You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.22 | সারা বাঙলাদেশ জুড়ে মুক্তিবাহিনীর মরণপণ সংগ্রাম চলছে | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

সারা বাঙলাদেশ জুড়ে মুক্তিবাহিনীর মরণপণ সংগ্রাম চলছে

সারা বাংলাদেশ জুড়ে মুক্তিবাহিনী আজ মরণ পণ সংগ্রামে লিপ্ত। বাঙলাদেশ গেরিলাদের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘর্ষ হওয়ার ফলে পাকবাহিনী ক্রমশ হীনবল হয়ে পড়েছে। ঢাকা থেকে এ,পি, উক্ত মর্মে, সংবাদ দিয়ে জানাচ্ছে যে, কূটনৈতিক ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, পূর্ব বঙ্গের ১৪৩,০০০ বর্গ কিলােমিটার অঞ্চলের মধ্যে এক তৃতীয়াংশে আজ আর পাক সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব নেই। তবে ঐ অঞ্চলের সব এলাকাতেই এখনাে মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায় নি। ৮ মাস আগে যখন এই সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল তখন যতখানি অঞ্চল মুক্তি বাহিনীর স্বাধীন ছিল এখনাে পর্যন্ত ততখানি এলাকায় অধিকার স্থাপন করা যায় নি। পুলিশ ও সৈন্যবাহিনীর দলত্যাগীদের সাহায্য নিয়ে যে সময় কার্যত সমস্ত উত্তরবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চল এবং সীমান্তবর্তী বেশ কিছু স্থানে মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্ব ছিল।
এখন পূর্ববঙ্গের অভ্যন্তরে ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৫০ হাজারেরও বেশী মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা সক্রিয়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সাড়ে তিনটি ডিভিসন এবং সীমান্ত স্কাউটরা মিলে প্রায় ৮০ হাজার সৈন্য বর্তমানে গেরিলাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। পশ্চিম পাকিস্তানের ২,২৫০ কিলােমিটার দীর্ঘ সীমানা বরাবার খুব কমই সৈন্য রয়েছে।
ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ বাড়ছে
মুক্তিবাহিনীর যােদ্ধারা ঢাকায় আরও তীব্রতর ও খােলাখুলি আক্রমণ শুরু করেছে। শহরের পূর্বাঞ্চলে প্রত্যহ বােমা পড়ছে ও গুলি চলছে।
ধানমণ্ডির কাছে গ্রীন রােডকে মুক্ত অঞ্চল বললেই হয়। রাত্রিতে এখানে রাজাকার ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে প্রত্যহ লড়াই চলছে।
আওয়ামী লীগের নির্দেশ না মেনে যারা স্কুলে ছেলেদের পাঠাচ্ছে স্কুলে বােমা পড়ায় তাদের অনেকেই আহত হচ্ছে। খুলনায় শত্রুর গানবােট দখল করে মুক্তিবাহিনী চালনা বন্দরে আগত জাহাজের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এখনাে বাঙলাদেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিবাহিনীর প্রতি অনুগত। অনেকক্ষেত্রে পাকসৈন্যদের প্রতি প্রকাশ্যেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। যেখানে মুক্তিবাহিনী সক্রিয় যেখানে সৈন্যবাহিনী ও পুলিশের অত্যাচার তাদের দমাতে পারছে না।

সূত্র: কালান্তর, ২২.১১.১৯৭১