দখলদার বাহিনী
নদীপথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে
ভারত ও বাঙলাদেশের বাহিনীর মিলিত অভিযানের মুখে কুমিল্লা ব্রাক্ষণবাড়িয়া মুক্ত
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ৮ ডিসেম্বর—ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বাঙলাদেশের অব্যাহত অভিযানের মুখে আরাে অনেকগুলাে পাকঘাঁটির পতন হয়েছে। ভারতীয় ফৌজ কুমিল্লার বিমানবন্দর দখল করেছে এবং ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়া মুক্ত হয়েছে। যশাের সেক্টরে গুরুত্ব রেলপথ কেন্দ্র মাগুরা শহরও আজ ভারতীয় বাহিনীর দখলে এসেছে। যশাের থেকে আর একটি বাহিনী সাতক্ষীরা দখল করে খুলনার দিকে এগিয়ে চলেছে। আর ঢাকা থেকে ৩০ মাইল দূরে দাউদকান্দিতে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে পাক বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। চারদিক থেকে মার খেয়ে পাকিস্তানী ফৌজ পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালে সমবেত হবার চেষ্টা করছে বলে জানা গেল। আরাে জানা গেল, পাকিস্তানী বাহিনী তাদের ছােট, মাঝারি ও বড় রণতরীর একটি বহর নারায়নগঞ্জের কাছে সমবেত করছে। অন্যদিকে পাক জঙ্গীর কর্তারা রেঙ্গুন থেকে কতগুল সি-১৩০ বিমান ঢাকায় পাঠাবার চেষ্টা করছে। এই বিমানগুলি ১৫০০ গজ দীর্ঘ রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে। ভারতীয় বিমান হানায় ঢাকার ৩০০০ গজ দীর্ঘ রানওয়ে বিধ্বস্ত। পাক বাহিনী মরিয়া হয়ে অন্তত ১৫০০ গজ রানওয়ে মেরামত করার চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য হলাে, এ বিমান নামিয়ে তাতে চেপে পালানাে। অন্যদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনী ও নৌ-বাহিনী রেঙ্গুন থেকে ঐ বিমানগুলির আসা বন্ধ করতেও বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে বাঙলাদেশে পাক ফৌজের অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজ সপরিবারে ঢাকা থেকে বিমান চেপে পালিয়েছে বলে এখানে সামরিক দপ্তরে খবর এসেছে। আজ পূর্ণ রণাঙ্গনে যুদ্ধ পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা সাংবাদিকদের জানিয়ে ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ণ কমান্ডের মুখপাত্র বলেন, বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযােগে ভারতীয়বাহিনী অভিযান চালিয়ে খুলনা জেলার মহকুমা শহর সাতক্ষীরা এবং কলারােয়া দখল করে খুলনার দিকে এগিয়ে চলছে। অন্যদিকে যশাের সম্পূর্ণ শত্রু কবলমুক্ত করার পর ভারতীয় বাহিনী খুলনার পথে রূপদিয়া দখল করেছে। যশাের থেকে উত্তর দিকে আর একটি বাহিনী এগিয়ে গতকাল ঝিনইদহ দখল করার পর আজ লেবুতলা মাগুরা দখল করেছে। মাগুরা দখল করার ফলে পাক ফৌজের দক্ষিণ দিকে এগুবার বা দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাবার পথ অবরূদ্ধ হলাে।
সূত্র: কালান্তর, ৯.১২.১৯৭১