলের সচেতনতা ও সংশ্লিষ্টতা ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিক থেকে। এ ব্যাপারে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা থেকে সিলেট খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাস কয় আগে থেকেই নব্য ডােমিনিয়নের রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় মূলত মুসলিম লীগ নেতাদের কল্যাণে। সেই ধারায় নানাভাবে জ্বালানি যুক্ত হয় ১৯৪৭-এর শেষ দিকে একাধিক ঘটনায়। সিলেটি বােদ্ধা সমাজ তা আমলে নেয় দুই বিপরীত প্রতিক্রিয়ায়।
এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সিলেটের ‘মুসলিম সাহিত্য সংসদ’ নামক সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সংগঠনটি। তাদের মূল কর্মকর্তারা এ সময় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নটি নিয়ে শিক্ষিত শ্রেণিতে এর পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আলােচনার সূত্রপাত করেন। কিন্তু সমাজের রক্ষণশীল অংশ এবং মুসলিম লীগ শাসন-প্রশাসনও কম শক্তিমান ছিল না। তারাও সমানতালে উর্দুর পক্ষে তৎপরতা চালাতে থাকে। চলে প্রচারও।
ইতিমধ্যে ৩০ নভেম্বর (১৯৪৭) ওই প্রগতিবাদীদের উদ্যোগে আলিয়া মাদ্রাসা হলে ভাষণবিষয়ক একটি আলােচনা সভার আয়ােজন করা হয়। এ সময়ে স্বনামখ্যাত সৈয়দ মুজতবা আলী সিলেটে অবস্থান করছিলেন। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে যুক্তি-তথ্যসহ একটি দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। পরবর্তীকালে তার মূল বক্তব্য পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নামে পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়।
আগেই বলা হয়েছে, সিলেটে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলা। রাষ্ট্রভাষাবিরােধী রক্ষণশীলদের প্রভাব যথেষ্টই ছিল। তদুপরি মুসলিম লীগ শাসনের স্বৈরাচারী ভূমিকা এবং লীগ দলের পান্ডাদের সন্ত্রাসীপনার প্রকাশ। তাদের হামলায় ওই সভা পণ্ড হয়ে যায়। আর সৈয়দ মুজতবা আলী দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
অভাবিত হলেও সত্য, শিক্ষিত বােদ্ধা সমাজে বাংলাবিরােধীদের মধ্যে ছিলেন আজমল আলী চৌধুরী, তৈমুর রাজা দেওয়ান, বাছিত দেওয়ান, মঈনুদ্দিন আহমদ চৌধুরী, আবদুল মজিদ, মাওলানা জামিরুল হক প্রমুখ খ্যাতনামা ব্যক্তি। রাষ্ট্রভাষা বাংলা নিয়ে এভাবে দ্বিভাজিত ছিল তৎকালীন সিলেট, পক্ষে ও বিপক্ষে। এসব ঘটনা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উষালগ্নে।
একই ধারায় ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে সিলেটের বিখ্যাত গােবিন্দ পার্কে বাংলাপন্থীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে সভার আয়ােজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক নওবেলাল সম্পাদক মাহমুদ আলী, প্রধান বক্তা দেওয়ান মােহাম্মদ আজরফ। কিন্তু এ সভাও মুসলিম লীগ দলের সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। তাই সভার কাজ চালানাে সম্ভব হয়নি।
১৯৪৮ সালের শুরু থেকেই সিলেট রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রশ্নে পরস্পরবিরােধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের যােগাযােগমন্ত্রী সরদার আবদুর রব নিশতার সিলেট সফরে এলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্থানীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ছাত্রনেতা আবদুস সামাদসহ অন্য প্রতিনিধিরা। তারা যুক্তিসহ তার কাছে বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবি তুলে ধরেন। তাতে বরফ গলেনি।
