You dont have javascript enabled! Please enable it!

মহান ২১শে: আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অবদান
সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য১
কামরুজ্জামান

[মােহাম্মদ কামরুজ্জামান ভাষা আন্দোলনের সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।]
১৯৫০/১৯৫১ সালে কোনাে এক সময় [১৯৫২ সালের ৩১শে জানুয়ারি) । সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, এই কমিটির কার্যালয় ছিল ১৫০ নম্বর মােগলটুলী, মৌলভী বাজার, ঢাকা। প্রধানত তিনটি দল নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির কনভেনর ছিলেন কাজী গােলাম মাহবুব, তদানীন্তন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। সদস্য
—————–
১. লেখাটি ‘অমর একুশে/আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রকাশিত ভালােবাসি মাতৃভাষা গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
———————-
ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব মরহুম শামসুল হক, পূর্ব পাকিস্তানের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব অলি আহাদ। ছাত্রলীগের দায়িত্বে নিয়ােজিত সাধারণ সম্পাদক আমি এবং জনাব আবদুল মতিন তদানীন্তন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নূরুল আলম ছাত্রলীগের তদানীন্তন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বর্তমানে গণআজাদী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের পুত্র, এছাড়া তমদুন। মজলিসের একজন সদস্য ছিলেন প্রফেসর আবুল কাসেম। ১৯৫১ [১৯৫২] সালে এই কমিটি অত্যন্ত সক্রিয় ছিল এবং প্রায়ই এই কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হতাে।
বঙ্গবন্ধু তখন ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন। আমি মাঝে মাঝে গােপনে সাক্ষাৎ করতাম। তখন তিনি আন্দোলন সম্পর্কে গােপনে। নির্দেশ প্রদান করতেন। ১৯৫২ সালের প্রথম দিকে [১৫ই ফেব্রুয়ারি] বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ফরিদপুর সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম মহিউদ্দিন সাহেব। আমরা আগে সংবাদ পেয়ে ছাত্রলীগের কিছুসংখ্যক নেতা ও। কর্মী নারায়ণগঞ্জের স্টিমার ঘাটে উপস্থিত হই। তখন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ নেতা মরহুম ওসমান সাহেবসহ আরাে কিছুসংখ্যক। নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের মর্গান হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা মরহুম মমতাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ছিল। বঙ্গবন্ধু সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের নির্দেশ দেন ১৪৪ ধারা জারি। করলে তা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আইন পরিষদ ঘেরাও করতে। ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি তারিখে বিকেলে জনাব। শামসুল হকের সভাপতিত্বে [আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে] রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে তদানীন্তন মুসলিম লীগের সরকার আইন পরিষদের আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে। এই কমিটির বৈঠকে প্রধান আলােচ্যসূচি ছিল আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকার ঘােষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কিনা। এ বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ আলােচনা চলে এবং ভঙ্গ করার বিষয় নিয়ে দ্বিমত সৃষ্টি হয়। বৈঠকের। পর ঐ দিন রাতে ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে বহু ছাত্র জমায়েত হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সময় আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা জনাব গাজীউল হকও উপস্থিত ছিলেন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯-১০টার মধ্যে ছাত্ররা তদানীন্তন আর্টস বিল্ডিংয়ের সামনে সমবেত হতে আরম্ভ করেন। অতঃপর ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা মেডিকেল কলেজের দিকে এগুতে থাকে পাঁচজন পাঁচজন করে। এর মধ্যে আমাদের অনেককেই পুলিশ ট্রাকে তুলে নিয়ে টঙ্গি এবং অন্য জায়গায় নিয়ে ছেড়ে দেয়, প্রধানত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে। বর্তমানে যেখানে শহীদ মিনার। সেখানে ছাত্ররা সমবেত হয় এবং পরবর্তীকালে সকলে আইন পরিষদের দিকে যেতে থাকে। হঠাৎ কোনােরকম সতর্কতা ছাড়াই পুলিশ অতর্কিতে গুলি চালায় এবং বরকত, জব্বার, রফিকসহ আরাে কয়েকজন। শহীদ হন। এই খবর শুনে আইন পরিষদের ভিতর থেকে বের হন। তদানীন্তন আওয়ামী লীগ (মুসলিম লীগ] নেতা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, মরহুম আনােয়ারা খাতুন, খয়রাত হােসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। ছাত্রদের। কাছে এসে তারা একাত্মতা ঘােষণা করেন। গুলিবর্ষণের সংবাদ শুনে ছাত্রসহ সমস্ত ঢাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এমন কি যারা বাংলা ভাষা আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন না তারাও। ঐ দিন রাতে আমাদের সংগ্রাম পরিষদের ১০ জনের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়। এই সংবাদ ঘন ঘন রেডিওতে প্রচার করা হয়। পরদিনই এস এম হলে এই বর্বর ঘটনার বিবরণ মাইকযােগে প্রচার করা হয়। তখন কেবল দুই-একজন নেতা ভাষাসৈনিক ছিলেন না বরং সব ছাত্রই এস এম হলে ভাষাসৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে মাঝে ছাত্ররা দলবদ্ধভাবে লাঠির মাথায় শহীদদের রক্তাক্ত জামা কাপড় নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন। করতে থাকেন। এর কিছুদিন পরে মার্চ মাসে কোনাে এক সময়ে ঢাকা। বার লাইব্রেরি হলে তদানীন্তন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে এক সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি পুনঃগঠন করা হয় এবং এই কমিটির কনভেনর নিযুক্ত করা হয় জনাব আতাউর রহমান সাহেবকে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতৃবৃন্দ সদস্য হিসেবে এই কমিটিতে ছিলাম।

সূত্র: ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব কতিপয় দলিল -ড. এম আবদুল আলীম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!