যশােরের চূড়ামনকাটিতে বিদ্যুৎ ও রেল যােগাযােগ
বিচ্ছিন্ন :সমস্ত যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন
মুজিবনগর, ১০ নভেম্বর যশাের জেলার চুড়ামনকাটিতে গত ৩ নভেম্বর বহু বিদ্যুস্তম্ভ উঠিয়ে দিয়ে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যু সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ বুলেটিনে আজ এই সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। বুলেটিনে বলা হয়েছে যে, বাঙলাদেশের পাক অধিকৃত এলাকাগুলিতে মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতা আরাে ব্যাপক আকার নিয়েছে।
যশাের কুষ্টিয়া খুলনা রণাঙ্গনের খবর
গত মঙ্গলবার খুলনা জেলার বেতগাছি পাক বাহিনীর সঙ্গে গেরিলাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। ইতিপূর্বে গত ৮ নভেম্বর হানাদার সৈন্যরা কৈখালী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটির উপর আক্রমণের চেষ্টা চালিয়ে পর্যুদস্ত হয়। ঐ সংঘর্ষে ২ জন শত্রুসেনা নিহত এবং বহু সংখ্যক আহত হয়েছে। বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা গেল, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গােপালগঞ্জ মহকুমার কাশিয়ানী থানার ফোকুরাতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৫০ জনের উপর পাকসেনা এবং ১৫ জন রাজাকার নিহত হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর শাইপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনী ওজন রাজাকারকে ৪টি রাইফেলসহ গ্রেপ্তার করেছেন। গত ৩ নভেম্বর মুক্তিফৌজ রেল লাইন ধ্বংস করে দিয়ে যশাের জেলার চূড়ামনকাটি রেল যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী রণাঙ্গনের খবর :
গত ৬ নভেম্বর পাহাড়পুকুর এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজ ১০ জন পাকসেনাকে খতম করে দিয়েছেন। ঐ দিনের সংঘর্ষে ১ জন গেরিলা শহীদ হয়েছেন। ঐ দিন রংপুর জেলার করণাই এলাকায় ৮ জন রাজাকার ৫টি রাইফেল সহ ধর পড়েছে। গত ৭ নভেম্বর দিনাজপুর জেলার গােসাইগঞ্জ হাটে গেরিলাদের হাতে ১ জন পাকসেনা নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে। এ মাসের প্রথম দিকে গেরিলারা কালিগঞ্জ ভােটমারী এবং হাতবান্দা ভােটমারী’র মধ্যে রেল লাইন অপসারণ করে রেল যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
ঢাকা-কুমিল্লা চট্টগ্রাম রণাঙ্গনের খবর গেরিলা তৎপরতায় গত নভেম্বর কুমিল্লা জেলার মালদানদিতে ২ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে। ঐ দিন কহইমপুরে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। ২ নভেম্বর পচাগড়ে টহলদার পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা ৩ জন পাকসেনাকে খতম এবং ৪ জনকে জখম করেছেন। চণ্ডিদ্বার এলাকায় গত ৬ নভেম্বর মাইন বিস্ফোরণে ২ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে। ঐ দিন একই এলাকায় গেরিলাদের মর্টার আক্রমণে ২ জন পাকসেনা নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে। ৩ নভেম্বর নয়নপুরে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। আগের দিন ছন্দিলা এলাকায় ২জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা গেল, ঢাকা জেলার আড়াই বাজারে ২ জন রাজাকার রাইফেলসহ গেরিলাদের হাতে ধরা পড়েছে। কুমিল্লা জেলার মিঞাবাজারে ৪ জন পাকসেনা নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে।
ময়মনসিংহ-শ্রীহট্ট রণাঙ্গনের খবর : গত ৬ নভেম্বর ময়মনসিংহ জামালপুর মহকুমার মিলনদহ মামুদপুর এলাকায় ১২ জন পাকসেনা গেরিলা আক্রমণে নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে। ঐ সংঘর্ষে ১ জন মুক্তিফৌজও শহীদ হয়েছেন। ইতিপূর্বে ২৭ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৭ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানায় আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা গত ২৪ অক্টোবর ৫ জন শত্রুসেনাকে খতম এবং ১০ জনকে জখম করেছে। ১ জন মুক্তিযােদ্ধাও ঐ সংঘর্ষে শহীদ হয়েছেন।
সূত্র: কালান্তর, ১১.১১.১৯৭১