একই সময়ে একই উদ্দেশ্যে সিলেটের নারী প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সিলেটের প্রগতিশীল নারীসমাজ তুলনামূলক বিচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে যেমন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে, তেমনি সমাজে নারী অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মতাে একাধিক ক্ষেত্রে। এই সংগ্রামী মহিলারা ১৯৪৮-এর ফেব্রুয়ারিতে পূর্বঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে একাধিক দাবিতে স্মারকলিপি পাঠান। এতে স্বাক্ষর করেন স্বনামখ্যাত রাজনীতিক যােবেদা খাতুন চৌধুরানী, শাহেরা বানু, সৈয়দা লুফুন্নেছা খাতুন, শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন প্রমুখ।
এর প্রতিক্রিয়া ছিল জঘন্য। মুসলিম লীগের ধর্মান্ধ গােষ্ঠী এবং প্রতিক্রিয়াশীল পত্রপত্রিকাগুলাে এদের বিরুদ্ধে নােংরা ভাষায় অপপ্রচার চালাতে থাকে। এমন পরিবেশ সত্ত্বেও ১১ মার্চের (১৯৪৮) আন্দোলনে পূর্বোক্তদের প্রতিবাদী তৎপরতায় ঘাটতি ছিল না। এ উপলক্ষে গােবিন্দ পার্কে অনুষ্ঠিত সভায় যথারীতি প্রচণ্ড হামলা ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ দলের নেতা ও পান্ডাদের। এতে সভাপতি ছিলেন মাহমুদ আলী।
১৯৪৮ সালে সিলেটে ভাষা আন্দোলন এভাবে দুই পক্ষের পরস্পরবিরােধিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। চলেছে মুসলিম লীগ দলের নেতা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের আক্রমণের মুখে ভাষাসংগ্রামীদের প্রতিরােধের চেষ্টায়। বলা বাহুল্য, প্রতিক্রিয়াশীলরা ছিল তুলনায় শক্তিমান এবং তা সরকারি দলের আক্রমণাত্মক ভূমিকার কারণে, নেপথ্যে সরকারি শক্তির মদদ।
এ পর্বে উর্দু রাষ্ট্রভাষার পক্ষে মুসলিম লীগদলীয় নেতা-কর্মী এবং শিক্ষিত শ্রেণির একটি বড় অংশ সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা তৎপর ছিলেন। এদের পক্ষে কাজ করেছে সরকারি পত্রপত্রিকা- একই সঙ্গে কুখ্যাত সাপ্তাহিক যুগভেরী ও ইস্টার্ন হেরাল্ড-এর মতাে পত্রিকা। বাংলা রাষ্ট্রভাষার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে এরা ছিল পারঙ্গম।
এর বিপরীত রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে ছিল সাপ্তাহিক নওবেলাল ও আল ইসলাহর মতাে দু-একটি পত্রিকা। আর রাজনীতি ও সাহিত্য- সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ছিলেন আদর্শগত দিক থেকে জাতীয়তাবাদী প্রগতিবাদীরা। এদের মধ্যে নারী-পুরুষনির্বিশেষে উল্লেখযােগ্য ভাষাসংগ্রামীরা হচ্ছেন আসাদ্দর আলী, ওয়ারিছ আলী, তারা মিয়া, মাহমুদ আলী, দেওয়ান মােহাম্মদ আজরফ, মুসলিম চৌধুরী, নুরুল হক, প্রসূনকান্তি রায়, যােবেদা খাতুন, শাহেরা বানু, সৈয়দা নজিবুন্নেছা, সৈয়দা লুফুন্নেছা, ছালেহা খাতুন প্রমুখ।
১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারি তথা একুশের আন্দোলনে সিলেট এই ধারাবাহিকতা আরও জোরালােভাবে রক্ষা করেছে। এবার আন্দোলন আরও সুসংহতভাবে পরিচালিত করতে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। আহ্বায়ক পীর হাবিবুর রহমান। সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য মাহমুদ আলী, নুরুর রহমান, আবদুর রহিম, সাদত খান, মতছির আলী, মনির উদ্দিন আহমদ, হাজেরা মাহমুদ, সৈয়দ মােতাহার আলী প্রমুখ।
ঢাকা থেকে ঘােষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সিলেটেও একুশে ফেব্রুয়ারির তৎপরতা শুরু হয়। ঢাকায় ছাত্র হত্যার সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় সিলেট শহর যেন জ্বলে ওঠে। ছাত্রধর্মঘটসহ শহরে পূর্ণ হরতাল। রাস্তায় মানুষের ঢল। যানবাহন, দোকানপাট, ব্যবসাকেন্দ্র সব বন্ধ। ঢাকার শহীদদের উদ্দেশে গায়েবানা জানাজা। সেই সঙ্গে সভা-সমাবেশ ও মিছিল। স্লোগান যথারীতি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘নুরুল আমিনের বিচার চাই’, ‘মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চাই’ ইত্যাদি।
