মুক্তিবাহিনীর হাতে ৫টি ট্যাঙ্ক ঘায়েল
মুজিবনগর, ২২ নভেম্বর বাঙলাদেশে সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর আক্রমণাত্মক অভিযান অপ্রতিরােধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। যশাের জেলার মেহেরপুরের কাছে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে পাকসেনাদের ৫টি মাঝারি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয় একটি পাক বােমারু বিমান পাকিস্তানী পদাতিক বাহিনীর সাহায্যে যখন টহল দিয়ে ফিরছিল ঠিক সেই মুহূর্তে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা গুলি চালিয়ে পাক বােমারু বিমানটিকে ভূপাতিত করে।
দক্ষিণে খুলনা যশাের থেকে উত্তরে রংপুর সিলেটে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পাকসেনাদের ১০টি শক্তিশালী ঘাঁটি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলায় মুক্তিবাহিনীর দুজয় অভিযানের মুখে বিপর্যস্ত পাকসেনারা আরও পশ্চাদভাগে ছুটে পালিয়ে যায়।
মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া জেলা ও যশােরের সীমান্তবর্তী ১৭০০ বর্গ কিলােমিটার এলাকা সম্পূর্ণ মুক্ত করেছে।
গেরিলা যােদ্ধারা পাকসেনাদের যে ঘাঁটিগুলাে দখল করেছে তর মধ্যে রয়েছে খুলনা জেলার কালিগঞ্জ সাতক্ষিরা এবং কালারােয়া, যশাের জেলার চৌগাছা, রংপুর জেলার অমরখানা, রায়গঞ্জ, হাতিবান্ধা বড়খাতা এবং সিলেট জেলার জাকিগঞ্জ এবং সাটগ্রাম।
পাকসেনাদের সঙ্গে ১৭ দিন ব্যাপী এক তীব্র সংঘর্ষের পর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা কুষ্টিয়া ও যশাের জেলার ১৪টি গ্রাম মুক্ত করেছে। ৭২ বর্গ কিঃ মিঃ পারমিত এই গ্রামগুলাে মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ দখলে।
মুক্তিযােদ্ধারা পাক দখলীকৃত এলাকা জীবননগর দর্শনার রাজপথ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং গেরিলাদের শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে। •
চুনি নদীর উত্তর তীরবর্তী অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মুক্তিবাহিনীর একটি দল মেহেরপুর দরবেশপুর রাস্তার অন্তবর্তী ৪টি স্থান দখল করে। ফলে ভৈরব নদের উত্তর পূর্বের ১০টি গ্রাম পাকসেনাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
মুক্তিযােদ্ধারা কুষ্টিয়া জেলার উত্তরে মহেশকান্দিতে অবস্থিত পাকসেনাদের শক্ত ঘাঁটি দখল করে নেয়। এই পরিস্থিতিতে পাকসেনারা তাদের এই ঘাঁটি থেকে পলায়ন করে এবং তারা গােয়ার দিকে দ্রুত পশ্চাদপসারণ করতে বাধ্য হয়।
সিলেটের এক সংবাদে বলা হয়েছে যে, সম্প্রতি মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পাকসেনাদের খাদ্য রেশন ভর্তি দুটো নৌকা দখল করে। ইতিপূর্বে এই এলাকায় গেরিলাদের আক্রমনে ৬ জন পাকসেনা ও ৭ জন রাজাকার নিহত হয়। চট্টগ্রাম থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, ১৭ নভেম্বর গেরিলারা পাক বেতারের জনৈক অফিসারের গাড়ী আক্রমণ করে এবং অফিসারটিকে খতম করে দেয়।
সূত্র: কালান্তর, ২৩.১১.১৯৭১