বাঙলাদেশের সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি
(স্টাফ রিপাের্টার)
মুজিবনগর, ৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর কমান্ডাে তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাঙলাদেশের সরকারী সূত্রে জানা গেল যে, ২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে রাধানগর অঞ্চলে পাকসৈন্য বাহিনীর ২ জন নিহত হয়। ঐ একই দিনে দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে পাকসৈন্যদের উপর আক্রমণ চালিয়ে স্বাধীনতা যযাদ্ধারা ৬ জন শত্রুসৈন্য ঘায়েল করেন। ঐ দিনই ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরে আরও ২ জন হানাদার সৈন্য প্রাণ হারায়। এ ছাড়া ঐদিন খুলনা জেলার ভােররাতে এবং বারনি অঞ্চলে ২ জন করে দখলদার সেনাকে খতম করা হয় মুখােমুখি যুদ্ধে। ইতিপূর্বে নােয়াখালি জেলার ফুলগাজি অঞ্চলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর পাতা মাইন বিস্ফোরণের ফলে ৩ জন পাকসৈন্য নিহত হয় এবং আরও ৬ জন আহত হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর নােয়াখালি জেলার নােয়াপুরে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায় এবং ৬ জন হানাদার সৈন্যকে নিহত এবং অপর ১৫ জনকে আহত করেন। ঐ একই দিনে কোটেশ্বরীতে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে ৩ জন শত্রুসৈন্যকে খতম করা হয়।
বিলম্বে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেল যে, ৩০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার জাম্বরী অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৪ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। ইতিপূর্বে ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিযােদ্ধরা এই জেলার কসবাতে পাকিস্তানী ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালান এবং ৩ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে নিহত এবং ৩ জনকে আহত করেন সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণে আনন্দপুরে নিহত হয় ৪ জন পাকিস্তানী সৈন্য কুমিল্লা জেলার মােহনপুরেও ঐদিন মুক্তিবাহিনীর হাত ৪ জন শত্রুসৈন্য খতম হয়। ইতিপূর্বে ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা কুমিল্লা জেলার কসবার কাছে কায়ুমপুরে পাকিস্তানী ঘাঁটির উপর মর্টার নিয়ে আক্রমণ চালান। তিন ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৩৫ জন শত্রুসৈন্যকে নিহত করেন এবং ১৫ জনকে আহত করেন। ৫টি বেয়নেট এবং ২৫০ রাউন্ড চীনা বুলেট মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। মাত্র ১ জন গেরিলা এখানকার যুদ্ধে আহত হন।
শিলং থেকে ইউএনআই জানাচ্ছে যে, শ্রীহট্ট রণাঙ্গনের রাধানগর ও জয়ন্তিয়াপুরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বহু পাকসেনা হতাহত হয়েছে। ঐ দুটি স্থানে সর্বমােট ১২ জন পাকসেনা নিহত এবং ৩৭ জন আহত হয়েছে।
ঐ সূত্রে আরাে প্রকাশ যে, পাকসেনারা আহত সেনাদের শ্রীহট্ট ও ঢাকার সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। দুটি হাসপাতালই এখন রুগীতে ভরে গেছে।
সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেল যে, মুক্তিবাহিনীর কমান্ডােরা সম্প্রতি মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শ্রীহট্ট শহরের একটি পাওয়ার সাব-স্টেশন উড়িয়ে দিয়েছেন এবং কিছু গাড়ি ধ্বংস করেছেন।
ময়মনসিংহ জেলার রাহুমারীতে মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়েছে। মুক্তিসেনারা পাকসেনাদের সমস্ত রকমের বাধাগুলােকে সরিয়ে ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব পাড়ে কর্তৃত্ব স্থাপন করেছেন এবং দক্ষিণ পাড়ের দিকে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেল যে, ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম পাড়েও গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাকসেনারা স্থান ত্যাগ করে চিলমারীর দিকে সরে যাচ্ছে। মীরগঞ্জ এলাকায় গেরিলা আধিপত্য স্থাপিত হয়েছে এবং গেরিলারা লাখাই-এর কাছে হবিগঞ্জগামী একটি সড়কের গুরুত্বপূর্ণ সেতুর ক্ষতিসাধন করেছেন।
মুক্তিবাহিনী সূত্রে আরাে প্রকাশ যে, তারা সম্প্রতি দখলী পা হাজার টন গম খাসিয়া পাহাড় ও শ্রীহট্ট সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীদের মধ্যে বন্টন করেছেন। গত মাসে শ্রীহট্ট রণাঙ্গনে এই গম দখল করা হয়েছিল।
সূত্র: কালান্তর, ৫.১০.১৯৭১