ভুরুঙ্গমারী মুক্তিফৌজের দখলে
কুষ্টিয়া জেলায় গেরিলা তৎপরতায় বহু গ্রাম মুক্ত
মুজিবনগর, ১৬ নভেম্বর (ইউএনআই)-গতকাল সকালে তুমুল যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী দখলদার পাকহানাদারদের হটিয়ে দিয়ে রংপুর জেলার ভুরুঙ্গমারী দখল করেছেন। ভুরুঙ্গমারী মুক্ত করার জন্য ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী যুদ্ধ চলে। বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ বুলেটিনে ঐ সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।
প্রকাশ, ঐ যুদ্ধে বহু সংখ্যক হানাদার সৈন্য নিহত হয়েছে। কয়েকজন পাকসৈন্য সহ বহু সংখ্যক রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে।
গত ১০ নভেম্বর কুড়ি গ্রামের নিকট একটি পাকসেনাবাহিনী ট্রেন উলটে দিয়ে গেরিলারা একজন অফিসারসহ ৮ জন পাকসেনাকে খতম করেছেন। ট্রেনটির ৮টি বগির ক্ষতি হয়। ঐদিন কুড়িগ্রাম এক মােটর আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ২ জন পাকসেনা ও তিনজন রাজাকারকে খতম করে দিয়েছেন মােটরটি কুড়িগ্রাম থেকে চিলমারীর দিকে যাচ্ছিল। ১২ নভেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু ধ্বংস করে দিয়ে জয়ন্তিয়াপুর ও কালিনগরের মধ্যে সড়ক যােগাযোেগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
গত ১৫ দিনে ৩৩ জন রাজাকার গেরিলাদের হাতে ধরা পড়েছে।
১২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার আলমডাঙ্গা এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ১ জন পাকসেনা, ১৯ জন রাজাকার এবং ১ জন পুলিশকে খতম করেছেন। গতকাল রাত্রে পাকসেনারা সংশ্লিষ্ট জেলার নােয়াপাড়া মুসা ও ভােলা ডাঙ্গা এলাকা দখলের চেষ্টা করলে গেরিলারা বাধা দেন এবং পাকসেনাদের মাথাভাঙ্গা নদীর পূর্ব পাড়ে মুক্তিবাহিনী ৩৫টি গ্রামে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করেছেন। ভৈরব নদীর পশ্চিম পাড়ে দামারুদা থানার অধীনস্থ ১১টি গ্রাম গেরিলারা মুক্ত করেছেন। চৌরণী নদীর পশ্চিম পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম ময়না মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। জীবনগর পুলিশ স্টেশনের অধীনস্থ হরিহরপুর, বাসুদেবপুর ও আমতলা গ্রাম মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। গেরিলা আক্রমণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে গত ১৪ নভেম্বর থেকে চুয়াডাঙ্গা শহর নিপ্রদীপ হয়ে আছে। স্থানীয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে মাইন বিস্ফোরণের ফলে টেলিফোন ও টেলিগ্রাম সারভিস ও বিপর্যস্ত হয়ে আছে। কুষ্টিয়া জেলার আমডাঙ্গায় গত ১২ নভেম্বর মুখখামুখি সংঘর্ষে কম করে ৮৫ জন রাজাকার নিহত হয়েছে। তিনজন মুক্তিফৌজও শহীদ হয়েছে।
কলকাতা থেকে আমাদের স্টাফ রিপাের্টার জানিয়েছেন রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানের ক্রমাগত গােলাগুলিবর্ষণ অবস্থাকে খুবই উত্তেজনা পূর্ণ করে রেখেছে, রাজ্যের মুখ্য সচিব এনসি সেনগুপ্ত আজ সাংবাদিকদের একথা জানান, তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকায় কিছু কিছু পাক নাশকতা মূলক কার্য ধরা পড়েছে।
অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের জনৈক মুখপাত্র জানান, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জোরদার করা হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ১৮.১১.১৯৭১