You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২৭ এপ্রিল শুক্রবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৩৮০

শেরে বাংলা স্মরণে

আজ বাংলার কৃষক শ্রমিকের প্রাণপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের এগারতম স্মৃতি বার্ষিকী দিবস। এগার বছর আগে এই দিনটিতেই শেরেবাংলা গোটা জাতিকে সুখ সাগরে ভাসিয়ে ধরার ধুলা থেকে চিরবিদায় নিয়ে গেছেন বাংলা কৃষক শ্রমিকের নয়নমণি বাংলাদেশের চিরদরদী নেতা ফজলুল হককে কোনদিন এ জাতি ভুলতে পারবেনা। কোনোদিন জাতি ভুলতে পারেনা ঐতিহাসিক সাতাইশ এপ্রিলকে। আজ সেই ঐতিহাসিক দিন যেদিন বাঙ্গালীদের কান্না সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে শেরেবাংলা চিরবিদায় নিয়েছেন আমাদের মাঝ থেকে। শেরে বাংলা এ দেশের স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেরেবাংলা নেই কিন্তু তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের মানুষের অধিকাংশ কৃষক এবং শ্রমিক। শেরেবাংলা এই কৃষক-শ্রমিকের প্রাণপ্রিয় নেতা ছিলেন। বাংলা ও বাঙালিই ছিল তার স্বপ্নের বস্তু। এদের কল্যাণ চিন্তাই ছিল তার জীবনের সাধনা। ১৯৫৫ সালে তিনি চরণ দুঃসাহসিকতার সঙ্গে বলেছিলেন, “বাংলা সম্পর্কে আমরা যে শব্দটা হচ্ছে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা যেখানে বিদেশী শাসন-শোষণ থাকবেনা বাংলার মানুষই তাদের নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে।” আজ বাংলার মানুষ তার ভাগ্যনিয়ন্তা। আজ আর বিদেশি শোষণ নেই, ঔপনিবেশিক শাসন নেই শেরেবাংলা স্বপ্নই আজ বাস্তব রূপ লাভ করেছে তার যোগ্যতম আশীর্বাদপুষ্ট নেতা শেখ মুজিবের দ্বারা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ,কে, ফজলুল হক শুধুমাত্র একটি নাম নয়, এই নামটি বাঙালি জাতির অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলার বাঘ ফজলুল হক আজ নেই কিন্তু রয়েছে বাংলার জনমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির জন্য ফজলুল হকের যে অপার হৃদয় ছিল তার মুর্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর ভিতর। বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলা আর বাঙালির প্রতিমূর্তি তেমনি ফজলুল হক ছিলেন এদেশের কৃষক, মজুর, কুলির প্রাণপ্রিয় ধন। তাই স্মৃতিচারণের এই সাতাইশে এপ্রিলে যেমন মনে পড়ে শেরে বাংলার শতাব্দী সংগ্রামের ইতিহাস তেমনি স্মরণ করতে হয় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের কথা। ভারত বিভাগের পূর্ব থেকেই ফজলুল হক বাংলার স্বাধীন সার্বভৌম বিকাশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। মত ও পথের দিক দিয়ে তার নানা পার্থক্য থাকলেও তিনি ছিলেন একটি বিশেষ আদর্শের অনুসারী। লক্ষ্য ছিল তার অভিন্ন। সে আদর্শ বা লক্ষ্য বাংলাকে স্বাধীন-সার্বভৌম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। বাংলার কৃষক দের প্রিয় হক সাহেবের যোগ্যতা সম্পর্কে তার অতিবড় শত্রুর মনেও কোন সন্দেহ ছিলনা। তিনি একাধারে মুসলিম লীগ আর কংগ্রেসের নেতা, অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপক, পূর্ব বাংলার গভর্নর, মুখ্যমন্ত্রী, প্রজাসালিশি আইনের প্রবর্তক, বাঙালির শিক্ষা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও স্বাধিকার আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন। এটাই তার সকল পরিচয় নয়। ফজলুল হকের পরিচয় এর সংজ্ঞা নির্ণয় করা যায় না। শুধু বাংলার অবারিত মাঠ প্রান্তর, নদী সমুদ্র, মাটি আর মানুষ এবং দিগন্তের উদার বিস্তৃতির দিকে চেয়েছে হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম উদ্যোক্তা। তার সেই জাতীয়তাবাদী আদর্শকে অনুসরণ করেই বাংলা মানুষের জাগরন ঘটেছিল এবং তার প্রেক্ষিতে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ,কে, ফজলুল হকের রাজনীতিতে স্বার্থবিরোধিতা ছিল বৈসাদৃশ্যও ছিল। কিন্তু সর্বোপরি ছিল বাংলা ও দুঃখী বাঙালির জন্য সাগরের মত বিশাল হৃদয়। আজ তার এগারতম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ করতে এসে বারবার মনে পড়ছে তার শতাব্দীর সংগ্রামের নেতৃত্বদানের কথা, বাঙালি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার স্বপ্নের কথা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ আজ কৃষক ও শ্রমিকের রাজ কায়েম হতে চলেছে। যেদিন এদেশের কৃষক ও মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফুটে উঠবে সেই দিনই শেরেবাংলা স্বপ্ন সার্থক হবে। সেই কৃষক-শ্রমিকের বিমল হাসির মধ্য দিয়েই বারবার ভেসে উঠবেন শেরেবাংলা। আর তার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের ক্ষণে দেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার সংকল্পই হোক বাঙালি পবিত্রতম শপথ।

অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে ওদের বাঁচাবে কে?

সবাই জন্মান্ধ নয়, অপুষ্টি, কুচিকিৎসা এবং যত্নের অভাবে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ অন্ধত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতি ও পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত এই হতভাগ্যদের অভিশাপ মোচনের সকলকে আজ মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের চোখে দিতে হবে আলো, আর দশটি মানুষের মতো তাদেরও এ পৃথিবীর স্বাদ, গন্ধ, সৌন্দর্য ভোগ করবার অধিকার দিতে হবে। গত পরশু জাতীয় চক্ষু চিকিৎসকদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে শিল্প মন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকদের কাছে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে এ বিষয়টি নিয়ে তেমন করে ভেবে দেখা হয়নি। মানবিক সমস্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিকটি জনসাধারণ এমনকি চক্ষু চিকিৎসক এড়িয়ে গেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন সেই সম্মেলনে সভাপতির ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন যে, বর্তমানে দেশে দশ লক্ষ লোক অন্ধত্বে ভুগছে তখনই তা উদ্বেগের সৃষ্টি না করে পারবে না।
ব্যাপক পুষ্টিহীনতা আমাদের দেশে অন্ধত্বের মূল কারণ বলে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত পোষণ করেন। এই পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ তাই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ তথা এই খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া কুচিকিৎসা অথবা যত্নের অভাবে যারা দুনিয়ার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েন তাদের প্রাথমিক অবস্থায়ই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। চক্ষু চিকিৎসকদের এ ব্যাপারে একটা বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত। কয় বৎসর আগে জৈনিক বিদেশি চিকিৎসকের নেতৃত্বে আমাদের দেশেরই চিকিৎসকবৃন্দ বিভিন্ন মফস্বল এলাকায় চক্ষু অপারেশন চক্ষু রোগ নিরাময়ের একটা অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এতে বেশ ফলও পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামগঞ্জের হাজারো মানুষ যারা ইচ্ছে থাকা সত্বেও তাদের চোখ দেখানোর জন্য বড় বড় শহরে আসতে পারেনি তারা হাতের কাছে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা থাকায় সেই সুযোগ গ্রহণ করেছিল। এমন কোন অভিযান পরিচালনার সময় জনসাধারণের আর্থিক অবস্থার কথাটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। অর্থ বিত্ত অর্জনের দৈনন্দিন নিয়ম ডিঙিয়ে অন্তত কটা দিন চক্ষু চিকিৎসকরা গ্রাম বাংলার হাজারো হতভাগ্যদের নাগালের ভিতরে মানবিক সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!