বাংলার বাণী
ঢাকা : ১৪ এপ্রিল শনিবার, পহেলা বৈশাখ, ১৩৭৯
নববর্ষের যাত্রা শুভ হোক
আজ থেকে বাংলা নববর্ষ ১৩৮০ সনের যাত্রা হলো শুরু। মহাকালের গর্ভে একটি বছর বিলীন হয়ে গেল। সেই সঙ্গে পুরাতন বৎসরের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা পুরনো জীর্ণ পাতা খসে গেল এবং পুরনো বছরের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া স্মৃতি জাদুঘরে বন্দি হয়ে রইলো। বাংলা নববর্ষের প্রথম সূর্যোদয় কে আজ বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে পরমানন্দে বরণ করা হবে। নববর্ষের এই দিনটি বাঙালি ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আবহমান কাল ধরে বাঙালিরা নববর্ষের প্রথম দিন টিকে সাড়ম্বরে উদযাপন করে আসছে। আজ পহেলা বৈশাখে পুণ্য প্রভাতে সংগীতের সুর লহরী দিয়ে দিনটিকে তাৎপর্যমণ্ডিত করা হবে। নতুন আশা নতুন উদ্দীপনায় অনাগত দিনগুলো কে ভরিয়ে তোলার জন্য নেয়া হবে নবতর উদ্যম। বছরের অনাগত দিনগুলো যাতে সুখ-সমৃদ্ধি অশান্তিতে মধুর হয়ে ওঠে সেজন্যে প্রার্থনা করা হবে।
নতুন বছরের প্রথম দিনে যদি আমরা পুরনো বছরটির দিকে একবার ফিরে তাকাই তাহলে কি দেখতে পাবো? বিদায়ী বছরটিতে হয়তো আমাদের অনেক আশা পরিপূর্ণ হয়নি, হয়তো আমরা যা চেয়েছি তা পাইনি। জাতীয় জীবনে বিদায়ী বছরটি তে নানা ঘটনা ঘটে গেছে। হিসেব মেলাতে বসে আমরা হয়তো আসার চেয়ে নিরাশি হব বেশি। তবুও যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য একটি বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে এবং বিদায়ী বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে সামনে চলার অনুপ্রেরণা উদ্দীপিত হব। বাংলা নববর্ষকে জাতীয় জীবনে সার্থক করে তোলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যেতে হবে। শুধু ঘটা করে নববর্ষের দিনে সঙ্গীতানুষ্ঠান, মিষ্টিমুখ ইত্যাদির সমারোহের মধ্যেই নতুন বছরটি আমাদের জাতীয় জীবনকে সমৃদ্ধ করবে না। বাংলা নববর্ষের মহিমাকে সুদুরপ্রসারী করার জন্য এই নতুন দিনের নতুন প্রভাত এই কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। ব্যবসায়ী মহল বাংলাতে হালখাতা রাখার নজির স্থাপন করেছেন আবহমানকাল থেকেই। কিন্তু জীবনের সর্বস্তরে এখনো আমরা বাংলাভাষাকে প্রয়োগ করতে সক্ষম হইনি। জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য বাংলা নববর্ষ থেকেই সকলকে সচেতনতা অবলম্বন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
দিনপঞ্জি হিসেবে বছর আসে, বছর যায়। কিন্তু কোন বছরে আমরা কতটুকু সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি সেদিকেও প্রতিটি বাঙালিকে সদাজাগ্রত থাকা উচিত।
রুদ্র ভয়াল মূর্তি নিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে বৈশাখ এলো সূচনা হলো একটি নতুন বছরের। বৈশাখ যত রুদ্র, যত বিনাশের বার্তা নিয়ে আসুক না কেন, বৈশাখ কে আমরা স্বাগত জানাই। কামনা করি, নতুন বছরের প্রতিটি দিনে মানুষের কল্যাণ সাধিত হোক, জীবনের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নেমে আসুক। নববর্ষকে আবাহন করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন:-
বন্ধু হও শত্রু হও
যেখানে যে কেহ রও
ক্ষমা করো আজিকার মত
পুরাতন বরষের সাথে,
পুরাতন অপরাধ যত।
জীবন নিয়ে খেলা
গতকাল ঢাকার একটি জাতীয় সংবাদপত্রে ‘ইনজেকশনে ভেজাল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সংবাদটি নিশ্চয়ই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এরা মানুষ না নরপিশাচ? এই জিজ্ঞাসার পাঠকদের সামনে রেখে সংবাদে বলা হয়েছে জয়পুরহাটের একশ্রেণীর অর্থপিপাসু মানুষ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ভেজাল দিয়ে বিক্রি করছে ওষুধের গায়ে গ্লাক্সো কোম্পানির ছাপ রয়েছে। এই ছাপ বিশিষ্ট কেষ্ট্রাপেন ইনজেকশন তিনজন শিশুকে দেয়া হলে শিশুদের ইনজেকশন স্থানে বড় বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদে আরও বলা হয়েছে যে, উক্ত ওষুধের যিনি প্রেসক্রিপশনকারি ডাক্তার তিনি রাসায়নিক পরীক্ষার পর জানিয়েছেন ভেজাল ইনজেকশনের এ্যাম্পুলে শুধুমাত্র কাপড় ধোয়া সোডা ছাড়া আর কিছুই ছিলনা।
বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন ভেজাল দেয়া জিনিসপত্রের মহড়া লেগেছে। এ্যাম্পুল দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। বিদেশি জিনিস বলেও মনে হবে। অথচ এর সবই প্রায় ভেজাল কারখানা থেকে প্রস্তুত। ইতিপূর্বে সরকার এই সব ভেজাল দান কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কয়েকটি ভেজাল ওষুধ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবু অবস্থার যে হেরফের হয়নি তা উল্লেখিত সংবাদ এই বোঝা যায়। অন্যান্য জিনিসের ভেজাল দান আর ওষুধের ভেজাল দেওয়া এক পর্যায়ে পড়ে না। বিশেষ করে ভেজাল যখন জীবন রক্ষাকারী ওষুধে দেওয়া হয়। ভেজালকৃত ওষুধ অনেক সময় রাসায়নিক প্রক্রিয়াবশতঃ বিষক্রিয়ায় পরিণত হয়ে পড়ে।
উল্লেখিত এ সংবাদে আমরা লক্ষ্য করছি এ্যাম্পুল আদতেই ওষুধ নেই-সোডার পানি ভরে রাখা হয়েছে। এহেন মারাত্মক কাজের জন্য যারা দায়ী তাদের উদাহরণ মূলক শাস্তি হওয়া দরকার। সরকার দেশের বিভিন্ন জীবন ধারনকারী জিনিসপত্রের যারা ভেজাল দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করি। ওষুধপত্রের ভেজাল দানকারীদের বেলায় তা আরো কঠোর হওয়া উচিত।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক