বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ময়মনসিংহ জেলার একটি থানা থেকেই ৮০টি রাইফেল দখল
কলকাতা, ১২ নভেম্বর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার গেরিলা তৎপরতা আরাে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভীত পাককর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রণাঙ্গনের মুক্তাঞ্চলগুলি পুনর্দখলের জন্য মরিয়া হয়ে নতুন করে সৈন্য সমাবেশ করছে বলে খবর এসেছে। ঢাকা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিখা খননের জন্য পাকসরকার জনসাধারণের প্রতি নির্দেশনামা জারী করেছে।
মুজিবনগর থেকে ইউএনআই জানিয়েছে : গত ৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার বারহাতা থানাটি দখল করে নিয়েছেন। থানার ওসি সহ ১০৫ জন রাজাকারকে বন্দী করা হয়েছে এবং ৮০টি রাইফেল গেরিলাদের দখলে এসেছে।
ঢাকা থেকে এপি জানিয়েছে একটি লাক্সারি দোকানে বােমা বিস্ফোরণের ফলে গতকাল ৩ ব্যক্তি নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছে। বােমা বিস্ফোরণের পর সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্ত দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত রাত্রে বাঙলাদেশের পাক দখলীকৃত সমস্ত শহরে নিপ্রদীপ পালন করা হয়। এবং এক নির্দেশনামায় পাক সরকার তাদের দখলীকৃত শহর গুলির বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে পরিখা খননের জন্য বলেছে। ঢাকা শরহবাসীদের ঐ নির্দেশ পালনের জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
রংপুর রণাঙ্গনের ডিমলা, নিলফামারী এবং ডুমার এলাকায় পাকবাহিনীর একটি বিশেষ অনুসন্ধান দল গ্রামে গ্রামে গেরিলাদের সন্ধান করে বেড়াচ্ছে। এই খবর জলপাইগুড়ি থেকে ইউএনআই দিয়েছে। যে সমস্ত গ্রামবাসী গেরিলা বাহিনীতে যােগ দিয়েছে তাদের সম্পত্তি নিলাম করে নেওয়ার জন্য গ্রামে গ্রামে পাক কর্তৃপক্ষ বিশেষ ধরণের আদালত বসাচ্ছে। রংপুর রণাঙ্গনের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য খবর : বসুড়া ও ফুলছড়িঘাটের মধ্যে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক একটি সামরিক ট্রেন উলটে দেওয়া। চলতি সপ্তাহে ঘটনাটি ঘটেছে এবং কম করে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।
গত সপ্তাহে ডিমলায় গেরিলা আক্রমণে ১০ জন পাকসেনা এবং কিছু রাজাকার নিহত হয়েছে। ৯ নভেম্বর নাগেশ্বরীতে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।
শ্রীহট্টের খবর : গত ৬ নভেম্বর মুক্তিফৌজ কয়েকটি বিল্ডিং ও একটি পাম্প হাউস ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ এলাকায় পাকসেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার খবর : গত ৮ নভেম্বর সামরাইলে একদল টহল দারী পাকসেনার উপর গেরিলারা আক্রমণ চালান। সালদাড়িতে পাক সৈন্যবাহিনী একটি দেশী নৌকার উপরও গত ৩১ অক্টোবর আক্রমণ করেন।
নােয়াখালির খবর : ভীত পাককর্তৃপক্ষ গত কয়েকদিনে এখানে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
যশাের জেলার খবর : গত ৮ নভেম্বর মাসালাতে গেরিলারা আক্রমণে একটি সামরিক জীপ উল্টে যায়।
ধলাইতে পাক ঘাঁটির উপর গেরিলারা আক্রমণে প্রায় ২৫ জন শত্রুসেনা নিহত হয়েছে।
ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার আরাে খবর : গত কয়েক দিনে গেরিলার আক্রমণে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে ২০ জন পাক দালাল নিহত হয়েছে। গত ৮ নভেম্বর ময়মনসিংহ কেন্দ্রে কম করে ৮ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
সূত্র: কালান্তর, ১৩.১১.১৯৭১