You dont have javascript enabled! Please enable it!

যশাের ক্যান্টনমেন্ট কার্যত অবরুদ্ধ
মুক্তিবাহিনীর কপােতাক্ষ নদী অতিক্রম
বারাে হাজার বর্গ কিঃ মিঃ অঞ্চলে অসামরিক প্রশাসন
(স্টাফ রিপাের্টার )

২৫ নভেম্বর- সাতক্ষীরা মহকুমা সম্পূর্ণ মুক্ত। মুক্তিবাহিনীর সাতক্ষীরা এলাকার সর্বত্র পাকসেনাদের অবশেষ নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে খুলনার দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে বাঙলাদেশের বার হাজার বর্গ কিলােমিটার এলাকায় বাঙলাদেশ সরকারের অসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙলাদেশ সূত্র থেকে পাওয়া সংবাদে জানা গেল, সাতক্ষীরা থেকে রাজারহাট মােড়ের দিকে দুর্বার এগিয়ে যাবার পথে মুক্তিবাহিনী ইতিমধ্যে কেশবপুর ও মনিরামপুর হানাদার ফৌজের কবল মুক্ত করেছে। যশােরের পাশ দিয়ে মুক্তিবাহিনীর আর একটি অংশ ঝিনাইদহের দিকে যাচ্ছে। ফলে যশাের ক্যান্টনমেন্ট কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। যশাের ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটলে যশাের, খুলনা, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও ফরিদপুর এই পাঁচটি জেলা সম্পূর্ণরূপে পাক হানাদারদের কবল মুক্ত হবে। সেদিক থেকে মুক্তিবাহিনীর বর্তমান অভিযান সফল হলে প্রথমেই খুলনা জেলা মুক্ত হবে। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া জেলার মহেশপুর মুক্তিবাহিনীর দখলে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা মহেশপুরের অগ্রবর্তী শত্রুসেনাদের ঘাঁটি চূর্ণ বিচূর্ণ করে চিত্রা নদীর দক্ষিণ পাড়ে নিজেদের ঘাঁটি সুদৃঢ় করেছে। ঝিকরগাছা থেকে পাকসেনাদের উৎখাত করে মুক্তিবাহিনীর গেরিলায় যশোের ক্যান্টনমেন্টের উপর ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছে। গতকাল রাতে মুক্তিবাহিনী পাক ব্রিগেডের চলাচল কেন্দ্র ঝিনাইদহকে যশাের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। মুক্তিবাহিনী কপােতাক্ষ নদী পার হয়ে যশাের শহরের উপকণ্ঠে চার মাইল দূরে গিয়ে পৌঁছেছে। অপরদিকে মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা এবং ফরিদপুর জেলার মাদুরার দিকে পাক সেনাদের পশ্চাদপসরনের গুরুত্বপূর্ণ পথ অবরােধ করেছে। আজ সন্ধ্যায় প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা যায় যে, মেহেরপুর দখলের জন্য জোর লড়াই চলছে। মেহেরপুরের পতন আসন্ন। তাই পাক সেনারা চান্দবিল গ্রামের দিকে ছুটে পালাচ্ছে। যশাের, খুলনা, কুষ্টিয়া জেলার সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর বিজয় অভিযান চলছে। এক সাতক্ষীরা শহরেই চার হাজারের বেশি গেরিলা যােদ্ধা মােতায়েন রয়েছে। বহু সংখক রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছে। এই অভিযানে ৪টি চীনা লাইট মেসিনগান রকেট লঞ্চার এবং প্রচুর গােলাবারুদ মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়। উত্তর বাঙলাদেশের দিনাজপুর ও রংপুরে প্রায় ৫শ বর্গ কিলােমিটার এলাকায় মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে সুস্থ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা চলেছে। পুর্ব দিনাজপুরের দিকে মুক্তি বাহিনীর সুসংহত এবং ধীর অগ্রগতির অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণের মুখে ঝাকুয়াখালি থেকে পাকসেনারা দ্রুত পশ্চাদপসরণ করে চলেছে। ইতিপূর্বে পাকিস্তানি সেনারা একটি আমের বাগানে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন করেন। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের দুর্ধর্ষ আক্রমনে নাজেহাল পাক হানাদারদের লালডাং এর পথে দিনাজপুর শহরের দিকে ছুটে চলেছে। গেরিলারা এই জেলার পচাগড় শহরটি দখল করে নেয় এবং মিবুঘর বরসই এর ডানাকাটাতে পাক সেনাদের ব্রিত করে তােলে। তিনদিন প্রচন্ড লড়াইয়ের পর গেরিলারা এই জেলার খানপুর থানা সম্পূর্ণ দখল করে। রংপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহর লালমনিরহাটে সর্বত্র ব্যাপক গেরিলা তৎপরতা চলছে। বাসুরা ও ফুলছড়িঘাটের মধ্যবর্তী স্থানে গেরিলারা একটি সামরিক ট্রেনের উপর অর্তকির্তে আক্রমণ চালায়। ফলে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর সদরদপ্তর থেকে প্রাপ্ত এক রিপোের্টে বলা হয়েছে: গতকাল রাত্রিতে নােয়াখালী জেলার বাক্সরহাটে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। বাক্সরহাট এলাকা মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ দখল করে দিয়েছে। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকসেনাদের জোর সংঘর্ষ চলছে।
বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা
বাঙলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র জানান: মুক্তিবাহিনী ১২ হাজার বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা নিজেদের পূর্ণ শাসন কায়েম করেছে এবং ৪৫ টি থানায় অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এসব অঞ্চলে বাঙলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায়ের কাজও চালু করা হয়েছে।

সূত্র: কালান্তর, ২৬.১১.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!