২৫ থেকে ২৮ মার্চ পাবনার মুক্তি সংগ্রামের দিনপঞ্জী
(পাবনা থেকে আমাদের সংবাদদাতা প্রেরিত)
ঢাকাতে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের প্রধানের সাথে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের আলােচনার ব্যর্থতা ঘােষণার পূর্বেই ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারের বাহিনী বাঙলাদেশের অন্যান্য স্থানের মত পাবনা শহরেও বিগত ২৫ মার্চ শেষ রাতে প্রবেশ করে। সেখানে তার মানসিক হাসপাতালের সন্নিকটে শিল্প এলাকায় আশ্রয় নেয়। পরদিন ভােরে তারা সারা শহরে টহল শুরু করে একই সাথে রাস্তায় নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের প্রতি গুলিবর্ষণও শুরু করে। ফলে অজ্ঞাতনামী কয়েকজন রাস্তায় নিহত হয়।
ইতিমধ্যে সরকারী প্রচার বিভাগের সহযােগিতা না পাওয়াতে তারা নিজেরাই কারফিউ হ্যায়কারফিউ হ্যায় ঘর যাও” প্রচার করতে থাকে।
২৬ মার্চ
সেদিন শুক্রবার বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিন সামরিক বাহিনীর অতর্কিত হস্তক্ষেপে সস্ত্রস্ত মানুষ সেদিন আর বাজারে যেতে পারেন নি বাজারও বসে নি। সারাদিন শহরে সন্ত্রাস ও কবরের নীরবতা বিরাজ করতে থাকে।
ইতিপূর্বে তারা পাবনার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন প্রধান ডাকঘর প্রভৃতিতে পজিশন নিয়ে ফেলেবেসামরিক লােকজনকে হটিয়ে দেয়।
চলতে থাকে সারা শহরে মুক্তি বাহিনীর গােপন তৎপরতা। তারা আক্রমণ চালাবার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
শুক্রবার রাতে কতিপয় বিশ্বাস ঘাতক লােকজনের সহায়তায় সামরিক বাহিনী স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু বেশির ভাগকেই তারা পায় না। তারা পূর্বাহ্নেই সরে গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র সদর মহকুমা আওয়ামী লীগ সম্পাদক এবং এমপি এ জনাব আমিনুদ্দিন আহমেদ ভাষানীপন্থী ন্যাপের ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু সাইদ তালুকদার, একজন রাস্তার পাগল (রাজেন পাগলা) ও জৈনিক পৌর কর্মচারীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। রাস্তা থেকে আরও বেশি সাধারণ লােককে গ্রেফতার করেছিল কিন্তু ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে মারধর করে পরে তাদের মুক্তি দেয়।
শুক্রবার তারা পুলিশ লাইনে গিয়ে অস্ত্রশস্ত্র সামরিক বাহিনীকে দিয়ে দিতে বলে। কিন্তু তারা পুলিশ সুপারের নির্দেশ না পেলে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়।
২৭ মার্চ
শনিবার সারাদিন কার্ফু বলবৎ থাকে। হাট বাজার বন্ধ কিন্তু মুক্তি বাহিনীর গােপন প্রস্তুতি অব্যাহত তাকে। এই দিন সামরিক বাহিনী ও সারা শহরে টহল চালু রাখে। সকালে গণ-সংযােগ অফিসারকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় বন্দুকের নলের ডগায় তাকে বিভিন্ন নির্দেশ প্রচার করতে বাধ্য করে।
সন্ধ্যায় তারা গিয়ে পুলিশ লাইন ও ম্যাগাজিন আক্রমণ করলে তার প্রতিহত হয়। ফিরে যায় তখনকার মত। কিন্তু অজস্র গুলিগােলা চালয়। ফাকা আওয়াজও করে শহরের সকল প্রান্তে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করে।
শেষ রাতে আবার সামরিক বাহিনী এসে পুলিশ লাইন ও ম্যাগাজিন আক্রমণ করে।
পুলিশ বাহিনীও সারারাত প্রস্তুত ছিল তারা বীরত্বের সাথে এ আক্রমণে প্রতিরােধ করে। সামরিক বাহিনীর কয়েকজনের মৃত্যু ঘটে বাঙালী পুলিশের গুলিতে নাস্তানাবুধ সামরিক বাহিনী পিছু হতে বাধ্য হয় ইতিমধ্যে জনৈক বিশ্বাসঘাতক পুলিশকেও মুক্তি বাহিনীর পুলিশেরা গুলি করে হত্যা করে সে গােপনে সাময়িক বাহিনীকে খবর দিচ্ছেল।
সূত্র: কালান্তর, ৮.৪.১৯৭১