You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.10 | গত কয়েক দিনে বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে ৪১৩ জন পাকসৈন্য নিহত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

গত কয়েক দিনে বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে ৪১৩ জন পাকসৈন্য নিহত
(স্টাফ রিপাের্টার)

মুজিবনগর, ৯ অক্টোবর- অধিকৃত বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর দূর্বার গতি আক্রমণ এবং প্রচণ্ড প্রতিরােধের ফলে গত সপ্তাহখানেকের মধ্যে ৪১৩ জন পাকসৈন্য এবং বেশ কিছু রাজাকার নিহত হওয়ার সংবাদ আজ বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান কার্যালয় থেকে জানানাে হয়েছে। ঐ সংবাদ অনুসারে, মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ব্যাপক অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে।
৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার কসবার কাছে মুক্তিবাহিনী একটি পাক সৈন্যবাহী লঞ্চ অতর্কিতে আক্রমণ করে ২০০ জন তৃতীয় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের শত্রু সৈন্য ঘায়েল করেছে। লঞ্চটি ডুবিয়ে দিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা প্রচুর সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র দখল করেন। আগের দিন বাঞ্ছারামপুরে পাকবাহিনীর আর একটি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়ে ১০ জন সেনা খতম করা হয়। ঐ এলাকায় অপর এক আক্রমণে গেরিলারা পাকসেনাদের ৩টি স্পীড বােট ডুবিয়ে ১০টি নৌকা ক্ষস্তি করে জনৈক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও জনৈক ক্যাপ্টেনসহ ১৪ জন শত্রু সৈন্য খতম করেন। ৪ ও ৫ অক্টোবর অমরাততালিতে এক টহলদার পাকবাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ করে মুক্তিযােদ্ধারা ৪ জন শত্রু সৈন্যকে নিহত করেন। ৩ অক্টোবর নয়নপুর রেল স্টেশনের কাছে তারা ৩ জন হানাদার খতম করেন।
বিলম্বে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী, মুক্তিযােদ্ধারা ২ অক্টোবর হােমনা থানায় ১১ জন পাক পুলিশ ও ৫ জন রাজাকার খতম করেন। তাছাড়া অস্ত্রসহ ১৫ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১ অক্টোবর বল্লায় পাকবাহিনীর সমাবেশ ছাউনী আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী আশ্রমপুরী থেকে বল্লা পর্যন্ত যাতায়াতকারী পাক- সৈন্যদের মধ্যে ২৫ জনকে নিহত এবং ৮ জনকে আহত করে।
নােয়াখালির ফেনী অঞ্চলে এ মাসের গােড়ায় মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসী আক্রমণের দরুন গেরিলাদের রণকৌশলের কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে ৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর সৈন্যগণ ফেনীর কাছে মুরয়ারি নদী পেরিয়ে পরশুরাম ও অনন্তপুরে ঘাঁটি গাড়ে। পাকবাহিনী কাছ থেকে মরীয়া হয়ে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ হানে। নিজেদের মধ্যে আশ্চর্য সমন্বয় সাধন করে দুঃসাহস মুক্তিসেনারারা মর্টারসহ ছােট ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রবল আক্রমণ হানে, প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর ১৯ জন পাক সৈন্য নিহত হলে হানাদাররা পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। মুক্তিযােদ্ধারা এগিয়ে গিয়ে হানাদারদের সঙ্গে সরাসরি প্রায় হাতাহাতি সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এই যুদ্ধে ৪০ জন শত্রু সৈন্য প্রাণ হারায়।
এরপর অনন্তপুরে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি পাকসৈন্যরা তিনদিক থেকে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর এক বীর যােদ্ধা প্রাণ হারায়। ৩০ জন শত্রু সৈন্য খতম করা সত্ত্বেও মুক্তিযােদ্ধারা সামরিকভাবে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যে নব উদ্যমে অধিকতর শক্তিতে গেরিলারা এগিয়ে যান অষ্টাদশ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ৩০ জন পাক সৈন্য মৃত্যুবরণ করার পর এলাকাটি পুনরায় মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে আসে।
সাম্প্রতিকতম খবর অনুসারে ফেনী এবং বিলােনিয়ায় প্রবল যুদ্ধ চলছে। জনৈক জে, সি, ও সহ ২৭ জন শত্রু সৈন্য নিহত হয়েছে। হৃত মনােবল হানাদাররা চট্টগ্রাম থেকে নতুন সৈন্য আগমনের জন্য গভীরভাবে প্রতিক্ষারত। ইতিমধ্যে গেরিলারা ফেনী ও বিলােনিয়ার সংযােগ রক্ষাকারী ফুলগাজি ও উড়িয়ে দিয়েছেন।

সূত্র: কালান্তর, ১০.১০.১৯৭১