You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.18 | ঢাকা ও চট্টগ্রাম পাক-সামরিক বিমান ভূপতিত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

ঢাকা ও চট্টগ্রাম পাক-সামরিক বিমান ভূপতিত
ভীত পাক কর্তৃপক্ষ ঢাকা শহরে কার্য্য জারী করেছে

কলকাতা, ১৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা গত কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি পাক সামরিক বিমানকে গুলিবিদ্ধ করে ভূপাতিত করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি অস্ট্রেলিয়ান জাহাজেরও ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। ভীত পাক কর্তৃপক্ষ ঢাকা শহরে কার্য্য জারী করেছে বলে অপর এক সংবাদ সূত্রে জানা গেল।
নয়াদিল্লী থেকে ইউএনআই জানাচ্ছে : পাকসামরিক বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা জনৈক মার্কিন সাংবাদিক স্বীকার করেছেন বলে ভয়েস অফ আমেরিকা থেকে প্রচারিত হয়েছে। ঢাকার ৮০ কিলােমিটার দূরে ঐ সফল তৎপরতা ঘটেছে বলে গেরিলাসূত্রে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু পাকসরকার তা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এটি একটি শিক্ষাকালীন দুর্ঘটনা।
মুজিবনগর থেকে ইউএনআই জানিয়েছে : চট্টগ্রাম রণাঙ্গনের গেরিলাদের গুলিবিদ্ধ বিমানটি কক্সবাজারের নিকট একটি নদীর পাড়ে এসে পড়ে। বিমান চালক নিহত হয়েছে। আরাে প্রকাশ, চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে গেরিলা আক্রমণে ব্যাপকতায় ভীত পাক কর্তপক্ষ চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরে জাহাজ চল করে রেখেছে।
গত ১২ নভেম্বর শ্রীহাট্ট রণাঙ্গনের সুনামগঞ্জে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু গেরিলারা ধ্বংস করে দেন। কিছুসংখ্য পাকদালাল ঘটনাস্থলে নিহত এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র গেরিলাদের দখলে এসেছে।
নয়াদিল্লী থেকে ইউএনআই জানিয়েছে বাঙলাদেশ মুক্তিযােদ্ধাদের প্রখর, তীব্র ও চকিত আক্রমণে হতবিহ্বল পাকিস্তান জঙ্গীশাহী ঢাকায় অনির্দিষ্টকাল কাফু জারি করেছেন এবং ঘরে ঘরে চলছে মুক্তিযােদ্ধা তল্লাসি।
আজ সকাল সাড়ে ৫টায় একেবারে হঠাৎ কা জারী হয়। দুনিয়াময় বেতারকেন্দ্রগুলি থেকে ঐ খবর প্রকাশ হয়ে যাবার পর পাকিস্তান বেতার আর চেপে রাখতে পারে নি। বারাে ঘণ্টা পর প্রকাশ করেছে। পরবর্তী এক সংবাদে জানা গেছে, কাফু প্রত্যাহৃত হয়েছে।
পাক বেতার থেকে দাবি করা হয়েছে, গতকাল পর্যন্ত ১৩৮ জন ভারতীয় চর’ ধৃত হয়েছে। অবশ্য ৩ জন মুক্তিযােদ্ধা ধরা পড়েছে সে কথা বলা হয় নি। তবে এ-পির এক প্রাথমিক সংবাদে জানা গেল, ৫০জনকে আটক করা হয়েছে। এ-পির ঐ সংবাদেই জানা গেল গত কদিন গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি পাবার ফলেই খোঁজাখুঁজির পালা শুরু হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে গতকদিনেই শতাধিক হতাহত হয়।
পাকিস্তান বেতারের এক ঘােষণায় গেরিলা আক্রমণের সাফল্য কার্যত: স্বীকৃত হয়েছে। ভারতীয় চরদের বেপরােয়া আক্রমণে অনেক নিরীহ লােক নিহত হয়েছে বলে পাকিস্তান বেতার ঘােষণার জানা গেল।
সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সংবাদে প্রকাশ, শহরে বিগত কদিন ধরেই পর পর বিস্ফোরণে ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি বিস্ফেরণে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভেঙে পড়েছে।
