পাকবাহিনী বাঙলাদেশে শেষ আঘাত হানতে পারে
বাঙলাদেশ বাহিনীর প্রধান কর্নেল ওসমানীরা মন্তব্য
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ২ নভেম্বর বিভিন্ন রণাঙ্গন সফর শেষে বাঙলাদেশ বাহিনীর প্রধান কর্নেল ওসমানী বলেছেন যে, ভারত-পাক যুদ্ধের অজুহাত তুলে পাকবাহিনী বাঙলাদেশের বুকে শেষ আঘাত হানার চেষ্টা করতে পারে। কারণ, গেরিলাদের হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে তারা বুঝেছে, বাঙলাদেশে তাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে।
মুজিবনগর থেকে ইউএনআই এই সংবাদ দিয়েছে। আমাদের স্টাফ রিপাের্টার সেখান থেকে আরাে জানিয়েছে যে, বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পাকসেনারা গেরিলাদের ব্যাপক আক্রমণের মুখােমুখি ভীষণভাবে নাহেজাল হচ্ছে।
ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রণাঙ্গনের খবর : গত ৩০ অক্টোবর নােয়াপুরে পাক-ঘাঁটির উপর মর্টার আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ৬ জন শত্রু সেনাকে খতম করেছেন এবং ২টি বাঙ্কার ধ্বংস করেছেন। ২৯ অক্টোবর ফুলগাজীতে গেরিলারাদের মর্টার আক্রমণে ১০ জন শত্রুসেনা নিহত হয়েছে। ঐ দিন একই এলাকায় পাকবাহিনীর অপর একটি দলের উপর আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ৫ জন শত্রুসেনাকে খতম করেছেন। অনন্তরপুর চালিয়ে গেরিলারা ১৬ জন দখলদার সেনাকে নিহত এবং ১০জনকে আহত করেন। ঐ সংঘর্ষে শত্রু পক্ষের ৩টি ব্রাঙ্কার ও ধ্বংস হয়েছে। ২৩ অক্টোবর আড়াইবাড়ি এলাকায় ১৫ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছে। ঐ স্থান থকে পাক অস্ত্রও গেরিলাদের হাতে এসেছে।
রংপুর-দিনাপজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গনের খবর গত ৩০ অক্টোবর মােঘলহাটে ২ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ১ জন আহত হয়েছে। গােসাইগঞ্জ হাটেও ৩ জন দখলদার সেনা নিহত হয়েছে। ঐদিন পলাশবাড়িতেও গেরিলারা ৬ জন শত্রুকে খতম এবং ৬ জন জখম করেছেন। বগুড়া জেলার জয়পুরহাটে গত ২৯ অক্টোবর গেরিলা আক্রমণে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। ঐ দিন গেরিলাদের হাতে অমরখানাতেও ৩ জন শত্রু নিহত এবং ২জন আহত হয়েছে। ২৮ অক্টোবর লালমনির হাটের উপরপশ্চিম ২ জন পাকসেনা ও ৪ জন রাজাকার নিহত হয়েছে। ২৬ অক্টোবর জঙ্গিরহাটে পাক-আক্রমণকে গেরিলারা সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরােধ করেন। সংঘর্ষে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। পূর্বাহ্নে গত ২২ অক্টোবর গােসনাহার শত্রুসেনাদের আর একটি আক্রমণকেও গেরিলারা বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরােধ করেছেন। সংঘর্ষে ৩ জন শত্রু নিহত হয়।
ময়মনসিংহ-শ্রীহট্ট রণাঙ্গনের খবর : গত ২৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী শ্রীহট্ট জেলার ধলাই চা কারখানায় আক্রমণ চালিয়ে একদল ক্যাপ্টেনসহ ২১ জন শত্রুসেনাকে খতম করেছেন। বহু সংখ্যক অনিয়মিত সৈন্য ও ঐ সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। মুক্তিযােদ্ধা ৩ জন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করেছেন এবং একটি রাইফেল দখল করেছেন। ঐ সংঘর্ষে ৩ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদের মৃত্যু বরণ করেছেন। গত ২৫ অক্টোবর আতুরাতে আক্রমণ সংঘটিত করে মুক্তিবাহিনী ১০জন শত্রুকে খতম করেছেন। ২১ অক্টোবর বড়লেখা ও কাটাল মারার মধ্যে রেল যােগাযােগ ব্যবস্থা মুক্তিবাহিনীরা ধ্বংস করে দিয়েছেন।
সূত্র: কালান্তর, ৩.১১.১৯৭১