মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে নাজেহাল পাকসেনারা পালাতে শুরু করেছে
মুজিবনগর, ২০ অক্টোবর বাঙলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর দুর্বার আক্রমণে দখলদার পাকসেনারা নাজেহাল হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি শহরাঞ্চলে দুপক্ষের সম্মুখ সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে পড়েছে, এছাড়া তীব্র সংঘর্ষে পরাস্ত পাকবাহিনী পিছু হটতেও বাধ্য হচ্ছে। শহরে প্রতিদিন কমান্ডো আক্রমণ তীব্রতর রূপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে প্রাপ্ত খবরের উল্লেখযােগ্য অংশগুলি জানিয়ে যুদ্ধ বুলেটিনে’ যে বিবরণী জানান হয়েছে তাতে মুক্তিবাহিনীর জয়যাত্রার আলেখ্য ধরা পড়ে।
ঢাকা কুমিল্লা চট্টগ্রাম সেক্টর
মুক্তিবাহিনী অনেকগুলি আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছে। গত ১৪ অক্টোবর কটকবাজারে পাকসেনাদের আটকে ফেলে ৪ জনকে খতম করে। ঐ দিনই তাঁরা মটার দিয়ে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে কসবা বাজার পর্যন্ত এগিয়ে যায়। এখানে ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়, আহত ৫ জন। মুক্তিসেনারা ৩টি রাইফেল, ৮টি মর্টার ও অনেক অস্ত্রসম্ভার দখল করে।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর পাগালরকুল অঞ্চলে মর্টার আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৬ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। একই দিনে গাবতলীতে ৩ জন পাকসেনাকে হত্যা ও ২ জনকে আহত করে।
১২ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার উজানচরে মুক্তিবাহিনীর ঘেরাওয়ে আটক পাকসেনাদলের ৩ জন চোট খায়। নােয়াখালি জেলার অনন্তপুরে ৬ জন পাকসেনা হত হয়েছে।
আরও যেসব সংবাদ এসেছে তাতে জানা গেল, ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে মুক্তিসেনারা একটি পি,আই, এ বাস পুড়িয়ে দেন, ৮ তারিখ চৌদ্দ গ্রামে ৩ জন পাকসেনাকে খতম করে, ৭ অক্টোবর ঢাকা জেলা কালিকৈয়ের-এর পাকসেনাদের একটি জীপ উড়িয়ে দেয়, ফলে পাক মেজর একতিয়ার খান সহ ৫ জন নিহত হয়। এই একই অঞ্চলে ১১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর মাইন বিস্ফোরণে একটি পাক যান ধ্বংস হয়, ফলে ৩ জন শত্রুসেনা খতম হয়েছে।
কুষ্টিয়া যশাের খুলনা সেক্টর।
গত ১৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মামুদপুর- গগনি টেলিফোন যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। গত ১৫ অক্টোবর যশাের জেলার নভারণ সেতু অঞ্চলে সৈন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ২ জনকে হত্যা করেছে।
আর একটি মাইন বিস্ফোরণে মুক্তিবাহিনী আমমুড়াগামী একটি সেনাবাহি ট্রেনের দুটি বগি উড়িয়ে দেয়। ১১ অক্টোবর আমনুড়া রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত করে দেওয়া হয়েছে।
রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর
১৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী হরিপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয়ে ৩ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে এবং ১৮টি রাইফেল দখল করেছে। বারেপসেক-এ ১২ জন রাজাকার রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করেছে। চালিহাটিতে ১৩ অক্টোবর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিসেনারা ৩ জন পাকসেনাকে আহত করে। ঐদিনই পাহাড়পুর-জামালগঞ্জ রােডে মুক্তিবাহিনী মাইনাদল দুটি পাকিস্তানী গাড়িকে উড়িয়ে দেয়, তারপর একই জায়গায় পাকযান বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিসেনারা গাড়ীগুলিকে পুরাে ধ্বংস করে দেয় এবং ১৫ জনকে নিহত ও ১১ জনকে আহত করে।
ময়মনসিংহ-শ্রীহট্ট-মৌলভীবাজার সেক্টর
কিশােরগঞ্জ মহকুমার তরহিলে ১৫ অক্টোবর মুক্তিফৌজ ৬ জন হানাদার সৈন্যকে খতম করেছে। ৮ অক্টোবর কিশােরগঞ্জ অঞ্চলেই মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে ২৫ জনকে আহত করেছে। ভৈরববাজার ও কিশােরগঞ্জের মধ্যে রেল সেতু উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রীহট্ট জেলায় ১৩ অক্টোবর ৭টি জল যান ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার ঠাকুর কোণে, দরলাকান্দি মহেশ খােলায় মােট ৪৩ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করেছে।
সূত্র: কালান্তর, ২১.১০.১৯৭১