You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.22 | যশাের ক্যান্টনমেন্ট মুক্তিফৌজের সঙ্গে মুখােমুখি লড়াই | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

যশাের ক্যান্টনমেন্ট মুক্তিফৌজের সঙ্গে মুখােমুখি লড়াই
আসাম ও পশ্চিমবাঙলার সীমান্ত অঞ্চলে পাক-ফৌজের অবিরাম গােলাবর্ষণ
(স্টাফ রিপাের্টার)

যশাের, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী আজ পাকফৌজের সঙ্গে মুখােমুখি লড়াইয়ে নেমেছে। রবিবার দুপুরে যশাের ক্যান্টনমেন্টের ওপর মুক্তিবাহিনী যে প্রবল আক্রমণ শুরু করে সংবাদ লেখা পর্যন্ত তা অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। ঢাকা রেডিও এই আক্রমণকে “হিন্দুস্থান সৈন্যের তিনটি ব্রিগেডের আক্রমণ” বলে ঐ সংবাদের পরােক্ষ স্বীকৃতি দিয়েছে। লেঃ কর্নেল নিয়াজি যশাের রণাঙ্গনে আহতদের পরিদর্শন করেছেন। ঢাকা রেডিওর এই সংবাদ থেকে যশাের রণাঙ্গনে পাকফৌজের যে প্রচণ্ড ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে তাও স্বীকৃত হয়েছে।
বাঙলাদেশের মাটিতে মুক্তিবাহিনীর লড়াইকে ভারতের দিকে ঠেলে দেবার জন্য পাকফৌজ গতকাল থেকে আজ সারাদিন আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলের অসংখ্য গ্রামের ওপর গােলাবর্ষণ করছে। সরকারী সূত্রের সংবাদে বলা হয়েছে, আসামের করিমগঞ্জ, পশ্চিমবাঙলার বিষ্ণুপুর, গােবিন্দপুর, গেদে, বানপুর, মতিয়ার, টুঙ্গি, রাজাপুর, দৌলতগঞ্জ, জীবননগর প্রভৃতি এলাকায় পাকফৌজ অবিরাম গােলাবর্ষণ করে প্ররােচনা দিয়ে চলেছে।
সর্বশেষ সংবাদে জানা গেল, বনগাঁ, বাগদা ও গাইঘাটা থানায় সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। ইছামতি ও চূর্ণ নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ করেছে আর এক আদেশ প্রচার করা হয়েছে।
আজ দুপুরে বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকেরা বাঙলাদেশের যশাের শহরে অবস্থিত ইয়াহিয়া সৈন্যদের সেনানিবাস আক্রমণ করে এবং যশাের শহরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ইয়াহিয়া সৈন্যদের মুখােমুখি প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গিয়েছে। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে বহু পাকসৈন্য হতাহত হয়েছে এবং অনেক মুক্তিবাহিনীর সৈনিক ও বীরের মৃত্যু বরণ করেছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য দক্ষিণ বাঙলায় যশাের সেনানিবাসেই ইয়াহিয়া সৈন্যদের সর্ববৃহৎ ঘাঁটি
সংবাদে জানা যায় যে, যশাের জেলার চৌগাছা, মনিয়াপুকুর প্রভৃতি অঞ্চল পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর সৈনিকের দখলে চলে গেলে ইয়াহিয়া সৈন্যরা বেসামাল হয়ে পড়ে। চৌগাছা অঞ্চল ইয়াহিয়া সৈন্যদের সেনানিবাস থেকে মাত্র ৭ মাইল দূরে। ফলে ইয়াহিয়া সৈন্যকে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে ঐ মুক্তাঞ্চলে বেপরােয়া আক্রমণ শুরু করে এর জবাবে মুক্তিবাহিনীরও দুইদিক থেকে যশাের সেনানিবাসের ওপর গােলাবর্ষণ শুরু করেছে এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ইয়াহিয়া সৈন্যদের মুখােমুখি লড়াইয়ে শুরু হয়েছে। সর্বশেষ সংবাদে জানা গেল মুখখামুখি লড়াই ইয়াহিয়া সৈন্যর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সুবিধা না করতে পেরে বর্তমানে জঙ্গী বিমানের সাহায্য নিচ্ছে।

সূত্র: কালান্তর, ২২.১১.১৯৭১