You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.28 | শ্যাফে ট্যাংকের সমাধিক্ষেত্র গরীবপুর | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

শ্যাফে ট্যাংকের সমাধিক্ষেত্র গরীবপুর
(স্টাফ রিপাের্টার)

বয়ড়া (২৪ পরগনা) ২৭ নভেম্বর- পশ্চিমবঙ্গ যশােরের সীমান্তবর্তী ভারতের বয়ড়া গ্রামে পাকিস্তানী আক্রমণের জবাব দিয়েছিল ভারতীয় বাহিনী ২১ নভেম্বর সীমান্ত অতিক্রম করে ৫ মাইল দূরে গরীবপুর গ্রামে এক স্কোয়াড্রন মার্কিন নিয়মিত পাকিস্তানী শ্যাফে ট্যাংক ঘায়েল করে। আক্রমনের জবাব দেবার পর ভারতীয় ফৌজের প্রতিটি মানুষ ভারতীয় সীমানার মধ্যে ফিরে এসেছে। আজ কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলােমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গ্রাম বয়ড়াতে বিদেশী ও ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জৈনিক মুখপাত্র এই কথা জানান। ভারতের সীমানায় পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া তিনটি অক্ষত ট্যাংক এবং পাকস্তানীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রচুর মার্কিন ও চীনা অস্ত্র-শস্ত্র তিনি সাংবাদিকদের দেখান। পাকিস্তানীদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৫০ ক্যালিবার ও ৩০ ক্যালিবারের ৯ টি মেসিনগান, একাধিক রকেট ও রকেট লঞ্চার, ৭৩ মিঃমিঃ ট্যাংক বিধ্বংসী গ্রেনেড, হাতবােমা ১০৩ মিঃ মিঃ কামানের গােলা, ৮১ মিঃ মিঃ মর্টার, ২ ইঞ্চি মর্টার বােমা, ৭৬২ চীনা রাইফেল, ধোঁয়া সৃষ্টির বােমা, ট্যাংকের গােলা, প্রচুর রাইফেল ও মেসিনগানের বুলেট। এক কথায় ট্যাংক ও সাজোয়া বাহিনীর সঙ্গে পুরাে অস্ত্র সজ্জিত পদাতিক বাহিনী যে ভারতের উপরে ক্রমণ চালাবার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছিল, তার সাক্ষী এই অস্ত্র শস্ত্র থেকে পাওয়া যায়।
ট্যাংক ঘায়েলের কাহিনী
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ২১ নভেম্বর গরীবপুরে ভারতীয় ও পাকিস্তানী ফৌজের মধ্যে ট্যাংকের লড়াইয়ের পটভূমি ব্যাখ্যা করে বলেন, তার তিন দিন আগে থেকেই পাকিস্তানী সাঁজোয়া বাহিনী হালকা শ্যাফি ট্যাংক নিয়ে পূর্ব বাঙলার সীমান্তে খড়ির মতাে অবস্থিত বয়ড়ার বাঁদিকে “আমাদের অবস্থানের ১৫০০ গজের মধ্যে এসে পড়ে, গােলাগুলি মেরে স্থানীয় অধিবাসীদের অতিষ্ঠ করে তােলে, তৃতীয় দিনে খবর পাওয়া যায় যে চৌগাছা থেকে এক স্কোয়াড্রন পাকিস্তানী ট্যাংক বয়ড়ার দিকে এগিয়ে আসছে। ২০-২১ নভেম্বর রাতে এই সব পাকিস্তানী ট্যাংকের ভারতীয় সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসার আওয়াজ স্পষ্ট শােনা যায়। তারা সীমান্তের ওপার থেকে গােলা বর্ষণ শুরু করে ভারতের এলাকায়। এই সময় ভারতের সােভিয়েত নির্মিত পি টি ৭৬ ট্যাংকের একটি স্কোয়াড্রনকে নির্দেশ দেওয়া হয় বাড়ার ডান দিক দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানী ট্যাংক বাহিনীর মােকাবিলা করতে। ভারতীয় ট্যাংক বাহিনী কিছু দূর অগ্রসর হবার পরই পাকিস্তানীরা টের পায় যে, পেছন থেকে ভারতীয় বাহিনী দ্বারা ঘেরাও হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারাও দ্রুত পিছু হটতে থাকে এবং বাঙলাদেশ সীমান্তের মধ্যে বয়ড়া থেকে ৫ মাইল দূরে গরীবপুর গ্রামে ভারতীয় ট্যাংক বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানী ট্যাংকের মুখােমুখি সংঘর্ষ হয়। সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত এখানে ট্যাংকের লড়াই চলে। লড়াইয়ের শেষে দেখা যায় ১১ টি পাকিস্তানী শ্যাফে ট্যাংক বিধ্বস্ত। নিহত হয়েছে ৭৬ জন পাকিস্তানী সৈন্য। এছাড়া বয়ড়ার পশ্চিম দিক দিয়ে সম্ভবত ভারতীয় বাহিনীকে পিছন থেকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে ভারতের ঢুকে পড়া তিনটি ট্যাংকও পাকিস্তানীরা ফেলে পালিয়ে যায়। ভারতের তরফে ছিল ১৪ টি ট্যাংক, একটি ট্যাংকের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। উক্ত মুখপাত্র আরও জানান, এই ট্যাংকযুদ্ধের শেষে ভারতীয় বাহিনী যখন পুরানাে অবস্থানে ফিরে আসছিল, সেই সময় ৪টি পাকিস্তানী স্যাবার জেট থেকে গুলি বর্ষণ শুরু হয় এবং তারা ভারতের আকাশ সীমার মধ্যে ঢুকে পড়ে। ভারতের ন্যাট বিমান তাদের প্রতিরােধ করলে তিনটি স্যাবার বিধ্বস্ত হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, পশ্চিম থেকে যে তিনটি পাকিস্তানী ট্যাংক ঢুকেছিল চৌগাছার সঙ্গে ভারত সীমান্ত সংযুক্তকারী সেতুটি বিধ্বস্ত হবার দরুণ তাদের ফেরাবার রাস্তা ছিল না। তাই পাকিস্তানীরা ঐ ট্যাংক অক্ষত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়।

সূত্র: কালান্তর, ২৮.১১.১৯৭১