You dont have javascript enabled! Please enable it!

দিনাজপুরে অস্থায়ী সরকারের দেশে দুই দিন
(স্টাফ রিপাের্টার)

৪ঠা এপ্রিলের সকাল দশটায় প্রবেশ করলাম “ৰাঙলাদেশের দিনাজপুরে। যে গাড়িতে যাচ্ছিলাম সেই গাড়ী। এবং গাড়ীর চালক দুইই পূর্ব বাঙলার। কখনও মেঠো পথ কখনও পিচের রাস্তা কখনও বা ব্যারিস্টকে এগিয়ে গাড়ী সােজা এসে পৌঁছল মুন্সিপাড়ায়। অস্থায়ী সরকারে “কন্ট্রোল রুমের সামনে। হলুদ রং এর একতলা বাড়ীটার বাইরে বাঙলায় বড় করে লেখা “কন্ট্রোল রুম” সামনের লনে দুটো জীপ। জীপে দু’জন মুক্তিযােদ্ধা দাঁড়িয়ে। হাতে বন্দুক।বাকীরা বসে। হাতে তারে রাইফেল। জীপের গায়ে স্বাধীন বাঙলার পতাকা উড়ছে।
কন্ট্রোল রুমে ঢুকেই পরিচয় হ’ল কমরেড় গুরুদাস তালুকদারের সঙ্গে। ৭২ বছরেও অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারী-এক মাথা সাদা-চুলের সরল মানুষটি হেসে বললেন, কালান্তরের রিপাের্টার? একেবারে কলকাতা থেকে বেশ বেশ। শ্রীলুকদার বললেন, অস্থায়ী সরকার কাজ দিয়েছে। সর, এখনও, গুছিয়ে উঠতে পারি নি আমরা। হঠাৎ একজন দৌড়ে এসে গুরুদাসবাবুকে বললেন, দাদা.বড় অইয়ের সঙ্গে উনি কথা বলবেন, সেই উনি (নাম ছাপান আপাততঃ..ঠিক নয়) ঈষৎ,ভুলে চেহারা, গায়ে চড়ানাে খাকি পােষাক, মাথায় হেমলেট, কাঁধে রাইফেল-হাতে করমর্দন করে বললেন দেখুন, লিখুন, পৃথিবীকে জানান, কখনও আবেগে, কখনও বেদনায় কখনও ক্রোধে অরিক্ত হয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গেলেন সেই মুক্তিযােদ্ধা,।
২৩ মার্চ বড়খানার জন্য ডেকে ছিল ইপিআরের বাঙালী ফৌজী ভাইদের। জতা যেমন আগেই বিপদ বুঝে প্রস্তুতি নেবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন, তেমনি ইপিআর বাহিনীও একটা বিপদের আশংকা করেছিলেন। পিণ্ডির কর্তাদের একটা সিক্রেট কভার ওয়ারলেসে।
ইপিআর ধরে ফেলে। বােঝে পিণ্ডির পাকসৈন্যরা ওদের মেরে ফেলবে। তাই ২৩ মার্চ ইপিআর -এর বাঙালী সৈন্যদের নিরস্ত্র হয়ে খানাপিনায় আসতে হুকুম দেয় পাঞ্জাবী.বড় কর্তা। এরা জানায়, সবাই নিরস্ত্র না হলে আমরাও হবো না। ২৫ মার্চ আবার খানাপিনার ডাক, পড়ে, আর এদিকে, ইপিআর বাহিনীর বাঙালীদের অন্যত্র বদলীর আদেশ দিতে থাকে। পাকফৌজ আসতে থাকে বাইরে থেকে। পাঞ্জাৱী সৈন্যরা মেসিনগান মর্টার প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে নিজেদের এলাকাগুলি সজ্জিত করতে থাকে।…”

সূত্র: কালান্তর, ৮.৪,১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!