You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে শতাধিক পাকসেনা নিহত
(স্টাফ রিপাের্টার)

মুজিবনগর, ৫ অক্টোবর- বিগত দুসপ্তাহে বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়েছে। পাক অধিকৃত এলাকাগুলিতে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের ব্যাপক তৎপরতা ইয়াহিয়ার ভাড়াটিয়া সৈন্যদের বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। ইয়াহিয়ার শক্ত ঘাঁটি বলে প্রচারিত রাজধানী ঢাকা শহর-শহরতলি এবং সমগ্র ঢাকা জেলার প্রতিটি মােক্ষম ঘাঁটিতে গেরিলাদের অতর্কিত আক্রমণের মুখে জঙ্গী সরকার আজ বিভিন্ন পথঘাট ও অলিগলিতে টহলদারী সেনাবাহিনী মােতায়েন করেছে, অথবা স্থানে স্থানে চেক পােস্ট বসিয়ে দিয়েছে।
ইয়াহিয়ার এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও গত সপ্তাহে মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা মাইনের বিস্ফোরণে ঢাকাচট্টগ্রাম রেলপথ উড়িয়ে দেয়। ফলে বুড়িচং এর কাছে ৩০ জন শত্রু সৈন্য খতম হয়।
বাঙলাদেশ সৈন্য বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে প্রচারিত বুলেটিন থেকে উপরােক্ত তথ্য জানা যায়।
গত ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ রণাঙ্গনে বিরিনিরি-বিজয়পুর এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে দুজন পাকসেনা নিহত হয়। অনুরূপভাবে বান্দরকাটাতেও ৫ জন শত্রুসৈন্য মারা পড়ে।
নােয়াখালি জেলার পূর্ব ছাগলনাইয়ার কাছে গেরিলারা শক্ত ঘাঁটি অবরােধ করে এবং এক ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে ৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৭ জন আহত হয়।
এর পর মুক্তিবাহিনী মনােহরপুর, আজানপুর, কোটেশ্বর এবং জামবারিতে ইতঃস্তত আক্রমণ চালায় ও ২০ জন পাকসেনা হত্যা করে।
ইতিপূর্বে ছদ্দিয়াগ্রামে মুক্তিবাহিনীর হাতে ১২ জন পাকসেনা নিহত হয়।
১ অক্টোবর পুটিয়াচরের কাছে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পাকিস্তানী ঘাঁটির উপর বেপরােয়া আক্রমণ চালায়। ফলে ৩ জন পাকসেনা মারা যায়। গেরিলারা ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলায় জাফলং বাজারে লুণ্ঠনরত পাকসেনাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং ৮ জন সৈন্য খতম করে।
সিলেট শহর থেকে ৩২ কি: মি: দূরে সুরমা নদীতে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের দুটো স্পীডবােট ধ্বংস করে দেয়।
২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। সুরমা নদীর কাছে গােপন ঘাটি থেকে গেরিলারা ৩ জন পাক সেনা এক জন রাজাকারকে হত্যা করে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রংপুর রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী বাঘধানি থানায় অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। ফলে ৩ জন রাজাকার এবং একজন পুলিশ মারা পড়ে এবং মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত হয়।
২ অক্টোবর রাত্রিতে ভরুঙ্গামারি অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী পাক শত্রুদের ঘাটিতে মর্টার যােগে প্রচণ্ডভাবে গােলাবর্ষণ করতে থাকে। ফলে বহু পাকসেনা হতাহত হয়।
চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে থানা ও জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন কেন্দ্র ঘেরাও করে এবং থানার অস্ত্রশস্ত্র দখল করে।
ঢাকা ময়মনসিংহ রণাঙ্গনে পাকসেনা ও রাজাকারেরা মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচণ্ডভাবে নাজেহাল হয় ফলে ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ময়মনসিংহ জেলার ইতনী এলাকায় বহু সংখ্যক নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
সম্প্রতি গেরিলারা যখন একটি থানা আক্রমণ করে তখন পুলিশ অফিসাররা প্রতিরােধ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে, কাপুরুষতার অভিযােগে পাকসেনারা থানা অফিসার ও পুলিশদের গ্রেপ্তার করে।

সূত্র: কালান্তর, ৬.১০.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!