পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাংলা বিরােধী নয়
সাংবাদিক সম্মেলনে ‘শেখ মুজিবের’ পশ্চিম পাকিস্তান সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা
পাকিস্তানের শাসক গােষ্ঠী ও স্বার্থান্ধ মহল সমূহের ষড়যন্ত্রমূলক অভিযান সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণ পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের সহিত সম্পূর্ণ একাত্মতা অনুভব করেন। পাকিস্তানের স্থায়ীত্ব ও সমৃদ্ধির সংগ্রামে তাহারাও পূর্বের মতই ঐক্যবদ্ধভাবে আগাইয়া যাইতে উদগ্রীব।” গত ৩রা জুলাই আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান তাহার পশ্চিম পাকিস্তান সফরের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে সাংবাদিক সম্মেলনে উপরােক্ত মন্তব্য করেন। জনাব রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের গণ মানুষের দুর্গতির উল্লেখ করিয়া তাহার বিবৃতিতে বলেনপাকিস্তানের উভয় অংশের জনসাধারণই শাসক-শােষকদের কবলে একই রকমে নিগ্রহ ভােগ করিতেছে। তাহাদের অবস্থার তাই মূলগত পার্থক্য নাই। গুটিকতেক শােষকের হাতে ওখানকার তুলা চাষীদের শােষিত হওয়ার ব্যাপারকে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শােষিত পাট চাষীদের দুরবস্থার সঙ্গে তুলনা করেন।
মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগের প্রােগ্রামের মধ্যে কি পার্থক্য আছে। জিজ্ঞাসা করা হইলে জনাব রহমান বলেন, পাকিস্তান মুসলিম লীগের কোন প্রােগ্রাম আছে বলিয়া তিনি জানেন না, পক্ষান্তরে পূর্ব পাক আওয়ামী লীগের পার্টি মেনিফেস্টো রহিয়াছে এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে যথারীতি তাহার নির্বাচনী মেনিফেস্টোও বাহির হইবে। নিখিল পাকিস্তান জিন্না আওয়ামী মুসলিম লীগের কোন পার্টি মেনিফেস্টো নাই, এ কথা সত্য কি না জিজ্ঞাসা করা হইলে জনাব রহমান উত্তর দেন “অনেকটা তাই।” | জনাব রহমান প্রকাশ করেন যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানে যথেষ্ট ভুল ধারণার সৃষ্টি করা হইয়াছিল, কিন্তু সমস্ত খুলিয়া বলিবার পর সে ভ্রান্তি তাহাদের দূর হইয়াছে। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা আজ আর বাংলার দাবীকে অন্যায় মনে করে না। তাহাদের অধিকাংশই আজ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবীকে সমর্থন করেন। জিন্না আওয়ামী লীগের মামদোতের খান, মানকীর পীর প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ বাংলার দাবীর প্রতি কিরূপ মনােভাব পােষণ করেন তাহা জিজ্ঞাসা করা হইলে জনাব রহমান বলেন তাহা আমি বলিতে পারিনা।…
সূত্র: সাপ্তাহিক সৈনিক, ১৩ জুলাই ১৯৫২
ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব কতিপয় দলিল -ড. এম আবদুল আলীম