You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের অপ্রতিহত অভিযান একসপ্তাহে শতাধিক পাকসেনা নিহত
(স্টাফ রিপাের্টার)

মুজিবনগর, ১০ অক্টোবর বাঙলাদেশ সৈন্য বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে প্রচারিত বুলেটিনে জানা হয়েছে:
বাঙলাদেশে পাক অধিকৃত এলাকার সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অভিযান অপ্রতিহত গতিতে চলছে। গত ১ সপ্তাহে গেরিলাদের আক্রমণে বহু পাকসেনা হতাহত হয়েছে।
রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গন
গত ৩ অক্টোবর রাজশাহী এবং নবাবগঞ্জের মধ্যবর্তী রেলপথে গেরিলারা দূর্ধষ আক্রমণ চালিয়ে একটি সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। ফলে ২৩ জন পাক সেনা নিহত হয়। গত ৫ অক্টোবর খঞ্জনপুর এবং আগেরদিন শিবরামপুরে মুক্তিবাহিনী পাক হানাদারদের উপর অতর্কিতে গােলাগুলি চালায় এবং ২১ জন পাক সেনা খতম করে।
রংপুর জেলার পশ্চিম ভুরাঙ্গামারিতে পাকসেনারা যখন ট্রেঞ্চ খনন করছিল তখন মুক্তিবাহিনী তাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ২ জন পাকসৈন্য নিহত ও ১২ জন আহত হয়। এই সময় শত্রুপক্ষের দুটো গাড়িও বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
গত ৩ অক্টেবার দিনাজপুর জেলার মােগলহাটে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ফলে ৭ জন পাকসেনা হতাহত হয়। এই সংঘর্ষে মুক্তিযােদ্ধাদের ৩ জন সামান্য আঘাত পান।
ঢাকা কুমিল্লা চট্টগ্রাম রণাঙ্গন
ননায়াখালী জেলার বেলােনিয়া এবং ছাগলনাইয়ার মধ্যবর্তী পথে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা গােপনে অবস্থান করতে থাকে এবং পাক সেনাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৫ জন শত্রু সৈন্য খতম করে।
মুরলিফাদ এলাকাতে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। ফলে ৩ জন পাকসৈন্য নিহত এবং ৭ জন আহত হয়। একই দিনে মােকামিয়া বাজারে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা টহলদার পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ২ জন শত্রুসৈন্য খতম করে।
৬ অক্টোবর ঢাকা চট্টগ্রাম এর মধ্যবর্তী পথে যখন পাকিস্তানী সৈন্যরা একটি গাড়িতে মাল বােঝাই করছিল তখন মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা তাদের উপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ফলে ৩ জন পাকসেনাদের মৃত্যু ঘটে। |
বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা যায় যে গত ২ অক্টোবর মারদা, পরশুরাম এবং চিতলিয়াতে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা একটি গােপন অবস্থান থেকে পাকসেনাদের ইতস্ততঃ আক্রমণ করে। ফলে ৪০ জন শত্রু সৈন্য নিহত এবং বহু আহত হয়।
আনন্দপুর এবং ধানিকান্দায় খানসেনাদের ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড আঘাত হানে এবং ৬০ জন। খানসেনা খতম করে।
একই দিনে এই এলাকায় শক্ত ঘাঁটির উপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা ব্যাপকভাবে আক্রমণ চালায় এবং বাঙ্কারসহ ৩০ জন পাকসেনা খতম করে।
কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গেরিলাদের তৎপরতা চলতে থাকে ৪ অক্টোবর পাঞ্জাবী ও কোর্টের এলাকায় মুক্তিবাহিনী তাদের গােপন অবস্থান থেকে পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালায়। আনলিপুর ও মােহনপুরে অনুরূপ গেরিলা-আক্রমণ পরিচালিত হয়। ফলে ১৭ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়।
গত ৭ অক্টোবর রাত্রে শ্রীহট্ট জেলার কামদেবপুরে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধার শত্রু সৈন্যদের চারদিক থেকে অবরােধ করে এবং পাকসেনাদের জনৈক মেজরসহ আরও ২৫ জন পাকসেনা খতম করে। অক্টোবর চম্পকনগরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের বিব্রত করে তুলে এবং ৩ জন পাকসেনা হত্যা করে। করইবাজারে শত্রুঘাঁটির উপর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৩ জন পাকসেনা নিহত।
গত ৮ অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলার কাগমারী অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী পাক হানাদারদের উপর সজোরে আক্রমণ চালায় এবং ৫ জন শত্রুসেনা নিহত করে।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে যে টাঙ্গাইলের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় পাকহানাদার ও মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছে।

সূত্র: কালান্তর, ১১.১০.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!