পাকিস্তান বেতার ঘােষণায় জানা গেল, চারজন তথাকথিত ভারতীয় চর’কে ধরার সময় সৈন্যবাহিনীকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সৈন্যরা তাদের গুলি করে মেরে ফেলেছে। এ সংবাদে প্রমাণ হয়, ধরা পড়ার আগেও মুক্তিযােদ্ধারা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সৈন্য বাহিনীকে প্রাণপণ বাধা দিচ্ছে।
এপি-র সংবদে জানা গেল, একদল লােক চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের একজন লােক চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের একজন পদস্থ কর্মচারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। উল্লেখযােগ্য, দু’সপ্তাহ আগে গেরিলারা ঢাকা বেতারের এক ইঞ্জিনিয়ারকে অনুরূপভাবে নিহত করেছিল।
বিবিসির সংবাদে জানা গেল, পূর্ববাঙলার ৬টি জেলাকে ব্রিগেডিয়ারের পরিচালনাধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। তবে জেলাগুলির নাম বা ব্রিগেডিয়ারের পরিচয় উল্লেখ করা হয় নি।
নয়াদিল্লী থেকে কেন্দ্রীয় সরকারী সূত্রে বলা হয়েছে যা ১৪ নভেম্বর পুঞ্চ এলাকা থেকে তিনবার গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। প্রথমে যুদ্ধ বিরতির রেখার ওপার থেকে পুঞ্চের পশ্চিমদিকে ভারতীয় ঘাঁটির উপর গুলিবর্ষণ করা হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি মেশিনগানের গুলি এসে পড়ে। তৃতীয়ক্ষেত্রে, ৩০টি রাইফেল এবং হালকা মেশিনগানের গুলি ছােড়া হয়েছে পুঞ্চ এলাকারই পশ্চিম ও দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রসংঘ সমীক্ষা দলের কাছে প্রতিবাদ করা হয়েছে।
গত রবিবার তিনবার যুদ্ধবিরতি রেখা ভঙ্গ করা হয়েছে। কাশ্মীর অধিকৃত অঞ্চল থেকে তিথওয়ালের উত্তর পূর্বাঞ্চলে নতুন বাংকার তৈরি, মেঞ্চরের পশ্চিমাংশে টেঞ্চ খনন এবং ঝাংগবের উত্তরে তার দিয়ে বাধাসৃষ্টির কাজ চলেছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসঙ্ঘর কাছে প্রতিবাদ জানানাে হয়েছে।
গত ১৪ ও ১৫ নভেম্বর রাত্রে পাকিস্তানী অন্তঘাতকারী শিলং-এর ২৮ মাইল দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে একটা কাঠের পুল বিধ্বস্ত করেছে। ১৩ ও ১৪ নভেম্বরের রাত্রে জালিয়ান পুরে জল সরবরাহ কেন্দ্রের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। ১৪ ও ১৫ নভেম্বরের রাত্রে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী বালুর ঘাটের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে খানপুরে ছােট অস্ত্র ও মর্টার নিয়ে গােলাবর্ষণ করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী এর প্রত্যুত্তর দিয়েছে। একদিন পূর্বাহ্নে বালুরঘাটের উত্তরে মদনপুর অঞ্চলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বিনা প্ররােচনায় গুলি চালিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কিসেনগঞ্জ এলাকার উত্তর-পূর্ব ফাঁড়িতেও তার ৮২ মর্টার নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে।
১৩ নভেম্বর পাকিস্তানী সেনা বাহিনী বেলােনিয়া অঞ্চলে হাল্কা ও মাঝারি মেশিনগান থেকে গুলি বর্ষণ করেছে। ঐ দিন ও অঞ্চলের জন্য এক অংশে তৈরি ৩ ইঞ্চি ৮১ এমএম মর্টার নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে।
১৪ নভেম্বর পাকিস্তানী সেনা বাহিনী ত্রিপুরার বক্সীনগর গ্রামে ১০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে ফলে ৭৫ জন শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছে।
মেঘালয়ে পাকসেনারা তুরার দক্ষিণ পশ্চিমাংশে ভারতের সীমান্ত বাহিনীর উপর ভারী মর্টার থেকে গুলি বর্ষণ করেছে।

সূত্র: কালান্তর, ১৮.১১.১৯৭১