You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.12 | ফরমান আলি ইয়াহিয়া মতভেদ | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

ফরমান আলি ইয়াহিয়া মতভেদ

ঢাকার দিকে মিলিত বাহিনীর সর্বাত্মক অভিযানে পাক-সামরিক মহন্ন বিভ্রান্তি
মুক্তিবাহিনীর ও ভারতীয়বাহিনী সম্মিলিতভাবে ঢাকার দিকে এগিয়ে চলেছে। মুক্ত অঞ্চলের বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে খবর আসছে বিচ্ছিন্নভাবে ফাঁদে আটক পড়া দখলদারী সৈন্যরা দলে দলে আত্মসমর্পণ করছে। অফিসর, জুনিয়র কমিশনড় আফসার সমেত প্রায় ২০০০ হাজার পাকসৈন্য শনিবার যেদিন শেষ হল সেদিন থেকে চব্বিশ ঘণ্টায় স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব বরণ করেছে।
চতুর্দিকে পরাজয়ের সংবাদে এবং রাওয়ালপিণ্ডির সঙ্গে সংযােগ ছিন্ন হওয়াতে ঢাকায় সামরিক জুন্টার প্রতিনিধিরা বিচলিত। নয়াদিল্লী থেকে ইউএনআই জানিয়েছে পূর্ব বাঙলার গভর্ণর ডাঃ এ, এম, মালিকের সামরিক উপদেষ্টা লেঃ জেনারেল ফরমাল আলি ইসলামাবাদকে উপক্ষো করে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার জন্য সােজা জাতিসঙ্ঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তড়িঘড়ি ঐ তারবার্তা নাকচ করার জন্য জাতিসকে অনুরােধ করেছেন।
দলে দলে আত্মসমর্পণ : ময়মনসিংহ, জামালপুর, কুষ্টিয়া, হিলি, রংপুর মুক্ত ভারতের সেনাপতি আরও একবার জেনারেল ফরমান আলিকে ও তার সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আর, শনিবারই মুক্তি ও ভারতীয় বাহিনী হিলি, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, জামালপুর, গাইবাধা, ফুলছড়ি, বাহাদুরিয়া, দুগাদিকি, পিসাপাড়া, বিভারাম এবং চণ্ডিপুর মুক্ত করেছে। সবাই চলেছে এখন ঢাকার দিকে।
ঢাকা থেকে সম্মেলিত বাহিনী এখন কতদূর? সাংবদিকদের প্রশ্নের জবাবে, ইষ্টার্ন কমান্ডের জনৈক মুখপাত্র বলেন, দুরত্বটাই প্রশ্ন নয়। বিভিন্ন দিক থেকে দলে দলে সৈন্যরা এগিয়ে চলেছে তাদের সামনে নদী এবং অন্যান্য বাঁধাই হলাে বড়।
তবে ঐ মুখপাত্রটি বলেন মেঘনার পশ্চিমে এবং ভৈরববাজারের দক্ষিণে হেলিকপ্টারে করে সৈন্য নামিয়ে দেওয়ার কাজ ভালই চলছে। ভৈরববাজার হলাে ঢাকা যাওয়ার প্রধান পথ।
এখানে যে পাকসৈন্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পিছু হঠছিল তারা শুক্রবার মেঘনার ওপর ভৈরববাজারের কাছের সেতুটি ধ্বংস করে দেয়।
যে সম্মিলিত বাহিনী ময়মনসিংহ মুক্ত করে দক্ষিণদিকে ঢাকা অভিমুখে রওনা হয়েছে তাদের সামনে কোন বড় বাধা নেই। যশােরখণ্ডের সৈন্যরাও মধুমতী নদী পেরিয়ে উত্তরদিকে ঢাকার পথে যাচ্ছে।
যশাের থেকে মুক্তি ও ভারতীয় বাহিনীর আর একটি দল দক্ষিণ দিকে খুলনার পথে এগােচ্ছে। এরা খুলনা শহর থেকে ১৫ কিলােমিটার দূরে আছে। খেন দৌলতপুরে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৯ কিলােমিটার দূরে লড়াই চলছে। দৌলতপুর খুলনা থেকে ৬ কিঃ মিঃ দূরে।
ঐ মুখপাত্রটি জানান মুক্তিবাহিনী শুক্রবার নােয়াখালি মুক্ত করে।
ময়মনসিংহ
সামরিক মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান যে শনিবার বেলা সাড়ে বারটায় ভারতীয় বীর জওয়ানরা ব্রহ্মপুত্র নদী পেরিয়ে অতর্কিতে সামনে পেছনে আক্রমণ করে ময়মনসিংহ জেলার জামারপুরে পাকবাহিনীকে হতচকিত করে দেয়। লেঃ কর্নেল সুলতান আমেদ সহ ৫৮১ জন পাকসৈন্য আত্মসমর্পণ করে। ছয়টি ১২০ কিঃ মিঃ মর্টার, আটটি ১০৫ মিঃ মিঃ মর্টার, ৭২টি এল এম জি ভারতীয় ফৌজ দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে আহত পাক সৈন্যদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত ভারতীয় বাহিনীই করছে। লাকসাম এবং চাঁদপুরে ২৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের লেঃ কর্নেল আসরাফ আলি সৈয়দসহ ৪০০ পাকসৈন্য ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে।
ঐ মুখপাত্র জানান ভারতীয় বাহিনী দিনাজপুর জেলা হিলিকে মুক্ত করেছে। পাকফৌজ পিছু হটে যাবার আগে গঙ্গার উপরে হাডিন্স সেতুটি উড়িয়ে দিয়ে গেছে। এই সেতুটি ১৯৩০ সালে তৈরি হয়েছিল।
ফরমাস আলির আরাজ
নয়াদিল্লী থেকে ইউএনআই ইতিপূর্বে জানিয়েছিল, লেঃ জেনারেল ফরমান আলি ঢাকাস্থ জাতিসংঘ প্রতিনিধি মারফত ঐ মহাসচিব উত্থান্টের কাছে এক বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তিনি ঐ বার্তায় ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা করতে অনুরােধ করেছিলেন। ঐ সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের ফেরত…

সূত্র: কালান্তর, ১২.১২.১৯৭১