You dont have javascript enabled! Please enable it!

পলায়ন পাকিস্তানীরা পােড়ামাটি নীতি নিচ্ছে
রাধানগর, তাহেরপুর, টাঙ্গাইল পাক কবলমুক্ত

কলকাতা, ৩০ নভেম্বর-পলায়ন পাকিস্তানী সৈন্য এখন বিভিন্ন এলাকায় ‘পোেড়া মাটি’ নীতি অবলম্বন করছে। আগরতলা থেকে ইউ এন আই জানাচ্ছে, গত সপ্তাহে পার্বত্য চট্টগ্রামের পঞ্চারি এলাকার মুক্তিবাহিনী গেরিলাদের অগ্রগতির মুখে পাকিস্তানীরা সেখান থেকে ২৮ কিলােমিটার দূরে খাগড়াছড়িতে পিছু হঠবার পথে এই পােড়ামাটির নীতি অবলম্বন করে পঞ্চারি ও খাগড়াছড়ির মধ্যবর্তী পথের সমস্ত সেতু ধ্বংস করে গিয়েছে। একই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৮ মাইল দূরে যশাের জেলার চৌগাছাতে ঘটেছে। সেখান থেকে আসার আগে এই কেন্দ্রটিকে পাকিস্তানীরা শশ্মানে পরিণত করে গিয়েছে।
ইতিমধ্যে ভারত সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় পাক সৈন্যদের প্ররােচনামূলক গােলাগুলি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। নদীয়া জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম গেদেতে আজ সকালে পাকিস্তানীরা সীমান্তের ওপারে দর্শনা হল্ট স্টেশন থেকে গােলাবর্ষণ করে। ফলে একজন বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানিরা ত্রিপুরা কাছাড় সেক্টরে খােয়াহ, রাধাকিশােরপুর, বেরােনিয়া, করিমগঞ্জের কাছে ৫টি জায়গায় এবং পশ্চিমবঙ্গের হিলি, বালুরঘাট ও বসিরহাট এর কাছে ৪টি জায়গায় গােলাবর্ষণ করে। গতকাল ত্রিপুরার খােয়াইতে একদল পাকিস্তানী রাজাকার অনুপ্রবেশ করে তিনজন মহিলাসহ চারজন ভারতীয়কে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ইতিমধ্যে বাঙলাদেশের বালুরঘাট হিলি এলাকায় পাকিস্তানীদের পাল্টা আক্রমণ ভারতীয় বাহিনী প্রতিহত করেছে। গত শনিবার ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের অসামরিক এলাকায় প্রচন্ড পাক গােলাবর্ষণের পর ভারতীয় বাহিনী আত্মরক্ষামূলক অভিযান চালালে পাকিস্তানীরা এই পাল্টা আক্রমণ করে। পাকিস্তানীরা হিলি এলাকায় ভারতের উপর আক্রমণ চালাবার জন্য এক স্কোয়াড্রন (১৪টি) ট্যাঙ্ক নিয়ে এসেছিল। তার ৪টি ঘায়েল হয়েছে। এই এলাকায় আজও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানী সংবাদেও উত্তরে পচাগড় শহরে তাদের ফৌজ ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের কথা স্বীকৃত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী এখানে পাক প্রতিরক্ষাবুহ্য ভেদ করে শহরে ঢুকছে বলে ইউ এন আই জানাচ্ছে। মুক্তিবাহিনী এখন রংপুর ও দিনাজপুরের উপরে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করছে। শ্রীহট্টের মুক্তিবাহিনীর গৌরীপুর অভিমুখী অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং যশােরের উপরে আক্রমনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাওয়ালপিন্ডিতে জৈনিক পাকিস্তানী সরকারী মুখপাত্রও স্বীকার করেছেন “বিদ্রোহী”-দের কিছুটা… হয়েছে।
ঢাকায় আবার গণহত্যা
ঢাকা থেকে সংবাদে প্রকাশ, পাক দখলদার বাহিনী ঢাকা শহরের চারপাশের গ্রামগুলি বিধ্বস্ত করে অনুমানিক ৩০০ মানুষকে হত্যা করেছে। উদ্দেশ্যঃ মুক্তি বাহিনীর কমান্ডােদের অভিযান রােধের জন্য ঢাকা শহরের চারপাশ ঘিরে তিন কিলােমিটার গভীর একটা নিরঙ্কুশ প্রতিরক্ষাব্যুহ তৈরি করা। এই সব গ্রামের যারা কোনাে ক্রমে বাঁচাতে পেরেছেন, তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রায় ৫০০ পাক ফৌজ তিন দফায় একের পর এক গ্রাম ধূলােয় মিশিয়ে দিয়েছে। বাড়িগুলাের ওপরে হাত-বােমা ছোড়ে। যারা সেই বােমার বিস্ফোরণে মরে নি, তাদের গুলি করে মারা হয়েছে।
মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি
বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনী সামরিক গুরুত্বসম্পন্ন বিলকোণা গ্রাম দখল করার পর আজ সকালে কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর ও নাতুদহ-র মধ্যবর্তী সড়ক সেতু বিচ্ছিন্ন করে দু’দিকের পাক ফৌজের মধ্যের যােগাযােগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। নাতুদহে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানি মুক্তিবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণের ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। জীবননগর থেকে মুক্তিবাহিনীর একটি অংশ যশােরের কোটচাঁদপুর অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। মুক্তিবাহিনী উত্তর বাঙলাদেশের রাধানগরও পাক কবল মুক্ত করেছে। শ্রীহট্ট জেলার তাহেরপুর থানা অঞ্চল এবং টাঙ্গাইল জেলা শহরও মুক্ত হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর বুলেটিনে জানান হয়েছে, এখন মির্জাপুর, টাঙ্গাইল সড়ক মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ঢাকার টাঙ্গাইল রােডের ৬টি সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় সেই রাস্তাও ব্যবহারের অযোেগ্য।

সূত্র: কালান্তর, ১.১২.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!