গােটা শহর আন্দোলনে স্পন্দিত। প্রতিক্রিয়া মুসলিম লীগ দলে। তাদের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পরিষদ সদস্যের পদত্যাগ সমাজে প্রভাব ফেলে। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য মাহমুদ আলী, এ জেড আবদুল্লাহ, আবদুর রহিম, মতছীর আলী প্রমুখ।
আন্দোলনের ব্যাপকতা পূর্ব পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। এবার নির্বিবাদে সভা সমাবেশ, মিছিল, দেয়ালে দেয়ালে পােস্টার, সর্বোপরি লাগাতার হরতাল। পিছিয়ে থাকে না নারীসমাজ। যােবেদা খাতুন প্রমুখের নেতৃত্বে ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মহিলাদের সভা। বক্তৃতা করেন নারীনেত্রীরা। শহরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সভা।
এবারকার আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য থানা, ইউনিয়ন ও গ্রামে-গঞ্জে এর বিস্তার। বিয়ানীবাজার, গােলাপগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, বালাগঞ্জ থেকে শুরু করে বানিয়াচং, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ, জকিগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা থেকে আন্দোলন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মূল বা প্রাথমিক উদ্যোক্তা প্রতিটি স্থানীয় শিক্ষায়তনের ছাত্রছাত্রী নেতারা। স্থানবিশেষে এগিয়ে আসেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধিজীবী। এ পর্যায়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ছিল বিশেষ ভূমিকা।
সিলেটে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে সভা, সমাবেশ ও মিছিলের তৎপরতা, সেই সঙ্গে হরতাল। এ আন্দোলন অব্যাহত ছিল মার্চ মাসেরও প্রথম দিক পর্যন্ত। ৫ মার্চের আহত হরতালও যথাযথভাবে পালিত হয়। এতে ছিল ছাত্র-জনতা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের একাত্মতা। উদাহরণ কবি দিলওয়ার। দমননীতির কারণে কমিউনিস্ট নেতাদের ছিল নেপথ্য সহযােগিতা, কদাচিৎ প্রকাশ্যে। পিছিয়ে ছিলেন না গণতন্ত্রীরা ও সমাজতন্ত্রী ধারার আইনজীবীরা। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পরবর্তীকালের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব অনেকে এ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। যেমন সৈয়দ মুজতবা আলী, ফারুক চৌধুরী প্রমুখ।
সেই সঙ্গে উল্লেখযােগ্য যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ভাষাসংগ্রামী অনেককে সরকারি দমননীতির শিকার হতে হয়, মুসলিম লীগ মাস্তানদের হাতে প্রহৃত ও লাঞ্ছিত হতে হয়। যােবেদা খাতুনও বাদ পড়েননি। আর কারারুদ্ধ হতে হয় অনেককে। এবং তা ছাত্র-ছাত্রনির্বিশেষে। একুশের সূচনাপর্ব সম্বন্ধে দৈনিক আজাদ-এর প্রতিবেদন :
‘ঢাকায় নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলীবর্ষণের প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গােবিন্দ পার্কে এক বিরাট জনসভা হয়। ঐ দিন সকাল হইতে সহস্র ছাত্র জনসাধারণের বিরাট মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে।… শনিবারের অবস্থাও পূর্ববৎ। হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী ও জনসাধারণ দুই মাইল ব্যাপিয়া মিছিলের পর গােবিন্দ পার্কে সমবেত হয়। রবিবার ও সােমবার শহর ও শহরতলীতে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। ঘটনার ষষ্ঠ দিনেও শহরে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান হরতাল পালন করে।’ (আজাদ, ৬ মার্চ ১৯৫২)।
অবস্থাদৃষ্টে বুঝতে পারা যায়, একুশের ভাষা আন্দোলন সিলেটে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়েছিল সরকারি দমননীতি সত্ত্বেও। জেলা শহর, মহকুমা শহরের বাইরে এর বিস্তার গ্রামপর্যায়ে। এই প্রতিবাদ শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে ১৯৫৩-এর ফেব্রুয়ারি থেকে অব্যাহত থাকে।

সূত্র: ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া – আহমদ রফিক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!